আইনস্টাইনের যে তিনটি তত্ত্ব একরকম ভুল ছিল

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

বোর্ডে লেখার সময় তোলা আইনস্টাইনের একটি ছবি

১৩ মিনিট আগে

তীব্র প্রতিভাধর হলেও আসলে তো একজন মানুষ।

তিনি আপেক্ষিকতার জনক এবং সেই পদার্থবিদ, যিনি মাধ্যাকর্ষণ আর আলোর ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিন্তু এই বিশাল ব্যক্তিত্ব অ্যালবার্ট আইনস্টাইনও কখনও কখনও তার নিজস্ব তত্ত্বগুলি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করতেন।

এই আত্মসন্দেহই তাকে কিছু বড় ভুল করার পথে নিয়ে গিয়েছিল।

'সবচেয়ে বড় ভুল'

সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নিয়ে কাজ করার সময়, আইনস্টাইনের গণনার হিসেব বলছিল যে মহাকর্ষ মহাবিশ্বকে হয় সংকুচিত করবে, অথবা প্রসারিত করবে, যা সেই সময়ের গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গি - মহাবিশ্ব স্থির, তার বিপরীতে ছিল।

তাই ১৯১৭ সালে সাধারণ আপেক্ষিকতা নিয়ে তার গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন মহাকর্ষের প্রভাবকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করার জন্য তার সমীকরণে একটি "মহাজাগতিক ধ্রুবক" সন্নিবেশ করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের স্থিরতাকে সমর্থন করেছিলেন।

এক দশক বা তারও বেশি সময় পরে, বিজ্ঞানীরা নতুন প্রমাণ সংগ্রহ করতে শুরু করেছিলেন যে মহাবিশ্ব মোটেও স্থির ছিল না। আসলে, এটি প্রসারিত হচ্ছিল।

পদার্থবিদ জর্জ গ্যামো পরবর্তীতে তার "মাই ওয়ার্ল্ড লাইন: অ্যান ইনফরমাল অটোবায়োগ্রাফি" বইতে লিখেছেন যে আইনস্টাইন অতীতের দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করেছিলেন যে "মহাজাগতিক শব্দটির প্রবর্তন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল"।

বেগুনি ও গোলাপি রঙে মহাবিশ্বে তারকা ও নক্ষত্রের ছবি

ছবির উৎস, NASA/Esa/J Merten/D Coe

ছবির ক্যাপশান,

বিজ্ঞানীরা ১৯২৯ সাল থেকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করেন যখন তারা দেখেন, এটি আসলে প্রসারিত হচ্ছে, স্থির নয়

কিন্তু এখানে আরও একটি মোড় আছে।

বিজ্ঞানীরা এখন প্রমাণ পেয়েছেন যে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হচ্ছে একটি রহস্যময় "অন্ধকার শক্তি" এর কারণে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে আইনস্টাইনের মহাজাগতিক ধ্রুবক, যা প্রাথমিকভাবে তার সমীকরণে মাধ্যাকর্ষণকে প্রতিহত করার জন্য প্রবর্তিত হয়েছিল, সেটিই আসলে এই অন্ধকার শক্তির জন্য দায়ী হতে পারে আর তাহলে তার তত্ত্বে এমন ভুল হতো না।

দূরবর্তী ছায়াপথের উন্মোচন

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আরেকটি ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: একটি বিশাল বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র তার পিছনের কোনও দূরবর্তী বস্তু থেকে আসা আলোকে বাঁকিয়ে দেবে, কার্যকরভাবে একটি বিশাল ম্যাগনিফাইং লেন্স হিসাবে কাজ করবে।

আইনস্টাইন ভেবেছিলেন যে মহাকর্ষীয় লেন্সিং নামে পরিচিত প্রভাবটি দেখতে খুব ছোট হবে। তার গণনা প্রকাশ করার ইচ্ছাও তার ছিল না, যতক্ষণ না আরডব্লিউ ম্যান্ডল নামের একজন চেক প্রকৌশলী তাকে সেটা প্রকাশ করতে রাজি করান।

সায়েন্স জার্নালে ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত তার নিজের গবেষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে আইনস্টাইন সম্পাদককে লিখেছিলেন: "আমার ছোট্ট প্রকাশনাটির পিছনে আপনার সহযোগিতার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, যেটি মিস্টার ম্যান্ডল আমার কাছ থেকে বের করেছিলেন, এর মূল্য খুব সামান্যই, তবে এটি সেই লোকটিকে খুশি করেছিল।"

তবে ওই ছোট্ট প্রকাশনায় যা ছিল, তার মূল্য জ্যোতির্বিদ্যার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এটি মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার হাবল টেলিস্কোপকে পৃথিবীর কাছাকাছি বিশাল ছায়াপথের গুচ্ছ দ্বারা বিবর্ধিত দূরবর্তী ছায়াপথগুলির বিশদ বিবরণ ধারণ করার সুযোগ করে দেয়।

নীল হর্সশু গ্যালাক্সি

ছবির উৎস, NASA/Esa

ছবির ক্যাপশান,

মহাকর্ষীয় লেন্সিং হাবল টেলিস্কোপকে দূরবর্তী নীল হর্সশু গ্যালাক্সি ধারণ করার সুযোগ দিয়েছে

'ঈশ্বর পাশা খেলেন না'

আইনস্টাইনের কাজ, যার মধ্যে ১৯০৫ সালে আলোকে তরঙ্গ এবং কণা উভয়ই বর্ণনা করে লেখা গবেষণাপত্রটিও রয়েছে, পদার্থবিদ্যার একটি উদীয়মান শাখার ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করেছিল।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স ক্ষুদ্র উপ-পরমাণু কণার অদ্ভুত, বিপরীত-স্বজ্ঞাত জগতের বর্ণনা দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, একটি কোয়ান্টাম বস্তু "সুপারপজিশন"-এ বিদ্যমান, যা পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ না করা পর্যন্ত একাধিক অবস্থায় থাকে, যেখানে একটি মান নির্ধারিত হয়।

পদার্থবিদ এরউইন শ্রোডিঙ্গার তার প্যারাডক্সে এবিষয়টিকে দারুণভাবে চিত্রিত করেছিলেন, যেখানে একটি বাক্সের ভিতরে একটি বিড়ালকে একই সাথে জীবিত এবং মৃত হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যতক্ষণ না কেউ সেটা পরীক্ষা করার জন্য বাক্সের ঢাকনা খুলে দেয়।

এরউইন শ্রোডিঞ্জারের প্যারাডক্সটি একটি বাক্সের ভিতরে বিড়াল থাকার ধারণা ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

এরউইন শ্রোডিঞ্জারের প্যারাডক্সটি একটি বাক্সের ভিতরে বিড়াল থাকার ধারণা ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল

আইনস্টাইন এই অনিশ্চয়তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি ১৯২৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স বর্নকে লিখেছিলেন যে "[ঈশ্বর] পাশা খেলেন না।"

বরিস পোডলস্কি ও নাথান রোজেনের সাথে করা আইনস্টাইনের ১৯৩৫ সালের গবেষণাপত্রে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, যদি সুপারপজিশনে থাকা দু'টি বস্তুকে কোনওভাবে সংযুক্ত করার পরে আলাদা করা হয়, তাহলে প্রথম বস্তুটিকে পর্যবেক্ষণকারী এবং এটির একটি মান নির্ধারণকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিতীয় বস্তুর জন্যও একটি মান নির্ধারণ করবেন, দ্বিতীয় বস্তুটি কখনও পর্যবেক্ষণ করা ছাড়াই সেটি হবে।

যদিও এই চিন্তাভাবনার পরীক্ষাটি কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের খণ্ডন হিসাবে করা হয়েছিল, এটি আসলে কয়েক দশক পরে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটি মূল ধারণার বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল, যাকে আমরা এখন এনট্যাঙ্গলমেন্ট বলি। এটি দাবি করে যে দু'টি বস্তু একসাথে সংযুক্ত করা যেতে পারে, এমনকি যদি তারা অনেক দূরেও থাকে।

তাই মনে করা হয়, আইনস্টাইনের তত্ত্বগুলি উজ্জ্বল বুদ্ধিদ্বীপ্তই ছিল, এবং তিনি যে বিষয়গুলিতে মাঝে মাঝে ভুল করতেন, সেগুলির মধ্য দিয়েও অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েছিলেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews