৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থান এবং যাকে এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে তা এমনিতে আসেনি। শিশু-কিশোর, ছাত্র-জনতা, শ্রমিক-পেশাজীবীদের রক্তে পিচঢালা রাজপথ রঞ্জিত করে এসেছে আমাদের এ বিজয়।

১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিলেন ভিনদেশী বাহিনীর হাতে। আর এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে দেশীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জীবন দিয়েছেন দেশের জনগণ। তবে সেনাবাহিনীর বলিষ্ঠ সময়োচিত হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় লাখো নাগরিকের প্রাণ। তা না হলে রক্তপিপাসু স্বৈরাচারী শাসকের ক্ষমতা লিপ্সার অভিলাষ পূরণে কত মানুষের যে প্রাণ ঝরত তা কল্পনাও করা যায় না!

পয়লা জুলাই শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম ধাপে বুঝাও যায়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে কী হতে পারে! ১৫ জুলাই থেকে সরকারের আন্দোলন বিরোধী অবস্থান ভয়ঙ্কর মারমুখী হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ মিলে পূর্ণ শক্তিতে আন্দোলন দমনে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। রংপুরের বীর সন্তান আবু সাঈদসহ দেশব্যাপী অনেক ছাত্র-জনতা নিহত হন। ফলে জনগণ ফুঁসে ওঠে এবং ছাত্র আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামে। শুরু হয় রাজপথে যুদ্ধংদেহী সশস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আক্রমণ আর আকাশপথে হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচার গুলিবর্ষণ। রাজধানীসহ পুরো দেশ যুদ্ধের ময়দানে রূপ নেয়। কিন্তু ছাত্র-জনতা খালি হাতে ইট-পাটকেল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তারা সৃষ্টি করেন মানব ঢাল। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আধা-সামরিক বাহিনী পিছু হটে। অবস্থা বেগতিক দেখে রক্তপিপাসু সরকার ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করে। একই সাথে সেনাবাহিনী মাঠে নামায়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একটি ‘পজ’ বা সাময়িক বিরতি টানা হয়। শুরুতে সেনাবাহিনী ‘যুদ্ধংদেহী’ সাজে বা আবহে মাঠে নেমে ‘ডিটারেন্স’ সৃষ্টির স্ট্যাটেজি বা কৌশল নেয়। রাজপথে ‘সাঁজোয়া’ যান চলাফেরা শুরু করে। সেনানিবাসের প্রবেশ মুখে এমন ‘প্রতিরক্ষা’ বাধা নির্মাণ করা হয় যা জনমনে ভীতির সঞ্চার করে। এ সময় আন্দোলনের তেজ একটু কমে আসে। সরকারি কৌশলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন বাহিনী প্রধানরা ধ্বংসযজ্ঞ পর্যবেক্ষণে বের হন। সেনাপ্রধান রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ দেখে সাংবাদিকদের সামনে দেশের সম্পদ ধ্বংসে হতাশা প্রকাশ করেন। কিন্তু মানুষের হতাহতের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না করায় সাধারণ মানুষ হতাশ হন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তিনি সে দিন শুধু সরকারি বয়ান দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, সরকারের মন্ত্রী-নেতাকর্মী সবাই তার স্বরে শুধু বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসে আক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের দোষারোপ করছিলেন। কারো মুখে তখন মানুষ হত্যার বিষয়ে কিছু শোনা যাচ্ছিল না! আর মিডিয়াগুলো শুধু ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনাগুলো ফোকাস করছিল। এ দিকে আন্দোলনের সাময়িক বিরতির সুযোগে সরকার আরো কঠোর হয়ে ওঠে। ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্যাতন শুরু করে। কিন্তু দেশীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকলেও নাগরিকরা বিভিন্ন কৌশলে বিদেশী মাধ্যমের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নৃশংসতার দৃশ্যগুলো দেখতে পান। ফলে পুরো জাতি ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু হয় আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ দেশের সন্তান। তারা দেশপ্রেম নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সুপ্ত দেশপ্রেম আরো শাণিত হয়। সুতরাং সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য ও খবরাদি সৈনিকদের হৃদয়েও তোলপাড় সৃষ্টি করে। শুরু হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ। সেনাবাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যথাযথভাবে সেনাসদরে সৈন্যদের মনোভাব সংক্রান্ত খবরাদি পৌঁছাতে থাকেন। এদিকে পয়লা আগস্ট থেকে ছাত্ররা চূড়ান্ত আন্দোলনের আলটিমেটাম দেন। ফলে বিচক্ষণ সেনাপ্রধান সরাসরি জুনিয়র এবং মাঝারি পর্যায়ের সেনা অফিসারদের মনোভাব বুঝতে ৩ আগস্ট দরবার ডাকেন। এ দরবার ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হলেও সারা দেশের অফিসারদের অনলাইনে যুক্ত করা হয়। উল্লেøখ্য, সেনাবাহিনীর মাঠপর্যায়ের কার্যকরী শক্তি বা কাণ্ডারি হলো ক্যাপ্টেন থেকে লে. কর্নেল পদবির অফিসাররা। সেনাপ্রধানের এ দরবারে জুনিয়র ও মাঝারি পর্যায়ের অফিসারদের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। এতে তাদের মনোভাব সেনাপ্রধান সহজে বুঝে নেন। একদিকে অফিসারদের মনোভাব অন্যদিকে সেনাপ্রধান নিজে একজন বিচক্ষণ, বিবেকবান ও খাঁটি ধার্মিক মানুষ হওয়ার সুবাদে নিজের কর্তব্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি। একটি গানের কলির মাধ্যমে তিনি তার করণীয়ের বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যরা তাদের কর্তব্য বুঝে ফেলেন। ফলে সামনের দিনগুলোতে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা অলিখিতভাবে ঠিকঠাক হয়ে যায়। সেনাপ্রধানের এ অপ্রত্যাশিত বা অনুচ্চারিত সিদ্ধান্ত দেশের ইতিহাস নতুন করে রচনার পথ তৈরি করে দেয়। দেশ এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যায়। রাজপথে সেনাসদস্যরা ঠিকই নামেন কিন্তু সরকারের দোসর হয়ে নয়; বরং ছাত্র-জনতার বন্ধু হয়ে। তাই তো রাস্তায় রাস্তায় সেনাদের সাঁজোয়া যানে ছাত্রদের উঠে উল্লাস করতে দেখা যায়! সৃষ্টি হয় সেনা-ছাত্র-জনতার মেলবন্ধন। স্থাপিত হয় দ্বিতীয় স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর।

সফল গণ-অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় মাইলফলকটি রচনা করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসাররা। ‘রাওয়া’ বা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারদের ক্লাবে ৪ আগস্ট একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাহসী অবসরপ্রাপ্ত (১১ জন মেজর জেনারেলসহ) অফিসাররা যোগদান করেন। ওই সভায় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল নূরুদ্দীন খান এবং জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন বর্তমান কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসার। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বক্তব্যকালে হতাহতের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার অত্যন্ত আবেগঘন বক্তব্য সেনাবাহিনীর প্রবীণ-নবীন সদস্যসহ পুরো দেশবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এতে কর্মরত সেনারা তাদের ওপর অভিভাবকত্বের বিশাল সুশীতল ছায়ার আশ্রয়ের সন্ধান পান। পরবর্তী দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত বয়োবৃদ্ধ সামরিক-সদস্যরা সাহসিকতার সাথে আন্দোলনের পক্ষে মিছিলে নামেন। বিষয়টি আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ের পথ মসৃণ করে। এদিকে ২ আগস্ট মিরপুর ‘ডিওএইচএস’-এ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা পরিবার-পরিজনসহ মিছিলে নেমে সরকারের গণহত্যার প্রতিবাদ জানান। এসব ঘটনার প্রভাবে সেনাবাহিনী স্বৈরাচারী সরকারের অন্যায্য আদেশ অমান্য করে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা শান্ত-সাম্য ও জনবান্ধব মনোভাবে অবিচল থাকে। এতে জনগণ নির্ভয়ে পূর্ণ উদ্যমে নামে রাজপথে। মুহূর্তের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেই সাথে প্রাণ ভয়ে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এভাবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশ ও জাতিকে একটি ভয়ানক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছিল ১৯৭১ সালে জাতির ভয়াবহ এক ক্রান্তিকালে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে। ২৫ মার্চ রাতের গভীরে দখলদার পাকবাহিনীর হামলায় গোটা জাতি যখন দিশেহারা ঠিক তখন তৎকালীন মেজর জিয়ার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধের ডাক দেন। দিশেহারা জাতি অথৈ সাগরে আলোর সন্ধান পায়। সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা যুদ্ধের নিউক্লিয়াস করে জাতির দামাল ছেলেরা তার চারপাশে জড়ো হয়। তারা সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ৯ মাসে বিজয় অর্জন করেন।

বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় দুঃশাসন, দুর্ভিক্ষ ও একদলীয় শাসন কায়েমে জাতি এক বিশৃঙ্খল অবস্থার সম্মুখীন হয়। যার ধারাবাহিকতায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। শুরু হয় অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চক্র। দেশ এক চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়। কিন্তু ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। সাধারণ সেনারা তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। একই সাথে জনতার সাথে মিশে সিপাহি-জনতার বিপ্লব ঘটান। দেশ ও জাতি রক্ষা পায় এ যাত্রা।

এরপর ১৯৮২ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। দীর্ঘ ৯ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ শাসন করে তিনি স্বৈরাচার হয়ে উঠেন। ১৯৯০ সালে তার বিরুদ্ধে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাজপথে নামেন। এরশাদ সর্বশেষ ট্রামকার্ড হিসেবে সেনাবাহিনীকে নামানোর আদেশ দেন। কিন্তু তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নূরুদ্দীন খান জনগণের বুকে গুলি চালাতে অস্বীকার করেন। সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ফলে এরশাদের পতন ঘটে এবং জাতি মুক্তি পায় স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে।

সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে কিছু উপজাতি সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। তারা শান্তিবাহিনী গঠন করে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ সন্ত্রাস দমনে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতা ধরে রেখেছে। অসংখ্য সেনাসদস্য সেখানে শহীদ হয়েছেন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের মহাবিপর্যয়কর ‘জলোচ্ছ্বাস’ এবং ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরে’ সেনাবাহিনী বিপর্যস্ত জাতির পাশে থেকে নিবিড়ভাবে সেবা দিয়েছে। সেনাবাহিনী আরো একটি যুগান্তকারী সেবা দিয়েছে দেশ ও জাতিকে। সেটি হলো জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ। সেনাবাহিনী দেশে প্রথমবারের মতো কাজটি সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছিল ২০০৮ সালে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় অংশের জোগান দিচ্ছে। সেই সাথে দক্ষতা, সততা ও পেশাদারিত্বের সাথে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে দেশের জন্য অর্জন করেছে সুনাম ও খ্যাতি। অনেক বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসঙ্ঘে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণের গৌরব অর্জন করছে।

১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জাতি গঠনে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্রান্তিকালে দেশবাসীর পাশে ছায়ার মতো থেকে সাহস ও মনোবল জুুগিয়েছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি নেতিবাচক ভূমিকাতেও সেনাবাহিনীকে জড়িত করেছিল পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার উচ্ছিষ্টভোগী তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জালিয়াতির ভোট সম্পন্ন করতে জেনারেল আজিজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছিলেন। সেই সরকার ভোটের মাঠে বিরোধী দলগুলোকে নামতে সর্বপ্রকার বাধার সৃষ্টি করলেও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ বলেছিলেন, ‘দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচনী পরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে।’ তার এ বক্তব্যে পুরো জাতি হতাশ হয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ উৎসাহিত হয়ে পূর্ণ উদ্যমে রাতের আঁধারে ভোটের বাক্স ভরে ফেলেছিল। অন্য দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ কৌশলে সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব ন্যায়নিষ্ঠার সাথে পালন থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। কাজেই ওই জালিয়াতির নির্বাচনের দায়ভার সেনাবাহিনীর নয়; বরং তার দায় পুরোপুরি ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে সংগঠিত হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির বিজয় অর্জন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। এটি প্রমাণিত যে, আমাদের সেনাবাহিনী সত্যিকারার্থে দেশপ্রেমিক। এ সেনাবাহিনীর পাশে যতদিন জাতি থাকবে; ইনশাআল্লাহ ততদিন ভেতর ও বাইরের কোনো শক্তি আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। দেশের আপামর জনতার সহযোগিতা ও সমর্থনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য দেশের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করতে বদ্ধপরিকর।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : [email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews