আজ সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে লিখবো না। আজকে যা লিখবো, সেটাকে বলা যেতে পারে Random Thoughts. অর্থাৎ বিক্ষিপ্ত চিন্তা। বৈশাখ মাসে গরম পড়বে, এটিই তো স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘দারুণ অগ্নিবানে’। কিন্তু আমি জানি না, তার আমলে কি তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি উঠেছিল? রবীন্দ্রনাথের কথা বাদ দেওয়া যাক। আমার স্মৃতিতেও ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি শুনিনি। করোনার ঠিক আগের বছর আমি ৪ মাসের জন্য সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া ছিলাম। সেখানে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ফলে দাবানল ঘটেছিল। সেই দাবানল নির্বাপিত করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা তো ছিলই, অনেক রাস্তা ঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনি দুইটি রাস্তা বন্ধ করার সাক্ষী আমি। সিডনি থেকে ক্যানবেরা যাচ্ছিলাম। ৩০০ কিলোমিটারের পথ। কিন্তু দুটি রাস্তা বন্ধ থাকার ফলে আমাদের অনেক ঘুরে যেতে হয়েছিল। ফলে অতিরিক্ত ১৮০ কিলোমিটার পথ আমাদের ড্রাইভ করতে হয়েছিল। বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো যে, এখানে দাবানল ঘটার মতো পাহাড়-পর্বত বা ঘন অরণ্য নাই। শনিবার সরকার তীব্র তাপদাহের জন্য সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে। অভিভাবক ফোরামের দাবিতেই এটি করা হয়েছে। আরো ৩ দিন আগেই করা উচিত ছিল। যাই হোক, বেটার লেট দ্যান নেভার।

॥দুই॥
এর মধ্যে দুই একটি ঘটনা ঘটে গেছে, যা অত্যন্ত সিরিয়াস। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যাদেরকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বলে দাবি করা হয় তারা এই বিষয় নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ। প্রথম পৃষ্ঠায় ৩ কলাম শিরোনাম দিয়ে এই সংবাদটি ছেপেছে। গত ১৬ এপ্রিল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এই সংবাদটির শিরোনাম, ‘ইসরাইল থেকে ঢাকায় দুটি বিমানের নজিরবিহীন অবতরণ’। খবরে বলা হয়েছে যে, গত ৭ এপ্রিল ফ্লাইট নম্বর ঘ৮৮০৬ বিমানটি ১৯২৩ ঘণ্টা উড়ে সরাসরি ইসরাইলের সাবেক রাজধানী তেলআবিব থেকে ঢাকা অবতরণ করে। একই দিনে ঐ বিমানটি ঢাকা ছেড়ে যায়। আবার ১১ এপ্রিল আরেকটি ইসরাইলি বিমান, ফ্লাইট নম্বর ঘ৮৮৪৮ (এনসিআর৮৪৮) ১৯৫৪ ঘণ্টা উড়ে সরাসরি তেলআবিব থেকে ঢাকায় অবতরণ করে। এই বিমানটি তার পরদিন ঢাকা ছেড়েছিল। অবাক ব্যাপার হলো, এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোনো কিছু প্রকাশ করা হয়নি। দৈনিক ইনকিলাবে এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার কোনো প্রতিবাদও করেনি। বোঝা যাচ্ছে, খবরটি সর্বাংশে সত্য।

অনেকগুলি ইসলামী দল এই খবরে সরকারের বক্তব্য দাবি করেছে। তাদের দাবিটি কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, বাংলাদেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাহলে তাদের বিমান কীভাবে ঢাকায় নামে? ঢাকায় তারা কোনো ট্রানজিটেও আসেনি। তাহলে কেন মুসলমানদের দুশমন ইসরাইলি বিমানকে জনগণের অজ্ঞাতসারে ঢাকায় নামতে দেওয়া হলো? এর পেছনে কি কোনো রহস্য লুকায়িত রয়েছে? এর আগে আমাদের পাসপোর্টে লেখা থাকতো, ‘সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শুধুমাত্র ইসরাইল ছাড়া’। এখন যারা পাসপোর্ট রিনিউ করছেন বা নতুন পাসপোর্ট বানাচ্ছেন, তাদের পাসপোর্টে ইসরাইলের কথা উল্লেখ নাই।
এখানে আমি দুটি পাসপোর্টের নমুনা দিলাম। একটি ইস্যু করা হয়েছে ২০১৮ সালে, সেখানে লেখা হয়েছে, THIS PASSPORT IS VALID FOR ALL COUNTRIES OF THE WORLD EXCEPT ISRAEL.. অর্থাৎ ইসরাইল ছাড়া সব দেশের জন্যই এই পাসপোর্টটি বৈধ। আরেকটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে ২০২৩ সালে। এই পাসপোর্টে লেখা হয়েছে, THIS PASSPORT IS VALID FOR ALL COUNTRIES OF THE WORLD.. অর্থাৎ পৃথিবীর সব দেশের জন্যই এই পাসপোর্ট বৈধ। তাহলে ব্যাপারটি কী দাঁড়াচ্ছে? আমি-আপনি কি অতঃপর ইসরাইল ও তাইওয়ান যেতে পারবো? যদি যেতে পারি তাহলে আমাদের ভিসা দেবে কে? ঢাকায় তো ইসরাইল বা তাইওয়ানের কোনো অফিস নাই। দিল্লিতে আছে। দিল্লিতে গিয়ে কি সেই ভিসা নিতে হবে? আর দিল্লি কি বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইল ও তাইওয়ানে ভ্রমণ করার ভিসা দেবে? যদি দেয়ও তাহলে ইসরাইলের সাবেক রাজধানী তেলআবিব অথবা বর্তমান রাজধানী জেরুজালেম কি আমাদেরকে সেখানে নামতে দেবে?

এসব বিষয় অত্যন্ত রহস্যময় এবং ধোঁয়াশে। এই ধরনের অস্পষ্টতা এবং রহস্যময়তা থেকেই অনেক গুজবের সৃষ্টি হয়। ইসরাইলের দুটি বিমান ঢাকা অবতরণ করলো। তাহলে সেটি নিয়ে এত ঢাক ঢাক গুড় গুড় কেন? বাতাসে অনেক কথা ভেসে বেড়ায়। কান পাতলেই সেগুলো শোনা যায়। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে দৈনিক ইনকিলাব এসব হাওয়া থেকে পাওয়া খবরে বিশ^াস করি না এবং সেই সব খবর রটিয়েও বেড়াই না। তবে সরকারের উচিত এসব রহস্যের পর্দা উন্মোচন করা।

॥তিন॥
আরেকটি বিষয় আমার কাছে অত্যন্ত মতলবি মনে হয়েছে। সেটি হলো, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে। মির্জা ফখরুল গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির বিশাল জনসভায় পুলিশী অভিযানের পর ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার হন। প্রায় ৪ মাস পর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। আমি জানি, তার ঘাড়ের রগে একটি অসুখ রয়েছে। এছাড়াও তিনি আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েলস সিনড্রমের রোগী। এটি এমন একটি অসুখ যা সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। কোনো সময় অসম্ভব কোষ্ঠ কাঠিন্য (কনস্টিপেশন), আবার কোনো সময় লুজ মোশন অর্থাৎ ডাইরিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়। এই অসুখে কোনো মানুষের মৃত্যু সংবাদ শোনা যায়নি। কিন্তু এই অসুখ একটি মানুষের যোগ্যতা এবং চলাচল (মোবিলিটি) মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।

কারাগারে মির্জা ফখরুলের এই দুটি অসুখের উপযুক্ত চিকিৎসা হয়নি। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ড. শামসুল আরেফিনসহ অন্যান্য ডাক্তারকে দেখিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অতঃপর সিঙ্গাপুর যান। তার সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগম। শুনেছি যে, রাহাত আরা বেগমও নাকি বেশ অসুস্থ। যাই হোক, সম্ভবত সিঙ্গাপুরে ১৭ দিন চিকিৎসার পর তারা দুজনই ঢাকা ফেরেন।

অথচ, এরমধ্যে গুজব রটানো হয় যে, মির্জা ফখরুলকে নাকি মহাসচিবের পদ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো মিডিয়াতে বলা হয়েছে যে, মির্জা ফখরুল নাকি নিজেই পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন। আরো অবাক করার কথা হলো, ব্যাপারটি ঘটেছে ঐ প্রবাদ বাক্যের মতো। চিল কান নিয়ে গেছে শুনে চিলের পেছনে দৌড়ানো। একাবারও কানে হাত দিয়ে দেখা হয়নি যে কানটি ঠিক জায়গায় আছে কিনা। এ ব্যাপারে ইউটিউবেও একটি ফুটেজ দেখলাম।

॥চার॥
গুজব রটানো হয়েছে যে, ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাকি এখন বিএনপির নীতি সম্পর্কে ঢাকায় সিদ্ধান্ত পাঠাচ্ছেন। এই ব্যক্তিটি কে? মানুষের জানামতে, ভারতে এই মুহূর্তে স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য রয়েছেন। কিন্তু এক শ্রেণীর প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে যে ইশারা দেওয়া হচ্ছে সেই ইশারা ফলো করলে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় সালাউদ্দিন আহমেদের দিকে। সালাউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। অবৈধভাবে ভারতের মেঘালয়ে গমনের অভিযোগে ভারত সরকার তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। সেই অভিযোগ থেকে মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তিনি নিজে বারবার বলছেন যে, দেশে ফেরার জন্য তিনি ব্যাকুল প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন। কিন্তু পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে তার দেশে ফিরতে অস্বাভাবিক বিলম্ব হচ্ছে।

এখানে মির্জা ফখরুলকে টানা হচ্ছে কেন? যারা খবর রাখেন তারা জানেন যে, মির্জা ফখরুল বিএনপির র‌্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইলের আস্থাভাজন। এছাড়া বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের পরেই জনগণের মনে মির্জা ফখরুলের স্থান। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি রীতিমত জননেতায় রূপান্তরিত হয়েছেন। এই সময় দৃশ্যপট থেকে তার অনুপস্থিতি জনগণকে বিভ্রান্ত করবে। এই সরকারের ওপর দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের আস্থা নাই। তারপরেও সরকারকে অপসারণ করা যাচ্ছে না কেন? সেটি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু এই সময় ফখরুল ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারলে সেটি শাসক গোষ্ঠির লাভ।

॥পাঁচ॥
একটি অবাক ব্যাপার হলো এই যে, যারা নিজেদের মেইনস্ট্রিম পত্রপত্রিকা বলে দাবি করে তারা বিএনপির ব্যর্থতা, বিএনপি কি সত্যিই ‘ফাইট’ করার যোগ্য, বিএনপি কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, এই ব্যর্থতার দায় কার ওপর, নিষ্ফল আন্দোলন বিএনপি কর্মীবৃন্দকে হতাশ করেছে ইত্যাদি হরেক রকমের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আসলে বিএনপি কি ব্যর্থ হয়েছে? নাকি এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে দৃশ্যত সনাতনী আন্দোলন দিয়ে আওয়ামী সরকারকে অপসারণ করা অসম্ভব। বর্তমানে আমরা কোন ধরনের সরকারের অধীনে বাস করছি? এর উত্তর দিয়েছেন দুই ব্যক্তি। একজন ডেইলি স্টারের মালিক ও সম্পাদক মাহফুজ আনাম। আরেকজন আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিশটিংগুইশড প্রফেসর আলী রিয়াজ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর আলী রিয়াজ ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিশাল একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধের শিরোনাম, The rise
of personalistic autocracy: what
should we do? অর্থাৎ ব্যক্তি স্বৈরতন্ত্রের উত্থান: আমাদের কী করণীয়? ডেইলি স্টারের ১২ জানুয়ারি সংখ্যায় মাহফুজ আনাম লিখেছেন একটি বিশাল উপসম্পাদকীয়। শিরোনাম, From one party to one person/What was de
facto is now de jure. অর্থাৎ এক দল থেকে এক ব্যক্তিতে/ যেটি ছিল অলিখিত সেটি এখন লিখিত।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের বোঝার জন্য লেখার এই দুটি শিরোনামই যথেষ্ট। আঁটি ভেঙ্গে শাঁস দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারপরেও যদি পাঠকদের অধিকাংশ আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সময় মতো বলবো, ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু আপনারা সেক্ষেত্রে প্রশ্ন করতে পারেন যে, এই অটোক্র্যাসির অপসারণ করা সম্ভব কীভাবে? উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিলে চলবে না। যত দোষ সব নন্দ ঘোষ। বিএনপি বা মির্জা ফখরুলকে নন্দ ঘোষ ঠাওরালে চলবে না। কীভাবে স্বৈরাচারের অবসান হতে পারে তার সম্ভবত সঠিক পদ্ধতি বাতলিয়েছেন অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি দৈনিক সমকাল তার যে লেখা প্রকাশ করেছে তার শিরোনাম, ‘স্বৈরাচার হটাতে নির্বাচনে কুলাবে না’। প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম ৯০ বছর বয়সেও বেঁচে আছেন। তার লেখার শিরোনামেই বোঝা যায়, ভেতরে কী আছে। তারপরেও পাঠক যদি চান তাহলে বারান্তরে তার লেখার অংশবিশেষ উদ্ধৃত করবো।

Email: [email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews