প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই পরিবর্তনগুলো কেবল সুবিধা দিচ্ছে, না কি মানবতার মৌলিক প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে? এমনই এক চিন্তা থেকে শুরু হয়েছে নতুন পথচলা, যেখানে এআই ও দর্শনের মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক উদ্যোক্তা ও আইন-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অপূর্ব গুপ্ত তার পূর্বের স্টার্টআপ TextIQ বিক্রির পর প্রশ্ন করেছিলেন—"আমি কি সত্যিকারের ভালো কিছু করতে পারছি?" এই প্রশ্নই তাঁকে নিয়ে যায় গ্রিক দার্শনিক এরিস্টোটলের ‘Nicomachean Ethics’ এর দিকে, যেখানে আলোচিত হয়েছে "eudaimonia"—অর্থাৎ মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণ ও সম্ভাবনা পূরণের দর্শন।
TextIQ বিক্রির পর নতুন উদ্যোগে নামেন অপূর্ব। তার নতুন কোম্পানি Eudia চায় প্রযুক্তিকে শুধু সহায়ক নয়, একধরনের "augmented intelligence" হিসেবে কাজে লাগাতে—যা মানুষের চিন্তাশক্তিকে আরও বড় প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
"আমরা এখন যে আইনি ব্যবস্থায় বাস করি, তা অনেকটাই ব্যয়বহুল ও অকার্যকর। আজ একটি আইনি সমস্যা একজন সাধারণ মানুষকে দেউলিয়া করে দিতে পারে," বলেন অপূর্ব। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ যারা আইনজীবীর প্রয়োজন পড়ে, তারা তা নিতে পারেন না। কারণ? উচ্চ খরচ ও অদক্ষতা।
Eudia চায় প্রতিটি কোম্পানির ভেতরে তৈরি হোক এক "আইনি মস্তিষ্ক", যা কেবল সেবা গ্রহণ নয়—দক্ষতা, জ্ঞান ও সিদ্ধান্তক্ষমতা প্রতিষ্ঠানেই রেখে দেয়। এটি শুধু খরচ কমানোর জন্য নয়, বরং জ্ঞানভিত্তিক মূল্য সৃষ্টি করার জন্য।
আইনি খাতে এখনো ৯৫ শতাংশ বাজেট যায় ম্যানুয়াল লেবার বা সার্ভিসে, মাত্র ৫ শতাংশ যায় সফটওয়্যারে। অপূর্বর ভাষায়, “যদি একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একজন আইনজীবী ১০ জনের কাজ করতে পারেন, তাহলে সেই পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।”
তথ্য সুরক্ষা, আইপি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি), হ্যালুসিনেশন (ভুল তথ্য দেওয়া)—এই ভয়গুলো এখনো রয়ে গেছে। তবে AI ব্যবহারে যদি সঠিক দিক নির্দেশনা ও নিরাপদ অবকাঠামো তৈরি করা যায়, তাহলে আইনি পেশায় এই বিপ্লব সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
Eudia-র বিশেষত্ব হলো, এটি শুধুই প্রযুক্তিগত স্টার্টআপ নয়—এটি এক ধরণের দর্শনচর্চাও। প্রতিটি প্রযুক্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা নিজেরাই প্রশ্ন তোলে—"মানবতার কল্যাণ হচ্ছে কি না?", "আমরা সত্যিই বড় চিন্তা করছি তো?"
এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে প্রথাগত সিলিকন ভ্যালি ধারার বাইরে এনে দাঁড় করিয়েছে। “আমরা শুধু সমস্যা সমাধানে নয়, মানুষকে তার সম্ভাবনায় পৌঁছে দিতে চাই,” বলেন অপূর্ব।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে, শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়—চাহিদা রয়েছে মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির। AI দিয়ে যদি আইনি সেবা সহজ, সাশ্রয়ী ও সর্বজনীন করা যায়, তবে সেটাই হবে এক সত্যিকারের ‘উন্নয়ন’।
আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে Eudia—প্রযুক্তির পথে দর্শনের আলোয়।