সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন আগেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল তাদের। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদের জেরে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার হুমকি দিয়েছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। পরে তিনি দলের নাম ঘোষণা করেন। এবার কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিন ফাইল ফাঁস করবেন বলে ট্রাম্পকে ভয় দেখাচ্ছেন তিনি।
প্রয়াত এই ধনকুবের ও যৌন অপরাধীর ফাইলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নাম আছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টে আগেই একবার দাবি করেছিলেন ইলন মাস্ক। তবে পরে পোস্টটি মুছে দিয়েছিলেন তিনি।
মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের সঙ্গে ট্রাম্প সব সরকারি অর্থায়ন ও চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন। তারপরই গতমাসে মাস্ক ওই পোস্ট দেন। কিন্তু সেটি পরক্ষণেই আবার মুছে ফেলাকে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের চলমান বিরোধ কিছুটা কমে আসার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।
কিন্তু এবার আবার পুরনো দাবিই জোরালো হয়েছে মাস্কের পোস্টে। এমনকি মাস্ক এও বলে দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে তার নতুন রাজনৈতিক দলের অগ্রাধিকারই হল এপস্টিন ফাইল ফাঁস করা। ফাইলে থাকা নামগুলো প্রকাশ্যে আনা।
মাস্ক নিজের দলের নাম রেখেছেন ‘আমেরিকা পার্টি’। গত ৫ জুলাইয়েই সেই দলের নাম ঘোষণা করেছেন তিনি। ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গেই এ দলকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় দলের সাফল্যের নজির নেই।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে মাস্ক জেফ্রি এপস্টিনের ফাইল প্রকাশ না করায় ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, “ট্রাম্প এপস্টিন ফাইল প্রকাশ না করলে হলে মানুষ কী ভাবে তার ওপর ভরসা রাখবেন?”
এক ব্যবহারকারী জিজ্ঞেস করেন, “এপস্টিন ফাইল প্রকাশ কি আমেরিকা পার্টির অগ্রাধিকার?” উত্তরে মাস্ক ‘১০০’ ইমোজি ব্যবহার করে সম্মতি জানান।
এপস্টিন ফাইলস যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত কেলেঙ্কারির এক গোপন নথি। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এসব নথি প্রকাশের দাবি উঠোছিল। পরে সেই ফাইলের একটি অংশ প্রকাশ্যে এনেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি।
যৌনদাসী কেনাবেচা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌনদাসী সরবরাহের অভিযোগ আছে এপস্টিনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে- এপস্টেইনের পিডো দ্বীপের বিলাসবহুল প্রাসাদে চলত অবৈধ সম্পর্ক। নাবালিকা, এমনকি শিশুদের দিয়েই চালানো হতো যৌন সম্পর্কের কাজ।
এপস্টেইনের ব্যক্তিগত বিমানে করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অতিথিরা সেখানে যেতেন। এপস্টিনর যৌন কেলেঙ্কারিতে ট্রাম্পসহ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, স্টিফেন হকিং থেকে মাইকেল জ্যাকসন পর্যন্ত বিশ্বের প্রভাবশালী সব ব্যক্তির নাম আছে বলেও শোনা গিয়েছিল।
এপস্টিনের নথি অনুযায়ী, তারা প্রত্যেকেই যৌনাচারে যুক্ত ছিলেন। এপস্টিনের ব্যক্তিগত বিমানে করে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশে গেছেন বলেও শোনা যায়।
সেই ফাইল মাস্ক এমন এক সময়ে ফাঁস করার হুমকি দিয়ে পোস্ট দিলেন, যখন মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে) জানিয়েছে—এপস্টিনের মৃত্যু এবং তার সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে “আর কোনও তথ্য প্রকাশ সমীচীন নয়।”
তারা আরও জানায়, এপস্টিনের বাড়ি ও দ্বীপ থেকে জব্দ করা নথি ঘেঁটে কোনও ‘ক্লায়েন্ট লিস্ট’ মেলেনি এবং এপস্টিন প্রভাশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যকমেইল করতেন কিংবা ক্লায়েন্ট তালিকা রাখতেন এমন কোনও প্রমাণও নেই।
তবে ডিওজের এই অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাস্ক একটি ব্যঙ্গাত্মক ছবি শেয়ার করেছেন—একজন ক্লাউন মুখে মেকআপ দিচ্ছে, তাতে লেখা: “দেয়ার ইজ নো এপস্টিন লিস্ট।”
এই তালিকার বিষয়ে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে যান। পাশে দাঁড়ানো অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, “তিনি (এপস্টিন) আত্মহত্যা করেছেন।”
অথচ ট্রাম্প এবং বন্ডি দুইজনই এর আগে এপস্টিনের নেটওয়ার্ক প্রকাশ্যে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতেই এক সাক্ষাৎকারে বন্ডি দাবি করেছিলেন, “তালিকাটি তার ডেস্কেই রয়েছে।”