টেস্টোস্টেরন, যা প্রধান পুরুষ যৌন হরমোন হিসেবে পরিচিত, তা পেশিশক্তি, অস্থির দৃঢ়তা ও সামগ্রিক প্রাণশক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়, তবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে তা প্রাকৃতিকভাবেই বাড়ানো সম্ভব। নিচে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির ৯টি প্রাকৃতিক উপায় তুলে ধরা হলো:
টেস্টোস্টেরন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পুরুষদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে টেস্টোস্টেরন অপরিহার্য। এই হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া, ক্লান্তিভাব, পেশিশক্তি হ্রাস ও মনমেজাজের পরিবর্তনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই টেস্টোস্টেরনের স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
বিশেষ করে রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং (ওজন তোলা) ও হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (HIIT) টেস্টোস্টেরন বাড়াতে কার্যকর। নিয়মিত ব্যায়ামে পেশি বাড়ে, আর তা টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সহায়তা করে।
উপকারিতা:
পেশিশক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায়
বিপাকক্রিয়া উন্নত করে
২. সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
সম্পূর্ণ ও পুষ্টিকর খাবারে পরিপূর্ণ একটি সুষম খাদ্য শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। দুধ, ডিম, চর্বিহীন মাংস, শাকসবজি, বাদাম ও বীজে থাকা জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন ডি টেস্টোস্টেরনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
উপকারিতা:
হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে
শরীর ও মানসিক শক্তি বাড়ায়
৩. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
রাতের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম টেস্টোস্টেরন সঠিকভাবে উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব সরাসরি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
উপকারিতা:
শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
৪. মানসিক চাপ কমান
দীর্ঘস্থায়ী চাপ কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ধ্যান, যোগব্যায়াম ও শ্বাসনিয়ন্ত্রণ চর্চা চাপ কমাতে সাহায্য করে।
উপকারিতা:
কর্টিসলের মাত্রা কমায়
মানসিক স্বচ্ছতা ও স্থিতি আনে
৫. অতিরিক্ত ওজন কমান
স্থূলতা ওজন ও হরমোন ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমালে টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিকভাবে বাড়ে।
উপকারিতা:
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে
যৌন সক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধি পায়
৬. মদ্যপান সীমিত করুন
অতিরিক্ত মদ্যপান লিভার ও হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয়, ফলে টেস্টোস্টেরন কমে যায়। মাঝেমধ্যে সীমিত পরিমাণে পান করাই নিরাপদ।
উপকারিতা:
লিভারের সুস্থতা বজায় রাখে
ঘুম ও শারীরিক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে
৭. পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন
ভিটামিন ডি টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনে সহায়তা করে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-র প্রাকৃতিক উৎস, তবে প্রয়োজনে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
উপকারিতা:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে
হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
৮. স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসহ স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরে হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো, তেলযুক্ত মাছ ও অলিভ অয়েল খেতে পারেন।
উপকারিতা:
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও প্রদাহ রোধ করে
হরমোন স্বাস্থ্য বজায় রাখে
৯. হরমোন ব্যাহতকারী রাসায়নিক থেকে দূরে থাকুন
প্লাস্টিক, কীটনাশক ও কিছু প্রসাধন সামগ্রীতে থাকা রাসায়নিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। প্রাকৃতিক ও অর্গানিক পণ্য ব্যবহার করা শ্রেয়।
উপকারিতা:
হরমোনঘটিত রোগের ঝুঁকি কমায়
স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন গড়ে তোলে
শেষ কথা:
টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিকভাবে বাড়ানো সম্ভব—শুধুমাত্র কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাওয়া, ভালো ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মতো অভ্যাস আপনার শরীর ও মনকে রাখবে আরও সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম।
সূত্র: https://doctor.ndtv.com/mens-health/mens-health-9-natural-ways-to-increase-testosterone-7430144