আগামীকাল শুক্রবার (৬ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের ছুটি শুরু হতেই নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষজন। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে শুরু করে কমলাপুর রেলস্টেশনসহ রাজধানীর প্রত্যেকটা বাসস্ট্যান্ডে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে ভিড়। ফলে বাড়ি ফিরতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। তবে এই ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বাস মালিক- শ্রমিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চিত্র দেখা যায়।
যাত্রীরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘টিকিট প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাস মালিকরা। অতিরিক্ত টাকা না দিলে মিলছে না টিকিট। টিকিট না পেয়ে অনেককে মিনি ট্রাকে করেও বাড়ি যেতে দেখা যায়। আবার কেউবা বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটে বাড়ি ফিরছেন।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাওসিফ মাইমুন নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘ঈদ উপলক্ষে টিকিট প্রতি ১৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে লক্ষ্মীপুরগামী বাস ইকনো পরিবহন। গত রোজার ঈদেও একই কাজ করেছিল। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অনলাইনে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এবার আর জানাতে ইচ্ছা হয়নি। কারণ এর কোনও সমাধান হবে না, সবাই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি।’
সায়দাবাদে নোয়াখালীগামি সবুজ আলম ফিরোজ নামের এক যাত্রী বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, ‘নোয়াখালীর টিকিট স্বাভাবিকভাবে ৪০০ টাকা নেয়। এখন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। যার কাছ থেকে যেমন পারছে সেভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। টিকিটের জন্য গেলে বলে এখন টিকিট নাই, অপেক্ষা করেন। অথচ বাড়তি ভাড়া দিলে ঠিক সঙ্গে সঙ্গে টিকিট পাওয়া যায়।’
নোয়াখালীগামী তানভীর আহমেদ নামের আরেকযাত্রী বলেন, ‘ঈদ এলেই টিকিটের দাম বেড়ে যায়। যাত্রীদের জিম্মি করে বাস মালিকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। অথচ এ বিষয়ে নির্বিকার পুলিশ প্রশাসন। অভিযোগ জানানোর পরও প্রতিকার মেলে না। যেকোনও উপায়ে আমাদের বাড়ি ফিরতে হয়, তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়।’
এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করছেন বাস কাউন্টারের কর্মীরা। মাগুরাগামী যাত্রী শরিফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, ‘মাগুরার স্বাভাবিক ভাড়া ৫১০ টাকা। কিন্তু এখন সবার কাছ থেকে ৯৬০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বেশি টাকা কেন নিচ্ছে, এমন প্রশ্নও করা যায় না। উল্টো যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বাস শ্রমিকরা। এমনকি ধমক দিয়েও বলে টিকিট নিলে নেন, নয়তো অন্য পথ খুঁজে বের করেন।’
রফিকুল আমিন নামের একজন ভুক্তভোগী বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, ‘সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে সেনাবাহিনীর অভিযান চালানো খুবই দরকার। আমাকে ৫৫০ টাকার টিকিট ৮৬০ টাকায় কাটতে হয়েছে। আবার অনলাইনে দেখলাম ফেরার টিকিট শাকুরায় আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত সব বুক। এটা রহস্যজনক। নিশ্চয়ই ঘাপলা আছে। আসার সময় আমাদের মতো চাকরিজীবী যাত্রীদের জিম্মি করে বড় দান মারার ধান্ধা মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।’
মহাখালী বাস টার্মিনালে শাওন বিশ্বাস নামের একজন যাত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০০-৩২০ টাকা। কিন্তু এখন এখানকার কাউন্টার গুলো সিন্ডিকেট করে ১ হাজার টাকা দাবি করতেছে। ৯০০-১০০০ হাজার টাকার কমে কোনও টিকিট নাই।’
এই যাত্রী আরও বলেন, ‘যখন বেশি বাড়ার বিষয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করতে লাগলো তখন যাত্রীদেরই বাস শ্রমিকরা মারধর করতে শুরু করলো। যাত্রীদের মারধর এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সংবাদ করতে এলে একজন সাংবাদিককেও মারধর করে এখানকার বাস শ্রমিকরা।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ন্যায্য বাস ভাড়া নিশ্চিতে মহাখালী বাস টার্মিনাল, কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড, ফুলবাড়িয়া-গুলিস্থান বাস স্ট্যান্ড, গাবতলী বাস কাউন্টারসহ রাজধানীর সব জায়গাতেই ভোক্তা অধিদফতরের তদারকি চলছে। যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এছাড়াও কোথাও যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়, তাহলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের হটলাইনে (১৬১২১) কল দিয়ে অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।