কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি : দখল, দূষণ আর অব্যবস্থাপনার ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ৫২ টি খাল। ১৩টি খাল সচল থাকলেও এগুলোর অবস্থা করুণ। এক সময় এই খালগুলো দিয়ে বড় বড় পণ্যবাহী নৌকার সমাগম আর বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠলেও বাকি ৩৯টি খাল ভূমিদস্যুরা ময়লা-আবর্জনা ও বালু ভরাট করে দখল করেছে। দু’পাশে অবৈধ দখল ও খালের তলদেশে পলি জমে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খালগুলো এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
জানা যায়, একসময় এই খালগুলোর পানিতে গোসল করতেন খালপাড়ের বাসিন্দারা। বর্ষাকালে এই খাল দিয়ে চলাচল করতো বাহারি নৌকা। কেরানীগঞ্জসহ শহরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা দিয়ে পণ্য এনে এই খালের টান বাজার এলাকায় নৌকা বেড়াতো। এখন আর খালেগুলোর আগের জৌলুস নেই। খালগুলো এখন মৃত প্রায়। এই খালে এখন আর নৌকা চলে না। গোসলও করে না কেউ। আরো জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর শাখা শুভাঢ্যা খাল দিয়ে এক সময় সরাসরি মুন্সীগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এখন তা রূপকথা গল্পের মতো মনে হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ খাল বর্তমানে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা, তেঘরিয়া, আবদুল্লাহপুর, রামেরকান্দা খালগুলোর দু’পাড়ের বেশির ভাগ অংশ অবৈধভাবে দখল করে প্রভাবশালীরা স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছেন। আবর্জনা ও বালু ভরাটের ফলে ৬০ ফুট প্রশস্ত খালগুলো এখন জলাবদ্ধতার ও ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
অপরদিকে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য খালের পাড়ে ফেলে রাখার ফলে দুর্গন্ধ ও মশা-মাছিসহ বিভিন্ন রোগজীবাণুর প্রজননের সহায়ক হচ্ছে। খালে পানি চলাচল না করায় কচু ও বিভিন্ন আগাছায় ভরে গেছে খালগুলোতে। খালপাড়ে গেলেই যে কারও নজরে পড়বে বিভিন্ন পোকামাকড়সহ বিষাক্ত সাপ। এছাড়া ওই এলাকার কৃষকরা জমিতে চাষাবাদে হুমকির মুখে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কেরানীগঞ্জের এসব খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। খালের জায়গা ভরাট করে বাড়ি-ঘর ও মার্কেট পর্যন্ত নির্মাণ করেছে। এখন দেখলে মনে হয় এখানে কোনোদিন খালই ছিল না। প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছে না। আরও অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্ড ভিত্তিক ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় বাসিন্দারা খালগুলোতে বাধ্য হয়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ফলে খালের পঁচা পানি, নোংরা পরিবেশ ও ময়লা ভাগাড়ে এলাকায় ক্রমাগত মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
শুভাঢ্যা এলাকার বয়স্ক শাহিন মোল্লা বলেন, ৭০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আগে খালে খরস্রোতা পানি প্রবাহিত হতো। নষ্ট হয়ে যাওয়া এই খাল এখন শুধুই অতিত।
আবদুল্লাহ নামে এক যুবক বলেন, খালের বিভিন্ন অংশে দখলবাজরা দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। তাই খালগুলো পুনরুদ্ধার ও বাঁচানোর দাবি জানাই। কর্তৃপক্ষের অযত্ন ও অবহেলায় খালগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিণত হলেও দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, ইতিমধ্যে খালগুলো খননের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। খালের আশেপাশে সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে। অবৈধ স্থাপনাকারী যত শক্তিশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, অতি দ্রুত খালগুলো উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ এলাকাবাসী সুবিধার্থে সকল সু-ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।