১৬ মিনিট আগে
ছবির উৎস, Future Publishing/Getty
ছবির ক্যাপশান,
ধান প্রক্রিয়াজাত করছেন নারীরা
বাংলাদেশে যেসব হাইব্রিড ধান চাষ হয় হীরা ধান তার মধ্যে অন্যতম।
কৃষকরা বলছেন উচ্চ ফলনশীল হওয়ার কারণে এই ধান তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির চায়না বেগম তাদের মধ্যে একজন।
ফলন ভালো হওয়ার কারণে তিনি গত সাত আট বছর ধরে হীরা ধান চাষ করছেন।
তিনি বলেন, "এই বছর ৪ বিঘা জমিতে হীরা ধান চাষ করে দুইশ মন ধান পেয়েছি। হীরা ধান চাষ করে আমি অনেক উপকার পাইছি। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করা, সংসারের খরচ সব চালাই"।
বাংলাদেশে যে কয়টি কোম্পানি হাইব্রিড ধানের আমদানির অনুমতি পেয়েছে তাদের মধ্যে একটি সুপ্রিম সিড।
কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রথম চীন থেকে বাংলাদেশে হীরা ধানের বীজ নিয়ে আসে।
সুপ্রিম সিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুম বলেন "চীনা জাতের হীরা ধানবীজ আমরা প্রথমে পুরোপুরি আমদানি করে বাজারজাত করি। এরপর আস্তে আস্তে নিজস্ব উৎপাদনে যাই। বর্তমানে ৯০ শতাংশ বীজ নিজেরাই উৎপাদন করে বাজারজাত করছি। তিনি বলেন, হাইব্রিড জাতগুলোর ফলন প্রায় কাছাকাছি"।
"হীরা ব্র্যান্ড নামে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ জাত, যেগুলোর কোনোটা চিকন, কোনোটা মোটা চাল; কোনোটা আগাম আবার কোনোটা নাবি জাতের ধান রয়েছে আমাদের"।
বাংলাদেশে শুধু হীরা ধান কত হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে সেটা সরকারের কাছে হিসেব নেই।
ছবির উৎস, আবু তাহের
ছবির ক্যাপশান,
ধান পাকার পরেও পাতা সবুজ থাকে হীরা ধানের
বাংলাদেশে হীরা হাইব্রিড ধান চাষ করা হয় প্রথম ১৯৯৬ সালে।
প্রথম বছর মাত্র ১৫টন ধান চাষ হয়েছিল। ২০১০ সালে ৮ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে বলে সুপ্রিম সিড কোম্পানি বলছে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার আবাদ করার জন্য ৩৫টি স্থানীয় কোম্পানির মাধ্যমে ২১০টি হাইব্রিড জাতের ধানের অনুমতি দিয়েছে।
নানা কারণে কৃষকদের মাঝে হীরা ধানের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। কৃষিবিদরা মনে করেন তারমধ্যে নীচের কারণগুলো অন্যতম:
১. সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি শতাংশে এক মনের বেশি ধান হয়।
২. ধান গাছের উচ্চতা মাঝারি, ফলে গাছ হেলে পড়ে না। পাতা বড় এবং ঘন সবুজ থাকে। ধান পাকা পর্যন্ত এটা বেশি উৎপাদনের অন্যতম কারণ। পোকার সংক্রমণ কম এবং শিলাবৃষ্টি সহনশীল।
ছবির উৎস, Future Publishing/Getty
ছবির ক্যাপশান,
ধান খেতে কৃষক
৩. একর প্রতি উৎপাদন খরচ অন্য হাইব্রিড জাতের তুলনায় কম। অথচ উৎপাদন বেশি।
৪. হীরা ধানের জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৫০দিন। ফলে কৃষকরা প্রতি বছর যে ঝড় বন্য বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ফসল ঘরে তুলতে পারে।
৫. হাইব্রিড হীরা ধান থেকে চাল উৎপাদনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ভাতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, ঝরঝরে এবং রান্না করতে কম সময় লাগে।
হীরা ধান বীজ প্যাকেট থেকে খুলে প্রথমে হালকা রোদে ছালার চটে বা চাটাই এ দুই ঘণ্টা শুকাতে হবে।
এরপর বীজগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে আবার ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পরে পানি ঝড়িয়ে শুকনা জায়গায় ভেজা ছালার উপর বিছিয়ে রাখতে হবে।
বীজগুলো আবার একটা ভেজা ছালা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
প্রয়োজনে চাপা দেয়ার জন্য কাঠের টুকরা ব্যবহার করতে হবে।
বার ঘণ্টা পর বীজ শুকিয়ে গেলে চটের উপর পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
এভাবে পানি দেয়া বা জাগ দেয়ার ৫০ থেকে ৭০ ঘণ্টার মধ্যে বীজগুলো থেকে সাদা অঙ্কুর বের হয়ে বীজতলায় ছড়ানোর জন্য তৈরি হয়ে যাবে।
ছায়ামুক্ত জায়গায় বীজতলা তৈরির জন্য জমি দুই-তিনবার চাষ দিয়ে জমি ৫/৭ দিনের জন্য পানিতে তলিয়ে রাখতে হবে।
যাতে আগাছার বীজ নষ্ট হয় এবং আগাছা পঁচে যায়।
শেষ চাষের সময় বীজতলায় প্রতি শতকে ৭-১০ মন গোবর, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ১ কেজি, ৬০০ গ্রাম এমপিও, ৪০০গ্রাম জিপসাম, এবং ৯০ গ্রাম জিংক দিয়ে বীজতলা সমান করতে হবে।
বীজতলায় প্রতি বেডের প্রস্থ ১ মিটার এবং দুইটা বেডের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে। যা শেষ ও নিষ্কাশনের কাজে লাগবে।
ছবির উৎস, আবু তাহের
ছবির ক্যাপশান,
হীরা ধান
এবার বেডের থকথকে কাদার উপর অঙ্কুরিত বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে।
প্রতি শতকে এক কেজি বীজ ফেলতে হবে। বীজতলা তৈরির উৎকৃষ্ট সময় ১৫ই নভেম্বরর থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বীজতলায় প্রয়োজনমত সেচ, কীটনাশক এবং ছত্রাক-নাশক দিতে হবে।
মূল জমিতে দুই তিনবার চাষ দিয়ে আবর্জনা পচাঁনোর জন্য ৫/৭দিন সময় দিতে হবে।
এরপর শেষ চাষের আগে প্রয়োজনমত সার দিতে হবে। চারা মূল জমিতে ৬-৮ ইঞ্চি লাইন করে রোপন করতে হবে।
চারা কাদায় কম গভীরে রোপন করতে হবে। চব্বিশ শতক জায়গায় এক কেজি চারা রোপন করা যায়।
হীরা ধান পাকার পরেও পাতা সবুজ এবং সতেজ থাকে।
আর শীষে চিটার পরিমাণ কম হয়। ফলে উৎপাদন বেশি হয়। প্রতি শতকে হীরা ধান পাওয়া যায় এক মনের বেশি।
জমিতে ৮০ শতাংশ ধান পাকলে ধান দ্রুত কেটে মাড়াই করে গোলাজাত করতে হবে।
সরকারের কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বীজ ও উদ্যান বিভাগের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন "যতগুলো হাইব্রিড ধান বাংলাদেশে রয়েছে তার মধ্যে হীরা ধানের ফলন ভালো। কৃষকদের মধ্যে এটা জনপ্রিয় কারণ তাদের সাশ্রয় হয়, উৎপাদন ভালো"।
তবে তিনি বলেন এই চালটা কিছুটা মোটা হওয়ার কারণে কাটিং করে পলিশ করে বাজারে অন্য নামে বিক্রি করা হয়।
"মানুষ জানতে পারে না এটা হীরা ধান থেকে উৎপাদন করা চাল কারণ বাজারে হীরা নামে কোন চাল আপনি পাবেন না"।