ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর সন্ত্রাসবিরোধী শাখা। প্রতিবেদনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার (এলইটি) দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার এনডিটিভি এ খবর জানায়। এনআইএ বলছে, পেলেহগামে হামলা ঘটিয়েছে এলইটি। এর নির্দেশনা দিয়েছেন আইএসআইর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। পাকিস্তানে লস্করের সদরদপ্তর থেকে পরিকল্পনার অনুমোদন দেওয়া হয়। হামলায় জড়িত দু’জন– হাসমি মুসা ও আলি ভাই পাকিস্তানের নাগরিক। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ দুই হামলাকারী পাকিস্তানে নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। সেখান থেকে তারা যাবতীয় নির্দেশনা পাচ্ছিলেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভয়াবহ ওই বন্দুক হামলায় ২৬ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। পাকিস্তান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা নিজেরাই সন্ত্রাসবাদের ভুক্তভোগী। সেই সঙ্গে পেহেলগামের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে। এ অবস্থায় ভারতের এনআইএ প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করল। ভারতীয় সংস্থাটির দাবি, বিপুল পরিমাণ ফরেনসিক তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে তারা এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৮০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ।
এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটছে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের। গতকাল শুক্রবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন শহরে শত শত কাশ্মীরি হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অনেককে মারধরসহ নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী হামলার জেরে অন্তত ৪৮টি পর্যটন স্পট বন্ধ করেছে প্রশাসন। এতে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল কাশ্মীরের লোকজন পড়েছেন বিপাকে।
পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি
ভারত যুদ্ধ করতে চাইলে পাকিস্তান ‘সুচিন্তিত ও নিশ্চিত’ভাবে পাল্টা হামলা চালাবে বলে দেশটির সামরিক বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে জানানো হয়েছে। জিও নিউজ অনলাইন জানায়, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের সভাপতিত্বে রাওয়ালপিণ্ডির সেনা সদরদপ্তরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে বলা হয়, যে কোনো মূল্যে পাকিস্তানের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখানো হবে।
আইএমএফের ঋণ পুনর্বিবেচনা চায় ভারত
পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আইএমএফের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের একটি সরকারি সূত্র শুক্রবার রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে। পাকিস্তান গত বছর আইএমএফের ৭০০ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন পেয়েছে; গত মার্চে দেশটি আরও ১৩০ কোটি ডলার ঋণ-অনুমোদন পায়।
শান্ত থাকার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
চলমান উত্তেজনার মধ্যে দুই পক্ষকে আবারও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সি বলেন, তাঁর প্রত্যাশা পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে। তিনি ভারতকে সংযত থাকারও আহ্বান জানান।
টানা অষ্টম দিন সীমান্তে গোলাগুলি
চলমান উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতেও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলি হয়েছে। টানা অষ্টম রাতের মতো গোলাগুলি ঘটল। ভারতের গণমাধ্যম বলছে, জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, নওশেরা ও আখনুর সেক্টরে পাকিস্তানের দিক থেকে ছোট অস্ত্রের গুলি চালানো হয়। একইভাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ তুলছে।
আজাদ কাশ্মীরে দুই মাসের খাদ্য মজুতের নির্দেশ
পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের জনগণকে খাদ্য মজুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ার উল হক স্থানীয় সংসদে আইনপ্রণেতাদের জানান, দুই মাসের জন্য খাদ্য সরবরাহ মজুত করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে এ অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণার চূড়ান্ত ক্ষমতা মন্ত্রিসভার রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।’ বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এরই মধ্যে চৌধুরী আনোয়ার উল হকের সরকার ১৩টি নির্বাচনী অঞ্চলে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য ১০০ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল সংগ্রহ করেছেন। ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের দুই পাশেই মহড়া দিচ্ছে সেনারা।
এয়ার ইন্ডিয়ার বছরে ক্ষতি হতে পারে ৬০০ মিলিয়ন ডলার
ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ থাকলে এ সময়ে অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করছে এয়ার ইন্ডিয়া। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও অনুরোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে এয়ার ইন্ডিয়ার আসা একটি চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পেহেলগাম হামলায় ভারতের নেওয়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় ভারতের বিমান প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এতে পশ্চিমের গন্তব্যগুলোতে যেতে ভারতীয় বিমানগুলোকে অন্য রুট বেছে নিতে হচ্ছে। এতে ভ্রমণ দীর্ঘ হওয়ায় বেড়েছে জ্বালানি খরচ।
