সারা দেশে একের পর এক ঘটছে অগ্নিদুর্ঘটনা। রাজধানীতে অধিকাংশ সময় পানিস্বল্পতার কারণে আগুন নেভাতে সমস্যায় পড়ছেন ফায়ার ফাইটাররা। সরু রাস্তায় পানি বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করতে বাধছে বিপত্তি। নগরীর রাস্তা, কারখানা, হোটেল, শপিং মলে নেই ফায়ার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা। এতে আগুনে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। দেশের অনেক উপজেলায় এখনো নেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। ফলে আগুন লাগলে আরেক উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেবা দিতে ছুটে আসছেন। জরুরি পরিস্থিতিতে রাস্তায় নষ্ট হচ্ছে সময়। রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় সরু রাস্তায় পানি বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করতে না পারা, বাড়ির নিচে রিজার্ভ ট্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত পানি না থাকা এবং নগরীর বিভিন্ন স্থানে থাকা জলাধারগুলো ভরাট করে ভবন নির্মাণ করায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার সময় পানির সংকটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে পুড়ে মারা যান ৭১ জন। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পানির সংকটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। চাপা গলিতে ঢুকতে পারছিল না পানি বহনকারী গাড়ি। বিভিন্ন বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। দূর থেকে পাইপ টেনে পানির ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। এ ছাড়া ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করেও পানি এনে আগুন নেভাতে দেখা গেছে। নগরপরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিকাংশ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা। যেখানে অপরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে ওঠে, সেখানে ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো রাখা হয় না বা মানা হয় না। কর্তৃপক্ষ চাইলে এ ব্যবস্থা করা জটিল কিছু না। নগরে যে মানুষগুলো থাকে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি। একটা মানুষের জীবনের মূল্য অনেক। সে জীবন রক্ষা করার জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে অনেক ছাড় দিতে হবে। অনেক কঠোর হতে হবে। কোনো নিয়মই সাধারণ মানুষ এমনিতে মানে না। তাকে মানাতে হয়। সমষ্টিগত ভালোর জন্য রাষ্ট্রকে সে জায়গাটা তৈরি করতে হয়।’ নগরপরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি পরিকল্পিত নগরীতে আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন রাস্তার কাছে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ বসানো থাকে। যা সরাসরি পানির পাম্পের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া থাকে এবং এতে পানির অতিরিক্ত প্রেসার দেওয়া থাকে। কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পৌঁছামাত্রই হাইড্রেন্টের বাল্ব খুলে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাবে আর সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে বেশি গতিতে পানি বেরিয়ে আসবে। যা দিয়ে সহজে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহর পরিকল্পিতভাবে গড়ে না উঠলেও সরকার ও নগরের দায়িত্বশীলরা চাইলে পুরো ঢাকা শহরজুড়ে ‘স্ট্রিট হাইড্রেন্ট’ বসানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীলদের সদিচ্ছা। চারপাশে নদী বেষ্টিত ঢাকা শহরে পানির অভাবে আগুন নেভাতে না পারার মতো ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে মনে করছেন নগরপরিকল্পনাবিদরা। দেশের অনেক উপজেলায় নেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ৪৯৩টি ফায়ার স্টেশন আছে। স্টেশন নেই এমন জায়গায় আগুন লাগলে আরেক উপজেলা থেকে ছুটে আসছে গাড়ি। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দায় এড়াতে পারে না। পুরনো লাইন ছিদ্র হয়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় বিদ্যুৎ থেকে দুর্ঘটনা ঘটে।

তাই ভবন নির্মাণে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে সচেতন হতে হবে। ভবন নির্মাণ করার সময় মানসম্পন্ন কাঁচামাল ও পণ্য ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করতে হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তবেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো যাবে। নয়তো এভাবে প্রাণহানি মেনে নেওয়া যায় না। যারা আহত হয়ে মৃৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে তাদের কষ্ট সহ্য করা যায় না। এ রকম পরিস্থিতিতে আর কেউ যেন না পড়ে সে জন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews