নয়া দিগন্ত ডেস্ক
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, খাগড়াছড়ি ও মেহেরপুরের গাংনী সীমান্ত দিয়ে ৪২ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল বৃহস্পতিবার সীমান্ত দিয়ে এদের জোর করে বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে দেয়া হয়।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের কাকমারা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয়ে ১৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে পুশইন করেছে।
গতকাল ভোর ৪টার দিকে পুলিশ উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা থেকে পুশইন করা ১৯ জনকে থানায় নিয়ে আসে।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ জানায়, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে থানা পুলিশ বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে ওই ১৯ নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়।
উদ্ধারকৃতরা হলেন শরীয়তপুরের সখিপুর থানার মো: বিল্লাল (৫১), মরিয়ম বেগম (৪০), নিলুফার বেগম (৩৮), যশোরের শর্শা উপজেলার আলি মিয়া (৬০), মো: মিলন শেখ (৩৫) ও তার স্ত্রী মুসলিমা খাতুন (৩০), রহিমা খাতুন (৪৫), রুপালী বেগম (৩৫), একই জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার শাহানারা খাতুন (৫০), নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার শেফালী (৩৫) স্বপ্না বেগম (১৫), সাতক্ষীরার কলেরা উপজেলার আমির মোল্লা (১৪), রিমা খাতুন (২৭), রিমা খাতুন (২৭), আলী মিয়া (৬০), রহিমা খাতুন (৪৫), শাহানারা খাতুন (৫০), চট্টগ্রামজেলার ফটিকছড়ি উপজেলার খোরশেদ আলম (৩১) ও তাসলিমা খাতুন (৩৫)।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আমিনুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের মুম্বাইসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত থাকার কথাও পুলিশকে জানায়। উদ্ধারকৃতদের নাম-ঠিকানা যাচাই চলছে। এরপর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে আরো ১৫ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা ভারতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। বর্তমানে তারা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তাদের পরিচয় যাচাইবাছাই চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৯ জন এবং পানছড়ির কচুছড়ি সীমান্ত দিয়ে ছয়জনকে পুশইন করা হয়।
জানা যায়, ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ওয়াইনথং থেকে তাদের পাঠানো হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টা হাঁটার পর কচুছড়ি এলাকায় পৌঁছে তারা।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখার উদ্দিন খন্দকার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দুই উপজেলায় ১৫ ব্যক্তিকে পুশইন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। তাদের ভারতের কোন এলাকা থেকে পুশইন করা হয়েছে সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।
গুইমারা বিজিবি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এস এম আবুল এহসান বলেন, অবৈধ পুশইনের বিষয়ে আমরা বিএসএফের সাথে কথা বলেছি। তাদের আন্তর্জাতিক আইন ফলো করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত ব্রিফিং করেছেন। আমরা সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
জানা গেছে, এ নিয়ে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৫৪ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এর আগে গত ৭ মে প্রথমবার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি উপজেলার তিনটি পয়েন্ট দিয়ে পুশইন করা শুরু করে ভারত।
মেহেরপুর প্রতিনিধি ও গাংনী সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রংমহল সীমান্ত দিয়ে নারী শিশুসহ আটজনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএসএফ সদস্যরা পুশইন করলে রংমহল ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে। পরে তাদের গাংনী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা গেছে, পুশইন করা ব্যক্তিরা সীমান্তবর্তী সড়ক দিয়ে দেশের ভেতরের দিকে আসার সময় টহলরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কথাবার্তায় অসঙ্গতি ধরা পড়লে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে রংমহল বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান।
রংমহল বিজিবি ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, পুশইন হওয়া আটজনের মধ্যে দুইজন শিশু, তিনজন নারী এবং তিনজন পুরুষ রয়েছেন। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা, খুলনা ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মুরুটিয়া থানার দীঘলকান্তি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের সীমান্তের মেইন পিলার ১৩৬ ও ১৩৭ এর মাঝামাঝি কাঁটাতারের গেট খুলে তাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়।
পুশইন হওয়া আটককৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার তেতুলিয়া গ্রামের ইসাহকের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৫), নড়াইল জেলার বরগাত গ্রামের শহরের টুটুল মোল্লার স্ত্রী আবেজান (৩২), জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার কান্দারচর গ্রামের মোজাম্মেলের মেয়ে আকলিমা খাতুন (২১), খুলনার দেবপা সরকারের স্ত্রী বাক প্রতিবন্ধী নাসিমা খাতুন (২৪) তার ছেলে আব্দুর রহিম (৪) ও রোহান (৩) এবং দৌলতপুর এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩২) ও ময়মনসিংহ জেলার গাফরগাঁও উপজেলার মুখী গ্রামের ধন মিয়ার ছেলে টিটু মিয়া (৪২)।