চট্টগ্রাম: নতুন ইঞ্জিন আমদানি হলেও রেলওয়েতে যেন ইঞ্জিন সংকট কাটছে না। কারণ যে নতুন ইঞ্জিনগুলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমদানি করেছে সেগুলো বর্তমান রুটে চলাচলের জন্য উপযোগী নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ইঞ্জিন আমদানি করার আগে রেলপথের কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইঞ্চিন কিনে আনা হয়। কিন্তু ইঞ্জিনগুলো এ রুটে চলাচলের উপযোগী নয়। এটি রেলওয়ের অদূরদর্শিতা। এছাড়াও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভের উপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে রেলওয়েকে। এতে রেলওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি রেলপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমছে ট্রেনের গতি।

বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট লোকোমোটিভের সংখ্যা ১৫৯টি। যার মধ্যে ১০২টি সচল রয়েছে। মেরামতাধীন ও অচল অবস্থায় রয়েছে ৫৭টি। এরমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ। দৈনিক ১১৬টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে পূর্বাঞ্চলে। নিয়মিত দৈনিক ৯০-৯৫টি ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এরমধ্যে ৬৫টি যাত্রীবাহী, মালবাহী ১৬টি, শান্টিং ১৬টি, রেলওয়ের পাথর আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ২টি, কোন স্থানে একটি ইঞ্জিন নষ্ট হলে দ্রুত সেখানে অন্য ইঞ্জিন যাওয়ার জন্য রয়েছে ৩টি। বাকি যে ইঞ্জিনগুলো রয়েছে সেগুলো মেরামতাধীন।  

প্রায় ৫০ থেকে ৭০ বছরের পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করায় প্রায় সময় ঘটছে সময় বিপর্যয়, নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারছে না ট্রেন, পথে পথে ইঞ্জিন বিকলের মতো ঘটনা ঘটছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৫০ শতাংশ ইঞ্জিনের মেয়াদ চলে গেছে। একটি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। রেলওয়েতে প্রতি দুই থেকে তিন বছর পর পর নতুন ইঞ্জিন আমদানি করার কথা থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই।  

২০২১ সালের ৪ অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ৩০টি ইঞ্জিন রেলওয়ে পরিবহন ও মেকানিক্যাল বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সর্বশেষ ইঞ্জিনটি আসে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর। তবে নতুন ইঞ্জিনগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছে রেলওয়ে। যাত্রী পরিবহনে নতুন ইঞ্জিন ব্যবহার হচ্ছে ১১টি ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ১০টি। বাকি ৯টি ইঞ্জিন জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে।  

নতুন এ ৩০টি ইঞ্জিন কিনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এসব ইঞ্জিন মাত্র দুটি রুটে চালানো যাচ্ছে। বাকি রুটে চালোনা সম্ভব হচ্ছে না। ইঞ্জিন সংকট থাকার পরেও নতুন ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করতে পারছে না রেলওয়ে।  

রেলওয়েতে পুরাতন ইঞ্জিনগুলোর বেশিরভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ। প্রায় সময় মাঝপথে বিকল হচ্ছে এ ইঞ্জিনগুলো। পুরাতন ইঞ্জিনগুলোর তুলনায় নতুন ইঞ্জিনগুলো বড় ও ভারি। যার কারণে সেতু ও রেললাইনে চালানো যাচ্ছে না।  

দেশের প্রধান ১০টি রেলরুটের মধ্যে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-রাজশাহী পর্যন্ত নতুন ইঞ্জিন ব্যবহার করা যাচ্ছে। বাকি ছয়টি রুট অর্থাৎ চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ, ঢাকা-নোয়াখালী, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ট্রেনগুলোতে নতুন আমদানি হওয়া এসব ইঞ্জিন ব্যবহার করতে পারছে না রেলওয়ে।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি রেলবহরে যুক্ত হয় ১০টি নতুন লোকোমোটিভ (রেল ইঞ্জিন)। রেলওয়ের ক্রয় কমিটি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে এসব ইঞ্জিনে দুর্বলতা ও ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগ তোয়াক্কা না করেই রেলবহরে যুক্ত হয় এসব ইঞ্জিন। ওয়ারেন্ট্রি পিরিয়ড শেষ না হতেই সেসব ইঞ্জিনে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ১০টির মধ্যে তিনটি ইঞ্জিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে রেলওয়ে পাহাড়তলী লোকোসেডে ও পাহাড়তলী ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মিটারগেজ ১০টি করে দুই চালানে মোট ২০টি লোকোমোটিভ(রেল ইঞ্জিন) আসে। দীর্ঘ ১ বছর লাইনে দেওয়া হয়নি ইঞ্জিনগুলো। পরে যখন ইঞ্জিনগুলো লাইনে দেওয়ার ট্রায়াল চলে সেখানে দেখা যায়, ৩টি ইঞ্জিন অকেজো রয়েছে। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বলছিলেন, ১০ বছরে হাতও দিতে হবে না। অথচ ১ বছরের মধ্যে দেখা দিয়েছে সমস্যা।  ইঞ্জিনগুলো ৩০১৮, ৩০১২, ৩০০৮ নাম্বারের।  

চুক্তি অনুযায়ী সঠিক ইঞ্জিন সরবরাহ করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দুই হাজার ২০০ অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন এই ইঞ্জিন ১০টি চালাতে প্রতিটির জন্য ৩ হাজার ২০০ কেভিএ (কিলো ভোল্ট এম্পিয়ার) ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর ক্রয়ের চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ হাজার ২০০ কেভিএ-এর দামেই কেনা হয়েছে ২ হাজার ২০০ কেভিএ জেনারেটর, যা দিয়ে লোকোমোটিভের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন ইঞ্জিনগুলোর অশ্বক্ষমতা ২২শ কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।  

২০১৮ সালে ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ সরবরাহে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা ব্যয়ে এসব ইঞ্জিন কেনা হয়। একই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০টি ডিজেল ইলেকট্রনিক রেল ইঞ্জিনও কিনেছে সরকার। এতে ব্যয় হয়েছে ৮৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। জি-টু-জি পদ্ধতিতে কেনা এসব ইঞ্জিন রেলের বহরে যুক্ত হয় ২০২১ সেপ্টেম্বর থেকে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ইঞ্জিনগুলো বর্তমান রুটে চলাচলের উপযোগী নয়। রেলরুটে কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে এ রুটগুলোতে নতুন ইঞ্জিনগুলো চলতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২

বিই/টিসি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews