আধুনিকতা আর প্রযুক্তির হাত ধরে মানুষের চিন্তাভাবনায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবে সমাজের কিছু পুরোনো অভিশাপ আমাদের পিছু ছাড়ছে না। তার মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হচ্ছে যৌতুক প্রথা, যা এখনও শত শত নারীর জীবনে প্রতিদিনই দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও নির্যাতন বয়ে আনছে।  যৌতুকের উৎস ইতিহাসে পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করা না গেলেও এটি যে একটি সামাজিক ব্যাধি, তা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে যৌতুকের কারণে ২৩৬ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯৫ জন। ২০২১ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার নারীর সংখ্যা মোট নির্যাতিত নারীর প্রায় ৮৩ শতাংশ। এ প্রথা শুধু দরিদ্র পরিবারেই সীমাবদ্ধ নয়; মধ্যবিত্ত, নি¤œ-মধ্যবিত্ত, এমনকি উচ্চবিত্ত পরিবারেও এর তীব্রতা সমান।

একটি বিয়ের আগে এবং পরেও যৌতুক নিয়ে তিক্ততা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা বারবার শোনা যায়। আমাদের সমাজে মেয়েদের পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ তৈরি করে, মেয়েদের অবমূল্যায়ন ঘটায়। এটি শুধু নারীর অধিকারের ওপর আঘাতই নয়, সামাজিক ন্যায়বিচারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও যৌতুককে অন্যায় বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে যৌতুককে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং একে নারীর মর্যাদার পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "সব জুলুম হারাম।" অর্থাৎ, যৌতুক একপ্রকার জুলুম বা অন্যায়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সমাজে ধর্মীয় নেতাদের যৌতুকবিরোধী প্রচারণায় যুক্ত করার মাধ্যমে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।

যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার যৌতুক প্রথাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে, যদি কেউ বিবাহের সময়, আগে বা পরে কোনো অর্থ, সম্পদ, বা অন্য কিছু দাবি করে, সেটি যৌতুক হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদÐ এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আইন থাকা সত্তে¡ও, এর যথাযথ প্রয়োগের অভাবে যৌতুকের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারেনি।

এখন সময় এসেছে, এই সামাজিক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে একসাথে এগিয়ে আসার। যৌতুক প্রথা বন্ধ করতে শুধু আইন নয়; প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। পরিবারে শিক্ষার মাধ্যমে, মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌতুকবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে, এবং মিডিয়া ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে যৌতুকবিরোধী একটি পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে সচেতন করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে যৌতুক প্রথা থেকে মুক্ত রাখা যেতে পারে। আমরা যদি একসাথে প্রতিজ্ঞা করি যে যৌতুক গ্রহণ বা প্রদানের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে, তবে অদূর ভবিষ্যতে যৌতুক প্রথামুক্ত একটি সমাজ নির্মাণ সম্ভব। একটি উন্নত সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে যৌতুক নামক অভিশাপের বিরুদ্ধে প্রতিটি নাগরিকের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া আবশ্যক।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews