ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
লিওনেল মেসি- বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ
৩৯ মিনিট আগে
সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্স। গমগম করছে গোটা সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চ। প্রায় এক ঘণ্টা আগে থেকে অনেক সাংবাদিক বসে আছেন। এমন সব ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে যেখানে দেখা গেছে কানায় কানায় পূর্ণ। আসবেন লিওনেল মেসি।
সংবাদ সম্মেলনে মেসি ছিলেন হাস্যোজ্বল। সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু। বিশ্বব্যাপী আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মতোই মেসিও ছিলেন নির্ভার।
চাপ নিচ্ছেন না, বিশ্বকাপের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফেভারিট নয়।’
তাহলে মেসির ফেভারিট কারা?
‘ব্রাজিল, স্পেন, ইংল্যান্ড’।
ব্রাজিল প্রতিবেশি হিসেবে, স্পেনের প্রতি লিওনেল মেসির আলাদা টান রয়েছে। ফুটবলারদের জন্য, বার্সেলোনার জন্য এবং বাস্তবিক স্কোয়াড অনুযায়ী মেসির প্রেডিকশন ইংল্যান্ড ভালো করতে পারে।
তবে এসব কথায় সমর্থকদের মন ভরবে না, তারা জানেন মেসি কী চাইছেন, নিজের ‘ঘোষিত শেষ বিশ্বকাপে’।
‘লিওনেল মেসির হাতে শিরোপা উঠলে বিশ্বকাপ পরিপূর্ণতা পাবে’- এই তত্ত্বেও বিশ্বাস করেন কেউ কেউ।
তাতে তার আর্জেন্টাইন হওয়ার প্রয়োজন হয় না, অনেকেই আর্জেন্টিনায় জীবনেও যানওনি, তারাও লিওনেল মেসির হাতে একবার কাপ দেখতে চান।
বিশ্বকাপে গোটা বিল্ড-আপ, শিরোপার যত বিজ্ঞাপন, বিখ্যাত ব্যাগ নির্মাতা কোম্পানি লুই ভুটনের স্যুটকেসের বিজ্ঞাপনের ছবিতে মেসি ও রোনালদোর থাকা।
সব মিলিয়ে মেসিকে একটা ‘প্রোটাগনিস্ট’ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে এই বিশ্বকাপের।
মেসি নিজে নির্ভার। তার কথাবার্তায় চাপের বিন্দুমাত্র রেশ নেই। কিন্তু প্রত্যাশা ধীরে ধীরে ভার বাড়াতে শুরু করতে মেসির পিঠে। এটা কেবলই শুরু।
বিবিসি স্পোর্টের শ্যামুন হাফেজ এখন আছেন কাতারের দোহায়।
তিনি একটি আর্টিকেলে লিখেছেন, “দোহায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে আর্জেন্টিনার জার্সি। আর সবচেয়ে কমন বিষয় তাদের মধ্যে একটি দুটি বাদে বেশিরভাগেরই পিঠে লেখা মেসি – ১০।”

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
লিওনেল মেসি তার শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনার সাথে সম্পর্কের পাট চুকিয়ে আসেন ফ্রান্সের প্যারিসে
মেসি বলছেন তিনি ভালো বোধ করছেন।
“এটা একটা দারুণ ব্যাপার। যে আর্জেন্টিনার হয়েও এতো মানুষ আমাদের খেলা দেখতে আসেন আমাকে ভালোবাসেন। আমি চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব ভালো থাকার এবং তীব্রতা অনুভব করছি খেলার”।
প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করার কথা বলেছেন লিওনেল মেসি।
গত বছর লিওনেল মেসি তার শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনার সাথে সম্পর্কের পাট চুকিয়ে আসেন ফ্রান্সের প্যারিসে, পিএসজিতে।
সেবার ফরাসী লিগে ৩৪ ম্যাচ খেলে তিনি ১১টি গোল করেছিলেন, ১৫টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন।
যেকোনও ফুটবলারের জন্য এটা ভালো একটা নাম্বার।
কিন্তু যেহেতু তিনি লিওনেল মেসি- এই পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছিল, মেসি যেন তার সোনালী দিন পেছনে ফেলে এসেছেন।
এই সময়ের প্রভাব পড়েছে মেসির ব্যালন ডি অরে।
ঠিক ২০২১ সালে যেই মেসি ব্যালন ডি অর বিজয়ী, ২০২২ সালে তিনি ত্রিশ জনের তালিকাতেও জায়গা পাননি।
মেসি এবারে ফিরে এসেছেন। এর আগে গোটা মৌসুমে যা গোল করেছিলেন, এবারে পাঁচ মাসের খেলাতেই তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি।
ডিফেন্ডারদের পাশ কাটাতে যে তীব্রতা ও আকাঙ্খা তিনি প্রকাশ করছেন মাঠে দেখে মনে হবে ২৩-২৪ বছর বয়সী একজন উঠতি তারকা।
অবশ্যই ওই বয়সে মেসি চারটি ব্যালন ডি অরের মালিক।
ফরাসী ফুটবল সাংবাদিক অ্যাডাম হোয়াইট লিখেছেন, “মেসি এখন প্যারিসে নিজেকে থিতু করেছেন, তিনি খুশি এবং প্যারিসের জীবন উপভোগ করছেন। পিএসজিতে তিনি তিন অথবা চার বছরও থাকতে পারেন।”
নিশ্চিতভাবেই মেসির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম চলছে এখন। শেষ বিশ্বকাপ। ফর্মটাও সময়মতো ফিরে পেয়েছেন। মেসি জানেন, আর্জেন্টিনার হয়ে কাতারে এই বিশ্বকাপ জয় তার ক্যারিয়ারের সেরা জয় হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। হয়তো তখন তার ‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার’ খেতাব পোক্ত হবে।

