রাজধানী শহর ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ এই শহরের রাস্তায় চলাচল করে, কাজের খোঁজে, জীবনের প্রয়োজনে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই শহরকে যেন নতুন একটি পরিচয়ে ডাকা হয় ‘আন্দোলন-নগরী’। এটি যেমন বাস্তবতা, তেমনি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ দেশের সংবিধান প্রতিটি নাগরিককে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার দিয়েছে। সেই অধিকারের চর্চা করতেই মানুষ রাস্তায় নামে, দাবি জানায়। এ ধরনের আন্দোলন গণতান্ত্রিক সমাজের একটি অংশ; এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব আন্দোলনের ধরন ও প্রভাব কী? বর্তমানে ঢাকা শহরে একটি আন্দোলনের মানেই হলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যাম, গণপরিবহন বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি, রোগীর বিলম্বে হাসপাতালে পৌঁছানো এবং এক ধরনের সার্বিক অচলাবস্থা। এসব পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ, যারা কোনো পক্ষেই নেই। কাজের মানুষ তার কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে না, পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে না, রোগীরা হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি করে। শিক্ষার্থী, সাধারণ কর্মচারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবার দৈনন্দিন জীবনে পড়ে নেতিবাচক ছাপ। আন্দোলনের যৌক্তিকতাই তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, যানবাহন ভাঙচুর, এমনকি আগুন লাগানোর মতো ঘটনা থেকে সাধারণ মানুষের মনে আন্দোলনের প্রতি ভয় ও অনাস্থা তৈরি হয়, যা গণতন্ত্রের জন্য কখনই শুভ লক্ষণ হতে পারে না।  তবে এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণের পথ আছে। আমাদের আন্দোলনের বিকল্প উপায় কী হতে পারে ভাবতে হবে। আধুনিক বিশ্বে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনেক উপায় চালু রয়েছে যেমন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি, অনলাইন পিটিশন ইত্যাদি। এসব পদ্ধতিতে যেমন দাবি জানানো যায়, তেমনি জনজীবনে বিঘ্ন না ঘটিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট ‘আন্দোলন জোন’ নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে মানুষ তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে, কর্মসূচি পালন করতে পারবে, কিন্তু তা জনসাধারণের চলাচলের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। আমাদের বুঝতে হবে, আন্দোলন যদি জনদুর্ভোগের কারণ হয়, তবে তা গণতান্ত্রিক চর্চা না হয়ে জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়ে পড়ে। নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে সেই দাবি আদায়ের নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। ঢাকা শহর আজ শুধু প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড। এই শহরের প্রতিটি মিনিট মূল্যবান। চলমান আন্দোলন সংস্কৃতিকে একটি সুশৃঙ্খল ও দায়িত্বশীল পথে পরিচালিত করতে না পারলে নাগরিক জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হবে, সামাজিক আস্থা কমে যাবে এবং আমরা ধীরে ধীরে নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাব। তাই সময় এসেছে নতুনভাবে ভাবার। আন্দোলন হোক গণতন্ত্রের শক্তি, কিন্তু তা হোক সচেতন, শান্তিপূর্ণ ও জনবান্ধব। যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর শোনা যাবে কারও জীবনে বিঘ্ন না ঘটিয়ে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews