শীর্ষসন্ত্রাসী ওমর ফারুক কচির নিয়ন্ত্রণে এখন ঢাকা দক্ষিণের আন্ডারওয়ার্ল্ড। বিদেশে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছে অপরাধ জগৎ। ম্যানেজ করছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গন। যে কারণে একের পর এক অপরাধ করে গেলেও তার বাহিনীর কাউকে গ্রেফতার হতে হয় না। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থকড়ি ব্যয় হচ্ছে তার আয়েশি জীবনযাপনে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, নেপালের কাঠমান্ডুতে হোটেল ব্যবসা থাকলেও আপাতত সে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে দুবাইয়ে। দুবাইয়ে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের যারা আগে থেকেই অবস্থান করছে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে চলছে কচি।


ওমর ফারুক কচির উত্থান সেই ’৯০ এর দশকে। তখন সে ডাকাত শহীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এরপর এক সময় নিজেই ঢাকার গেন্ডারিয়া, ফরিদাবাদ, আইজি গেট ও আরসিন গেট এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। আশ্রয় দেয় ঢাকার অপর দুই শীর্ষসন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গির ও পিচ্চি হান্নানকে। এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কচি তার নিজ এলাকা ফরিদাবাদে দু’টি সাততলা ভবন নির্মাণ করে দেয়। তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে এক সময়ে সরাসরি বিরোধ শুরু হয় ঢাকা দক্ষিণের শাহাদাত কমিশনার, ফিরোজ আলম পিন্টু, আনু, সুজিত দাশ টুনু, গোবিন্দ, টিটু ও টাক্কু রিপনের সাথে। পরবর্তীতে তার প্রতিপক্ষদের অনেকেই সন্ত্রাসীদের হাতে কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রসফায়ারে নিহত হয়। পরবর্তীতে ডাকাত শহীদ ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর কচি ঢাকা দক্ষিণের একক নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়ে। ওই সময়ের আগেই সে আলম ওরফে দ্বিগম্বর আলমের মাধ্যমে ঢাকার ওই সময়ের প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা লিয়াকতের সাথে একটি সমঝোতা করে। তখন আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার শক্তি আরো বেড়ে যায়।


আন্ডারওয়ার্ল্ড সূত্র জানায়, ঢাকার কোর্ট কাচারি এলাকায় অ্যাডভোকেট হাবিব মন্ডল হত্যার পরই আন্ডারওয়ার্ল্ডে কচির আধিপত্য বিস্তার শুরু হয়। হাবিব মন্ডল ছিলেন কচির প্রতিপক্ষ শাহাদাত কমিশনার ও ফিরোজ আলম পিন্টুদের আইনজীবী। ওই হত্যাকাণ্ডে কচি ও কালা জাহাঙ্গিরের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ড হয়। কচির সাথে পিচ্চি হান্নান ও কালা জাহাঙ্গিরের সমঝোতা ছিল, ঢাকার দক্ষিণে কচির প্রতিপক্ষকে খুন করতে জাহাঙ্গির ও পিচ্চি হান্নান সহযোগিতা করবে আর উত্তরের খুনে জাহাঙ্গির ও হান্নানকে সহায়তা করবে কচি। এই সমঝোতার ভিত্তিতেই একের পর এক খুন হন কাউন্সিলর রাজু, নিউটন, শাহাদাত, বিনা, আনোয়ার হোসেন আনু, ডিশ ব্যবসায়ী মান্নান, সেন্টু, মাইকেল, টিটু, দিলা ওরফে হিজড়া দিলা, মিজান, কইট্টা সিরাজের ভাই পিথি, বোন্দা, মুরগি মিলন, সুজিত দাশ টুনুসহ কয়েক ডজন। কালা জাহাঙ্গির ও পিচ্চি হান্নান ঢাকার উত্তরে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে কচির এলাকা আইজিগেটে গিয়ে আশ্রয় নিতো। আর দক্ষিণে অপরাধ করে কচি আশ্রয় নিতো জাহাঙ্গির ও পিচ্চি হান্নানের ডেরায়। একে অন্যের হাতে খুনের বাইরে ফিরোজ আলম পিন্টু, টাক্কু রিপন এবং ডাকাত শহীদ ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর এক সময় পুরো ঢাকা দক্ষিণ কচির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এখনো অপ্রতিরোধ্য হয়ে আছে ওমর ফারুক কচি। এলাকার ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, নেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল, খুন-খারাবিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যার পেছনে কচির হাত নেই।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কচির বাহিনীতে অন্তত এক শ’ রয়েছে বেতনভুক্ত সন্ত্রাসী। এর মধ্যে ফিল্ডম্যান, লাইনম্যান, লিয়াজোঁম্যান, কালেকশনম্যান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় কচি এবং তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যা ও পুলিশকে গুলিবিদ্ধ করার অভিযোগও রয়েছে। ২০০৪ সালের ২৪ জুন আগারগাঁও বস্তিতে হুমায়ুন নামের এক পুলিশ সদস্য পিচ্চি হান্নানের সাথে গোলাগুলিতে নিহত হয় বলে জানা যায়। ওই ঘটনায় কচিও উপস্থিত ছিল। কিন্তু ওই মামলায় সে আসামি হয়নি। ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন ডিবির ওই সময়ের এসি রাহুল পাটোয়ারী। অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে তাকে গুলি করা হয়। জানা গেছে, শান্ত, জাহাঙ্গির, ইরফান, ইকবাল ও হাজী রুবেলসহ কচি বাহিনীর অনেকেই এই ঘটনার সাথে জড়িত। আগ্নেয়াস্ত্র কেনার কথা বলে পুলিশের সোর্স বিল্লাল ওরফে মৃদুল পুলিশ নিয়ে কচি বাহিনীর সদস্যদেরকে ধরতে গেলে সেখানে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ড সূত্র জানায়, মৃদুলের পরিকল্পনা ছিল কচি বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করিয়ে দেয়া আর কচি বাহিনীর সদস্যদের পরিকল্পনা ছিল মৃদুলকে হত্যা করা। মৃদুলের প্রকৃত নাম সোহেল বলে জানা যায়। এই পুলিশকে গুলি করার পরও কচি বাহিনীর কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
সূত্র জানায়, কচির কাঠমান্ডুতে বিশাল হোটেল ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রতি সে দুবাইয়ে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুবাইয়ে আগে থেকেই অবস্থানকারী ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক সন্ত্রাসী জিসান চাইছে না কচি দুবাইয়ে থাকুক। যদিও এক সময় জিসানের সাথে কচির ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এক সময় ভারতে আশ্রয় নেয়া বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে কচি ধরিয়ে দিয়েছিল বলে জিসান কচিকে বিশ্বাস করে না।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews