প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র নাটকীয়ভাবে উল্টে গিয়েছিল—এখন সেই মহাজাগতিক ঘটনার শব্দ শুনে শিউরে উঠছেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ‘Swarm’ স্যাটেলাইট মিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই শব্দ তৈরি করেছে ডেনমার্কের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং জার্মানির রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস।

এই প্রকল্পে উপগ্রহ-তথ্য এবং পৃথিবীতে চৌম্বক রেখার গতিপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ‘Laschamps’ ইভেন্ট নামে পরিচিত ওই মেরু উল্টানোর ঘটনা পুনর্গঠন করেছেন। তা থেকে তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত শব্দসংকলন—যেখানে কাঠের চিঁড়ধাঁড় আওয়াজ বা পাথরের ধাক্কার গর্জন শুনে মনে হতে পারে যেন প্রকৃতি আতঙ্কে চিৎকার করছে।

পৃথিবীর কেন্দ্রের ঘূর্ণায়মান তরল লোহা ও নিকেলের কারণে তৈরি এই চৌম্বক ক্ষেত্র আমাদের গ্রহকে সূর্যের ক্ষতিকর কণিকা থেকে রক্ষা করে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের গঠন বদলালে পরিবর্তিত হয় চৌম্বক ক্ষেত্র, ফলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুও ধীরে ধীরে সরে যায়।

সম্প্রতি পৃথিবীর চৌম্বক উত্তর মেরু কানাডা থেকে সরে সাইবেরিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে—যা নির্দেশ করে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এখনো সক্রিয়।

চৌম্বক ক্ষেত্রের রেখাগুলো সাধারণত পৃষ্ঠের ওপরে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে এবং অভ্যন্তরে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। তবে সময়ে সময়ে এই ক্ষেত্র হঠাৎ করে সম্পূর্ণ উল্টে যায়।

শেষবার এমন ঘটনা ঘটে লাসচাম্পস ইভেন্টে, যখন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তার শক্তির মাত্র ৫ শতাংশে নেমে আসে। ফলে অতিরিক্ত কসমিক রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, যা বরফ এবং সামুদ্রিক তলদেশে পাওয়া আইসোটোপ বিশ্লেষণেও প্রতিফলিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই সময় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাতাস আয়নিত হয় এবং জলবায়ুর বিশাল পরিবর্তন ঘটে—যা অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ প্রাণীদের বিলুপ্তি এবং মানুষের গুহাবাস-সংস্কৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

এই উল্টানো প্রক্রিয়া শুরু হতে সময় লাগে প্রায় ২৫০ বছর এবং তারপর পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ৪৪০ বছরের জন্য বিপরীত দিকেই থেকে যায়।

বর্তমানে দক্ষিণ আটলান্টিক অঞ্চলের চৌম্বক দুর্বলতার ঘটনা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে যে আবারও কি পৃথিবীর মেরু উল্টে যাচ্ছে? তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব অসামঞ্জস্য সবসময় মেরু উল্টানোর সংকেত নয়।

তবে দক্ষিণ আটলান্টিক অঞ্চলের দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্র ইতোমধ্যেই ওই এলাকায় কৃত্রিম উপগ্রহগুলোকে অতিরিক্ত রশ্মির মুখে ফেলেছে।

২০১৩ সাল থেকে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার 'Swarm' উপগ্রহ গুচ্ছ পৃথিবীর কেন্দ্র, ম্যান্টল, ভূত্বক, মহাসাগর, আয়োনোস্ফিয়ার ও ম্যাগনেটোস্ফিয়ার থেকে চৌম্বক সংকেত মাপছে—যার উদ্দেশ্য পৃথিবীর ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের আচরণ বুঝে ভবিষ্যতের পরিবর্তনগুলো আগাম শনাক্ত করা।

জার্মান জিওসায়েন্স সেন্টারের ভূকম্পবিদ সানজা পানোভস্কা বলেন, “এই চরম ঘটনাগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভবিষ্যতের মহাকাশ জলবায়ু পূর্বাভাস এবং পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব মূল্যায়নের জন্য অপরিহার্য।”

এখন সেই ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের ধ্বনি শুনে আমরা বুঝতে পারি, পৃথিবীর নীরব অভ্যন্তরে ঠিক কতটা উত্তাল গতিপ্রবাহ বিরাজ করে।

সূত্র: https://l8.nu/-ujm



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews