আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল হাকিম সম্পর্কে বলেন- তারা আপনার কাছে এমন কোনো বিস্ময়কর সমস্যা (প্রশ্ন) নিয়ে আসেনি, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর তাফসির (ব্যাখ্যা) আপনাকে আমি দান করিনি (সুরা ফোরকান :৩৩)। হজরত রাসুলে করিম (স.) এরশাদ করেছেন- 'নিশ্চয়ই কোরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা করে।' যা শুধু বিষয়ভিত্তিক আয়াত একত্রীকরণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব। আল কোরআনুল হাকিমে ওহি বা প্রত্যাদেশ শব্দটি ৩৩টি সুরায় ৭০টি আয়াতে ৭৮ বার রয়েছে। এই ৭০ আয়াতসহ আরও সাতটি সমর্থক আয়াতসহ মোট ৭৭টি আয়াতে ওহি বা প্রত্যাদেশের বিষয়টি রয়েছে। সেগুলোর অধিকাংশই আমরা এখানে আলোকপাত করব।

কোরআন হচ্ছে ওহি : এটা (কোরআন) ওহি, যা প্রত্যাদেশ করা হয় (৫৩ :৪)। আমি আপনার প্রতি যে কিতাব প্রত্যাদেশ করেছি, তা সত্য, পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সব জানেন, দেখেন (৩৫ :৩১)। এ বিষয়ে আরও ছয়টি আয়াত রয়েছে।

নবী ও রাসুলদের ওহি করা হয় : এ হলো গায়েবি সংবাদ, যা আমি আপনাকে (মোহাম্মদ) ওহি পাঠিয়ে থাকি। আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না, যখন প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে প্রতিপালন করবে মারইয়ামকে এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিল (৩ :৪৪)। আমি আপনার প্রতি ওহি পাঠিয়েছি, যেমন করে ওহি পাঠিয়েছিলাম নুহের প্রতি এবং সে সব নবী-রাসুলের প্রতি যাঁরা তাঁর পরে প্রেরিত হয়েছেন। আর ওহি পাঠিয়েছি ইসমাইল, ইব্রাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর সন্তানদের প্রতি এবং ইসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলায়মানের প্রতি। আর আমি দাউদকে দান করেছি জবুর গ্রন্থ (৪ :১৬৩)। এ বিষয়ে আরও ১৫টি আয়াত রয়েছে।

ফেরেশতাদের প্রতিও ওহি করা হয় : তোমাদের পরওয়ারদেগার যখন ফেরেশতাদের ওহি করেন যে, আমি তোমাদের সঙ্গে রয়েছি, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহ ধীরস্থির করে রাখো। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব (৮ :১২)।

আকাশকেও ওহি করা হয় : অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দু'দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রতিটি আকাশে তাঁর ওহি প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা (৪১ :১২)।

মৌমাছিকে ওহি প্রদান : আপনার পালনকর্তা মধুমক্ষিকাকে ওহি করলেন- পর্বতে, বৃক্ষে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরি করো (১৬ :৬৮)।

সাধারণ মানুষকেও ওহির প্রজ্ঞা ও এলহাম প্রেরণ করা হয় : আমি মুসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্যদান করতে থাকো। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশঙ্কা করো, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং ভয় কোরো না, দুঃখও কোরো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরদের একজন করব (২৮ :৭)। তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান 'প্রজ্ঞা' দান করেন এবং সে তো প্রচুর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। জ্ঞানবানরা ছাড়া কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না (২ :২৬৯)। আর প্রজ্ঞা হচ্ছে ওহি।

এটা ওই হিকমত বা প্রজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত, যা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহি মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্তও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে (১৭ :৩৯)। তিনি স্বীয় নির্দেশে তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা নির্দেশসহ (ওহিসহ) ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন এই মর্মে যে, সতর্ক করে দাও, আমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, অতএব, আমাকে ভয় করো (১৬ :২)। রাসুলের অনুসারীদের প্রতি ওহি- আর স্মরণ করো, যখন আমি হাওয়ারিদের (ইসার অনুসারী) প্রত্যাদেশ করলাম, 'তোমরা ইমান আনো আমার প্রতি এবং আমার রাসুলের প্রতি', তখন তারা বলেছিল, 'আমরা ইমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা তো মুসলিম' (৫ :১১১)।

নবী-রাসুলরা শুধু ওহির অনুসরণ করেন : আর তুমি অনুসরণ করো সে অনুযায়ী যেমন তোমার প্রতি ওহি আসে এবং ধৈর্য্য ধারণ করো, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুত, তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী (১০ :১০৯)। এ বিষয়ে আরও ছয়টি আয়াত রয়েছে।

মানুষকে সতর্ক করতে হবে ওহির মাধ্যমে : এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি ওহি করছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে আপনি মক্কা ও এর আশপাশের লোকদের (আরবিভাষী) সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে (৪২ :৭)। এ বিষয়ে আরও চারটি আয়াত রয়েছে।

ওহি বা প্রত্যাদেশ হচ্ছে সৎপথ দেখানোর রাস্তা : আর যাদের আমি সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন একদল রয়েছে যারা সত্য পথ দেখায় এবং সে অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে (৭ :১৮১)। বলুন, আমি পথভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতির জন্যেই পথভ্রষ্ট হব; আর যদি আমি সৎপথ প্রাপ্ত হই, তবে তা এ জন্য যে, আমার পালনকর্তা আমার প্রতি ওহি প্রেরণ করেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী (৩৪ :৫০)। এ বিষয়ে আরও একটি আয়াত রয়েছে।

ওহির মাধ্যমে নবীরা সরল পথে পরিচালিত হন : অতএব, আপনার প্রতি যে ওহি নাজিল করা হয়, তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সরলপথে রয়েছেন (৪৩ :৪৩)। এ বিষয়ে আরও একটি আয়াত রয়েছে।

বিধান হবে ওহি : আমি তাঁদের নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহি নাজিল করলাম সৎকর্ম করার, সালাত কায়েম করার এবং জাকাত দান করার। তাঁরা আমার এবাদতে ব্যাপৃত ছিলেন (২১ :৭৩)। এ বিষয়ে আরও সাতটি আয়াত রয়েছে।

ওহির মাধ্যমে প্রেরিত সব নবীর ধর্ম এক, শরীয়ত ভিন্ন ভিন্ন:  তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন সে দ্বীনকে যার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন নুহকে, আর যা আমি ওহি করেছিলাম তোমাদের এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মুসা ও ইসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে কোনো মতভেদ কোরো না। আপনি মুশরিকদের যে বিষয়ের প্রতি আহ্বান করছেন, তা তাদের কাছে বড়ই দুর্বহ বোঝা বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে দ্বীনের দিকে পথ দেখান (৪২ :১৩)।

মিথ্যা ওহির দাবিদাররা জালিম : ওই ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে অথবা বলে, আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোনো ওহি আসেনি এবং যে দাবি করে যে, আমিও নাজিল করে দেখাচ্ছি যেমন আল্লাহ নাজিল করেছেন (৬ :৯৩)।

কাফেররা ওহির অনুসরণ হতে পদস্খলনের চেষ্টা করে তারা তো আপনাকে হটিয়ে দিতে চাচ্ছিল যে বিষয় আমি আপনার প্রতি ওহির মাধ্যমে প্রেরণ করেছি তা থেকে, আপনার পদস্খলন ঘটানোর জন্য তারা চূড়ান্ত চেষ্টা করেছে, যাতে আপনি আমার প্রতি কিছু মিথ্যা সম্বন্ধযুক্ত করেন। এতে সফল হলে তারা আপনাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নিত (১৭ :৭৩)।

ওহি বা প্রত্যাদেশের মালিক আল্লাহ : আমি ইচ্ছা করলে আপনার কাছে ওহির মাধ্যমে যা প্রেরণ করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম। অতঃপর আপনি নিজের জন্য তা আনয়নের ব্যাপারে আমার মোকাবিলায় কোনো দায়িত্ব বহনকারী পাবেন না (১৭ :৮৬)।

মহান রাব্বুল আলামিন ওহির মাধ্যমে তাঁর যেসব আদেশ-নিষেধ আমাদের জানিয়েছেন, সে আনুযায়ী আমাদের আমল করার তাওফিক দিন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews