স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার জন্য মহাকাশ আবহাওয়াকে দায়ী করেছে স্পেসএক্স। ছবি: রয়টার্স
স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার জন্য মহাকাশ আবহাওয়াকে দায়ী করেছে স্পেসএক্স। ছবি: রয়টার্স
সূর্যের কার্যকলাপের কারণে ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট মহাকাশ থেকে খসে পড়ছে– এমনই বলছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র বিজ্ঞানীদের মতে, সৌর কার্যকলাপের কারণে স্পেসএক্স-এর বিভিন্ন স্টারলিংক স্যাটেলাইট ‘ধারণার চেয়ে দ্রুত’ পৃথিবীতে পড়ছে।
সৌর কার্যকলাপ কিভাবে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা বিভিন্ন স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কালের ওপর প্রভাব ফেলছে তা খতিয়ে দেখার পর এমন তথ্য পেয়েছে নাসার ‘গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার’-এর গবেষণা দলটি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কবলে পড়ছে মাস্কের এসব স্যাটেলাইট। সৌরঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, এর ফলে চাপ বাড়ছে স্যাটেলাইটের ওপর। ফলে দ্রুত পৃথিবীতে এসে পড়ছে এসব স্যাটেলাইট।
গবেষণাটি সূর্যের ১১ বছরের কার্যকলাপ চক্রের শীর্ষে পৌঁছানোর সঙ্গে মিলে যায়, যা ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’ নামে পরিচিত।
সূর্যের ১১ বছর মেয়াদী একটি চক্র আছে। এ চক্রের শেষে সূর্য সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এ সময় তীব্র সূর্যকিরণ ও সৌরঝড় ওঠে, যেটি সোলার ম্যাক্সিমাম বা সূর্যের সর্বোচ্চ সক্রিয়তা নামে পরিচিত, যা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইট ও অন্যান্য প্রযুক্তির ওপর প্রভাব ফেলে।
গবেষকরা বলেছেন, “স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে, ভূ-চৌম্বকীয় কার্যকলাপ বেশি হলে বিভিন্ন স্যাটেলাইট দ্রুত পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে।
“আমরা দেখেছি, এরইমধ্যে স্টারলিংকের বিভিন্ন স্যাটেলাইটের সময়ের আগেই পতনে বড় প্রভাব ফেলেছে বর্তমান সূর্য চক্রের তীব্র সক্রিয়তার বিষয়টি।”
এর আগেও স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার জন্য মহাকাশ আবহাওয়াকে দায়ী করেছে স্পেসএক্স।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্যালকন ৯ রকেট থেকে উৎক্ষেপিত ৪৯টি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের বেশিরভাগই ক্যারিবিয়ান উপকূলে গিয়ে পড়েছে, আর ঘটনাটি ছোট আকারের ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে ঘটেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে সাত হাজারেও বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট ঘুরছে। এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ হাজার পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে স্পেসএক্সের।
প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের একটি নির্দিষ্ট আয়ু থাকে, যা সাধারণত পাঁচ বছরের কম হয়। এ সময় শেষ হলে স্যাটেলাইটগুলো আবার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং মাটিতে পড়ার আগে তা জ্বলে ছাই হয়ে যায়।
কিছু স্যাটেলাইট নিজেদের থ্রাস্টার ব্যবহার করে কক্ষপথ থেকে নামার ব্যবস্থা করলেও অন্যগুলো বায়ুর টানে স্বাভাবিকভাবেই নিচে নেমে আসে।
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সময় ৩০০ কিলোমিটারের নিচে থাকা যে কোনও স্যাটেলাইট ধারণার চেয়ে প্রায় ১০ দিন আগেই জ্বলে নষ্ট হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দ্রুত নিচে নামার কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের সময় এসব স্যাটেলাইট সঠিকভাবে পুড়ে না গিয়ে পৃথিবীর মাটিতে আছড়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর ফলে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের কিছু অংশ মাটিতে পৌঁছানোর জন্যও দায়ী হতে পারে।
এমন পরিস্থিতির একমাত্র জানা ঘটনা প্রথম ঘটে ২০২৪ সালের অগাস্টে। ওই সময় স্টারলিংক স্যাটেলাইটের একটি অংশ পাওয়া গিয়েছিল কানাডার এক খামারে।
‘ট্র্যাকিং রিএন্টারিং অফ স্টারলিংক স্যাটেলাইটস ডিউরিং দ্য রাইজিং ফেইজ অফ সোলার সাইকেল ২৫’ শিরোনামে গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘আরসিভ’-এ।