পেটের অসুখ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম কী জিনিস, চিকিৎসাই বা কী?

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

আইবিএস হলো এক ধরণের গুরুতর পেটের অসুখ

২৫ মিনিট আগে

আপনার সাথে কি কখনো এমন হয় যে, কিছু খেলেই পেট ব্যাথা করে? প্রায়ই পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়? বেশিরভাগ সময় পেট ফুলে থাকে? অস্বস্তি লাগে? তাহলে জানার চেষ্টা করুন আপনার ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম সংক্ষেপে আইবিএস আছে কি না!

আইবিএস হলো এক ধরণের গুরুতর পেটের অসুখ, যা আমাদের হজমতন্ত্র অর্থাৎ শরীরের যে অংশ খাবার ভেঙে শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে, সেই অংশটিতে প্রভাব ফেলে।

সাধারণত অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে গেলে অন্ত্র খুব সংবেদনশীল হয়ে যায়। এ কারণে অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে খাবার হয় খুব দ্রুত যায়, নাহলে খুব ধীরে ধীরে যায়।

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন আইবিএস এ ভোগে।

তবে মেয়েদের মধ্যে এবং এশিয়ান শিশুদের মধ্যে এই রোগের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত নয় থেকে ১২ বছরের শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়।

তবে শিশু যত বড় হয়, উপসর্গ ততই কমে আসে, অনেকের ক্ষেত্রে একেবারেই চলে যায়।

কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি আইবিএস এ আক্রান্ত হয়। তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।

আপনার আইবিএস আছে কিনা সেটা বুঝতে কিছু লক্ষণের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

আইবিএস-এর লক্ষণ

ছবির ক্যাপশান,

আইবিএস-এর লক্ষণ

লক্ষণ:

  • একটানা ডায়রিয়া বা একটানা কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা- টয়েলেটে গেলেই এই পেট ব্যথা কমে।
  • পেট ফেঁপে বেলুনের মতো ফুলে থাকে।
  • ডায়রিয়া হলে হঠাৎ পেট মোচড় দিয়ে টয়লেটের বেগ আসে। মল বেরিয়ে যায়, নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
  • আর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে টানা কয়েকদিন কোন টয়লেট হয়না। টয়লেটে গেলেও পেট সম্পূর্ণরূপে খালি হচ্ছে না বলে মনে হয়।
  • পায়ুপথ থেকে আপনা আপনি শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব বেগ আসে কিন্তু মূত্রাশয় পুরো খালি হয়নি বলে অনুভূত হয়।

এসব উপসর্গ মাঝেমধ্যে দেখা দেয় যা কিনা কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।

এছাড়া অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে

  • বমি বমি ভাব/বমি হওয়া।
  • ক্লান্তি/অলসতা ও অসুস্থ বোধ।
  • বুক জ্বালাপোড়া করা।
  • বার বার ঢেকুর ওঠা।
  • সহবাসের সময় ব্যথা হয়।

আইবিএস-এর লক্ষণগুলো একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে বেশ প্রভাব ফেলে যার কারণে অনেকের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং তারা মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন।

কারণ, রোগ নির্ণয়

আইবিএস কেন হয় এর কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।

সাধারণত যারা অনেক মানসিক চাপে ভোগেন, যাদের পরিবারের কারো আইবিএস আছে এবং যাদের জীবনযাত্রা এলোমেলো- তারা আইবিএসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

অনেকের ক্ষেত্রে চা-কফি-কোমল পানীয়-মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার আইবিএসকে ট্রিগার করতে পারে।

আইবিএস শনাক্তের নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই। সাধারণত রক্ত ও মল পরীক্ষা থেকে চিকিৎসকরা এটা ধারণা করে থাকেন।

আইবিএস হলে একটানা ডায়রিয়া বা একটানা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

আইবিএস হলে একটানা ডায়রিয়া বা একটানা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

চিকিৎসা

সাধারণত কারো যদি একবার আইবিএস হয় তাহলে আজীবন তা থেকে যায়। রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় করার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে এবং ডাক্তারের পরামর্শে লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ খেলে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

যেমন, কারো যদি লক্ষণ হয় কোষ্ঠকাঠিন্য তাহলে তাদেরকে আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন ওটস, রাই, বার্লি, ডাল, গাজর, খোসা ছাড়ানো আলু, তিসির গুঁড়ো - এসব খাবার ভালোভাবে হজমে সাহায্য করে।

অন্যদিকে যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে কম আঁশযুক্ত জটিল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন: বাদামি রুটি এবং বাদামি চাল।

ফলমূল স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও আইবিএস আক্রান্তদের জন্য এটি হিতে বিপরীত হতে পারে, তাই প্রতিদিন ২৪০ গ্রামের বেশি ফল খাওয়া যাবে না।

ফলের ক্ষেত্রে কলা, আপেল, নাশপাতি খাওয়া নিরাপদ।

তবে যেটাই খান এর প্রতিটি উপকরণ যেন টাটকা ও স্বাস্থ্যকর হয়। চেষ্টা করুন ঘরে তৈরি খাবার খেতে। বাসি ও বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে হবে।

তেল-চর্বি-মসলাযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন: কেক, চিপস, বিস্কিট, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, মদ সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে হবে। খেলেও খুব কম।

আইবিএস

ছবির ক্যাপশান,

আইবিএস

প্রতি বেলার খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার আধা ঘণ্টার মধ্যে নাস্তা সেরে ফেলবেন।

দুপুরে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার, সন্ধ্যায় নাস্তা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার তিন ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নেবেন।

কোন বেলার খাবার দেরিতে খাওয়া বা বাদ দেয়া যাবে না। রাতে দেরি করে খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এক কথায় কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে খাবার খান।

সময় নিয়ে, মনোযোগ দিয়ে, ভালোভাবে খাবার চিবিয়ে খান। তাড়াহুড়ো করবেন না।

যেসব খাবার খেলে পেটে সমস্যা হয় বা যেসব খাবার হজমে সমসা হয়, যেমন বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, শিমের বীজ, পেঁয়াজ ও রসুন - এগুলো চেষ্টা করুন এড়িয়ে যেতে।

এর পরিবর্তে ওটস এবং দিনে এক টেবিল চামচ তিসির গুঁড়ো খেয়ে দেখতে পারেন।

আবার আপনার যদি কোন খাবারে পেটে সমস্যা হয়, যেমন দুধ খেলে ল্যাকটোস ইনটলারেন্স হতে পারে, গম বা আটার কিছু খেলে গ্লুটেনের সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে পেটকে কোন চাপ না দেওয়াই ভালো।

দিনে কমপক্ষে আট থেকে ১০ গ্লাস তরল অর্থাৎ দেড় থেকে দুই লিটারের মতো পানি পানের চেষ্টা করুন। সেটা খাবার পানি, জুস বা ক্যাফিনমুক্ত পানীয় হতে পারে। পানি খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দুটি ক্ষেত্রেই জরুরি।

অনেকে পুদিনা বা ক্যামোমাইলের মতো ভেষজ পানীয় খেয়ে উপকার পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যদিও তাদের এই দাবির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

আবার অনেকে টানা কয়েক সপ্তাহ দই খেয়ে উপকার পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। এমন কোন ব্যায়াম যেটায় ঘাম ঝরে। প্রতি রাতে আট থেকে নয় ঘণ্টার ঘুমাতে হবে। রাতের ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।

যদি মানসিক চাপে ভুগে থাকেন তাহলে মানসিক চিকিৎসা নেওয়া বেশ জরুরি।

ডাক্তার।

ছবির উৎস, Getty Images

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

আইবিএস-এর লক্ষণগুলো অনেকের কাছে লজ্জাজনক মনে হয়। তাই ডাক্তারকে বলতেও ভয় পান।

শিশুদের ক্ষেত্রে এমনও হয় যে সে পেট ব্যথার কথা বললে বাবা-মা বিশ্বাস করতে চান না। ভাবেন যে স্কুলে না যাওয়ার বাহানা।

আবার নারীরা এসব বিষয়কে আরো বেশি গোপনীয়, লজ্জাজনক ও বিব্রতকর বলে মনে করেন।

কিন্তু জেনে রাখবেন আইবিএস একটি জটিল রোগ যা চিকিৎসা না করলে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতায় ভুগতে হতে পারে।

তাই যে লক্ষণগুলোর কথা বলা হলো সেগুলো যদি টানা এক সপ্তাহ থাকে, সেইসাথে যদি পায়খানার সাথে রক্ত যায়, পেটের ব্যথায় যদি ঘুম ভেঙে যায়, অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন দুই কেজির মতো কমে যায়, বয়স যদি ৫০-এর বেশি হয় তাহলে দ্রুত একজন গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews