বিশ্বব্যাংক ও এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) পরামর্শে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে (আরইবি) সেবা খাত থেকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তরের প্রতিবাদ জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একইসঙ্গে এ সময় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পিবিএস) মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ অবসানে ৫ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
বুধবার (৪ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, পিবিএস ও আরইবি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও অস্থিরতা এখন চরমে, যা সমাধানে সরকার ব্যর্থ বলেই মনে হচ্ছে। অপরদিকে সমস্যা সমাধান না করে বরং সমস্যার আগুনে ঘি ঢেলে এডিবি-বিশ্ব ব্যাংকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে দাতাগোষ্ঠী এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুতায়ন খাতকে বেসরকারিকরণের যে ছবক দেয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহি চৌধুরী। তার রেখে যাওয়া দায়ই হয়তো কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টাকে। এই পরিস্থিতির যখন সূত্রপাত হয়, তখন ক্যাবের তরফ থেকে একটা তদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ফার্স্ট পার্ট গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হলেও সেকেন্ড পার্ট দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত তদন্ত ক্যাব স্থগিত রাখে। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে ক্যাব প্রত্যাশিত সহযোগিতা পায়নি।
এসময় আরইবি ও পিবিএস’র মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ অবসানে ক্যাবের পক্ষ থেকে ৫ দফা সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো—
১. বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরিবিধি ভিন্ন হওয়ায় সমিতিগুলো কার্যত আরইবি'র অংশ নয়, বরং অধীন প্রতিষ্ঠান। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হন বিধায় বিরোধ ও সংঘাত সৃষ্টি হয়। এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের নিমিত্তে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩ এর ধারা ২(১০), ২৫ ও ২৬-এর আলোকে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নম্বর ৮২-৮৩/২০২১-এ প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য এক ও অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতিও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট চাকরিবিধি প্রণয়নের সুপারিশসহ সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে জাতীয়করণ করার প্রস্তাব করা হয়।
২. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিটি অভিযোগকেন্দ্রে ন্যূনতম একজন ভোক্তা প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভোক্তা প্রতিনিধির দায়িত্ব ও ক্ষমতা সুনির্দিষ্টহতে হবে এবং তা বিধি বা প্রবিধানে উল্লেখ থাকতে হবে।
৩. জাতীয়করণের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আপিল নম্বর ২২৭৬/২০২১-এ প্রদত্ত রায় বলবৎ থাকা অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে কোনও সিবিএ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে না বলে কমিটি মনে করে।
৪. বিদুতের মূল্যহার বৃদ্ধি পাবে এমন সব (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) পদক্ষেপ বিবেচনার পূর্বে বিইআরসির মাধ্যমে গণশুনানির ভিত্তিতে ভোক্তাপক্ষের মতামত গ্রহণ ব্যতীত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।
৫. বাংলদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এরধারা ৪০ মতে, আরইবি’র বিরুদ্ধে আনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভিযোগগুলো তথা আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। ক্যাব এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুররহমান রাজুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— ক্যাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য শওকত আলী খান প্রমুখ।