আওয়ামী সুবিধাভোগী পাঁচ সচিবকে দ্রুত অপসারণসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। আগামী ২০ তারিখ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত উপদেস্টা কমিটির সভায় ৫ সচিবকে প্রত্যাহারের বিষয়টি চুড়ান্ত হবে। তবে অর্থ উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব তাদের দাবিতে একমত পোষণ করেছেন। তাদের আশ্বাস দেয়ার পরে এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কার্যকারী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক।
অপরদিকে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রম স্থগিতের প্রজ্ঞাপন’কে যথাযথ সিদ্ধান্ত স্বাগত জানান এবং প্রশাসনের ভেতরে অবস্থানরত ‘ফ্যাসিস্ট দোসরদের’ অপসারণ ও ছয় দফা দাবিসহ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। একই সাথে আগামী সপ্তাহে সচিবালয় চত্বরে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বঞ্চিত সংগঠনের কার্যকারী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক পাঁচ সচিবকে দ্রুত অপসারণসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান। সাবেক সচিব বলেন, প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এ সরকারের আমলে যে সমস্ত কর্মকর্তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তাদের চুক্তি বাতিল করতে হবে। প্রশাসনে ফ্যাসিবাদীদের যে-সব দোসররা রয়েছে তাদের অপসারণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে জানান খালেক।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীদের দোসররা এখনো প্রশাসনে আছে। বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব আমাদের হেয় করেছেন। তাদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এর আগে আওয়ামী সুবিধাভোগী পাঁচ সচিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির তৃতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তারা হলেন, পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, কৃষি সচিব মো.এমদাদ উল্লাহ মিয়া, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মফিদুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) জাহেদা পারভীন। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করাসহ পর্যায়ক্রমে তাদের অফিস ঘেরাও করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে বলে জানান সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক। অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সদস্য সচিব ও সাবেক সচিব কাজী মেরাজ হোসেন, সাবেক সচিব আব্দুল বারীসহ প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকারী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদেœানতি দেয়াসহ আওয়ামী সুবিধাভোগী পাঁচ সচিবকে দ্রুত অপসারণসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। পরে অর্থ উপদেষ্টার এবং জনপ্রশাসন সচিব আশ্বাস দিয়ে বলেছেন আগামী ২০ তারিখ জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ৫ সচিবের অপসাণের বিষয় সিদ্ধান্ত হবে। এবং চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে জনপ্রশাসন সচিব আশ্বাস দিয়েছেন। এটা দেখার পরে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ সকালে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম ও মহাসচিব মো. মোজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করে। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে, পদোন্নতি: সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ ৪০০ প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) হিসেবে সুপার নিউমারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। পদনাম পরিবর্তন: প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদবী ‘উপসহকারী সচিব,তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ‘অতিরিক্ত উপসহকারী সচিব’ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ‘সাচিবিক সহকারী’ করার প্রস্তাব। নিয়োগবিধি কমিটি বাতিল: নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গঠিত অভিন্ন নিয়োগবিধি কমিটি বাতিলের দাবি। রেশন ও ভাতা: সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রেশন সুবিধা, সচিবালয় ভাতা ও ৩০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা চালুর দাবি। স্মারকলিপি প্রদানের সময় নেতৃবৃন্দ ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ’ নামে ভুয়া একটি সংগঠনের নামে আবুল কালাম আজাদ (বাদিউল) স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা একে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন।
নেতারা ‘বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’-এর চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং বলেন, এবিএম আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে পরিচালিত কর্মসূচিগুলো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একইসঙ্গে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রম স্থগিতের প্রজ্ঞাপন’কে যথাযথ সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দেন এবং প্রশাসনের ভেতরে অবস্থানরত ফ্যাসিস্ট দোসরদের অপসারণের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, একটি কুচক্রী মহল সচিবালয় ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এ সময় দাবি-বিরোধী কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী’ আখ্যায়িত করে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সময়মতো তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। দাবি বাস্তবায়নে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে আগামী সপ্তাহে সচিবালয় চত্বরে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।