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
চার চারটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন লিওনেল মেসি
কাতার বিশ্বকাপ নানা সমালোচনায় বিদ্ধ ছিল মাঠে খেলা গড়ানোর আগে।
এখনও ইংল্যান্ডের এলজিবিটিকিউ- সমর্থনে ‘ওয়ানলাভ’ আর্মব্যান্ড না পরা, ইরানের ফুটবলারদের জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়া এসব বিষয় নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে খেলার চেয়ে।
এই আলোচনা শুধু এবং শুধুমাত্র ফুটবলে যদি কেউ নিয়ে আসতে পারেন সেটা হবেন লিওনেল মেসি।
মেসির গোটা ফোকাস ফুটবল নিয়ে এবং তিনি পারবেন গোটা বিশ্বের যারা ফুটবল বিশ্বকাপ অনুসরণ করছেন তাদের ফোকাসও ফুটবলে নিয়ে আসতে।
কারণ মেসি ৩৫ বছর বয়সে হঠাৎ করেই আবারও বিশ্বসেরাদের মতো খেলতে শুরু করেছেন।

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
মেসি এখন কাতারের মালিকানাধীন ক্লাব পিএসজিতে খেলেন
সৌদি আরব, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড- এই তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই আর্জেন্টিনার খেলার ধরন, মেসির ফর্ম, বিশ্বকাপের গতিবিধি অনেকটাই বোঝা যাবে।
মেসি এখন কাতারের ধনকূবেরের মালিকানাধীন ক্লাব পিএসজিতে খেলেন। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক ফুটবলার নানাভাবে সমালোচনায় মাতলেও মেসি এখনও এনিয়ে কোনও কথা বলেননি।
এই ক্লাবের মালিকরাও নির্ভার থাকতে পারেন। কারণ তাদের অন্তত তিনজন কর্মীর এবার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মেসি তো আছেনই, ব্রাজিলের নেইমার ও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপেও পিএসজিতেই খেলছেন, অনেক দিন ধরে।
তবে সামগ্রিক যে ইঙ্গিত তাতে মেসির হাতে কাপ ওঠাকেই বিশ্বকাপের সফলতা মনে করা হবে, লিওনেল মেসি ক্যারিয়ার এমন উদযাপিত ও বর্ণাঢ্য যে তার হাতে বিশ্বকাপ উঠবে না সেটা নিয়ে অনেক সমর্থকই আক্ষেপে পুড়বেন।
চার চারটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন লিওনেল মেসি।
এখনও পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার কোনও বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে গোল করতে পারেননি।
তেইশটি শট নিয়েছেন তিনি গোলে, তার সাথেই আছেন নিজের সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
রোনালদোও ২৫টি শট নিয়ে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কোনও গোল করতে পারেননি।
বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স হিসেব করলে, সর্বকালের সেরাদের যে তালিকা সমর্থকরা ও বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করে থাকেন, সেখানে লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পারফরম্যান্স বেশ মলিন।
রোনালদোর পর্তুগাল হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের কথা বললেও পুরোপুরি বিশ্বাস করা কঠিন, যতদিন না শিরোপা হাতে নেয়।
কিন্তু আর্জেন্টিনায় মেসি বিশ্বকাপ না জিতলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনায় লিওনেল মেসির জন্য তার সমকক্ষ কেউ হয়ে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে।