রাজধানীর জুরাইনে বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার হলো কোটিপতি ব্যবসায়ী কামাল ওরফে টিকটিকি কামাল। অঢেল অর্থ ব্যয় করে এবারো খুনের অভিযোগ থেকে পার পেতে চেয়েছিল এই কামাল। যার বিরুদ্ধে এর আগেও খুন, চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। দেড় থেকে দুই যুগ আগের সেই ভয়ঙ্কর টিকটিকি কামাল এখন সমাজের চোখে কোটিপতি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেলেও তার নৃশংসতার সর্বশেষ শিকার তার আপন ভাবী পাখি। তার কোটিপতি হওয়ার পেছনে রয়েছে নানা অপরাধের মিশ্রণ।

টিকটিকি কামাল তার বাবার রেখে যাওয়া দু’টি ছয়তলা বাড়ি, কলকারখানাসহ অঢেল সম্পত্তি একাই ভোগ দখল করে আসছিল। এ সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে খুনের ঘটনা। ১২ জুলাই মঙ্গলবার রাত ১১টার সময় পাখির দুই সন্তান সাজ্জাদ ও সাব্বির লিজার্ড কয়েল ফ্যাক্টরির অফিসে গেলে কামাল হোসেন, আলতাফ হোসেন, স্বপন, ভুলু, রিপনসহ অজ্ঞাতনামা আরো চার-পাঁচজন তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে আহত করে। এ সময় পাখি আক্তার আঁখি নিজ সন্তানদের বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে আহত করে। পরে পাখি আক্তার আখি, সাজ্জাদ ও সাব্বিরকে ওই দিন রাতে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক পাখিকে শ্যামলী হেলথ কেয়ার হাসপাতালে পাঠায়। পাঁচ দিন চিকিৎসার পর ১৬ জুলাই শনিবার রাতে পাখি আক্তার মারা যায়।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মনির হোসেন বাদি হয়ে কামাল হোসেন, আলতাফ হোসেন এবং স্বপন, ভুলু, রিপনসহ অজ্ঞাতনামা আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে ১৩ জুলাই কদমতলী থানায় মামলা করেন। মামলার পাঁচ দিন পর শনিবার ২ নং আসামি আলতাফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল কামালকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে থানা পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, টিকটিকি কামাল অনেক আগে থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এর আগেও তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে। তাতে সাজাও হয়েছে। কিন্তু পার পেয়ে গেছে প্রতিবারই। জুরাইন কমিশনার রোড বা খোরশেদ আলী সরদার রোডের হাজী খোরশেদ আলীর নাতি সাজুর মাধ্যমে আন্ডার ওয়ার্ল্ডে সন্ত্রাসের হাতেখড়ি কামাল ওরফে টিকটিকি কামালের। সাজুর হাত ধরেই সম্পর্ক হয় ঢাকার একসময়ের ভয়ঙ্কর খুনি ডাকাত শহীদের সহযোগী কেরানীগঞ্জের রিপন ওরফে টাক্কু রিপনের সহযোগী কিলার সাগর এবং মাসুদ ওরফে দাউত্তা মাসুদ, সাইফুল, আমির ওরফে কালা আমীর ও স্থানীয় ভয়ঙ্কর খুনি সানাউল্লাহ ও সুজিত দাস টুনু বাহিনীর সাথে। একপর্যায়ে মহল্লার কর্তৃত্ব, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জের ধরে ডাকাত শহীদের অপর সহযোগী ইতালি ফেরত কবির ওরফে ইতালি কবিরের সহযোগী ইকবাল ওরফে দাদা ইকবালের সাথে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার লেনদেনের জেরে খুন হয় টিকটিকি কামালের গুরু সাজু। সাজু হত্যার পর তার সংরক্ষিত অস্ত্র কামালের হাতে থাকায় কামাল নিজেই ডাকাত শহীদ, সানাউল্লাহ, টাক্কু রিপন বাহিনীর ভয়ঙ্কর খুনিদের নিয়ে নিজেই ওই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সে তার বাহিনীর সদস্যরা ইতালি কবিরের অন্যতম সহযোগী মেডিক্যাল রোডের কবির ওরফে ছোট কবিরকে প্রকাশ্য দিবালোকে মুরাদপুর মাদরাসা রোডের শ্যামবাবু গ্যারেজে হত্যা করে। সাজু হত্যার আসামি ইকবাল ওরফে দাদা ইকবালের সহযোগী মহীউদ্দীন গুম হয়। পাশাপাশি কামালে সহযোগী কবির ওরফে ছোট কবির হত্যার জেরে র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় মাসুদ ওরফে দাউত্তা মাসুদ। গুম হয় তার অন্যতম সহযোগী কেরানীগঞ্জের সাইফুল ও মেডিক্যাল রোডের শুক্কুর মহাজনের ছেলে জাকির। ছোট কবির হত্যা মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে বাবার মৃত্যুর পর টিকটিকি কামাল তার বাবার রেখে যাওয়া অঢেল সম্পদ নিজেই দখল করে নেয়। তার অপর তিন ভাইকে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে। পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগের সাবেক কয়েক নেতার সাথে তার গভীর সখ্য রয়েছে বলে জানা যায়। তারা এ কামালকে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই পুলিশ কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপরাধ চালাচ্ছিল কামাল।

এ দিকে কামালকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কদমতলী থানার ওসি রাতে বলেছেন, কামালকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews