সদ্য প্রয়াত এই ইতিহাসকারের বুদ্ধিবৃত্তির ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে বিভূতিভূষণের কথাটিই মনে পড়ল সবার আগে। বিভূতিভূষণের মতোই রণজিৎ পথ খুঁড়েছিলেন ভিন্ন এক পটভূমিতে; যেখানে দেশ, কাল, জনতা, অঞ্চল ও প্রকৃতির মিলনমোহনায় দাঁড়িয়ে থাকেন একজন ঐতিহাসিক। তিনি গড়ে তোলেন না তথ্যের স্তূপ; পুঞ্জীভূত তথ্যের অহমিকায় ইতিহাসকে করে তোলেন না কণ্টকিত। বরং তিনি উপহার দেন ইতিহাসের অনাঘ্রাত এক কুসুম।
রণজিৎ গুহ আমাদের জন্য হাজির করেছিলেন নতুন সৌরভ, যার কুঁড়ি গড়ে উঠছিল তরুণ বয়সে। তখন তিনি মার্ক্সবাদী, কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। দ্বান্দ্বিক দৃষ্টির কারণে বিনা প্রশ্নে মেনে নিতেন না পার্টির প্রত্যাদেশ। রাশিয়া যখন হাঙ্গেরিতে আগ্রাসী আক্রমণ চালাল, সে সময় কমিউনিস্ট পার্টি ছেড়ে তিনি প্রবেশ করেছেন বিদ্যায়তনের সুস্থির গবেষণায়। রণজিতের মনে হয়েছিল, ভারতীয় উপমহাদেশের যে ইতিহাস লেখা হয়েছে, তা মূলত ওপর থেকে লেখা ইতিহাস। দেখা ও লেখার প্রেক্ষণবিন্দুটির মর্মে আছে উচ্চবর্গের ক্ষমতা। যাঁরা এই ভাবাদর্শের অধীন, তাঁরা লেখেন উচ্চবর্গের জয়গাথা, ‘রাজরাজড়ার বিজয়কাহিনি’ অথবা ‘রাজনৈতিক উত্থান–পতনের কাহিনি’।