হো চি মিন নামটা কে না জানেন? ভিয়েতনামের বিপ্লবী নেতা। তাঁর নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম হো চি মিন ইসলাম রেখেছিলেন বাবা। শারীরিক গঠনে ছেলেই ছিলেন হো চি মিন। তবে মনটা ছিল এক নারীর। ধীরে ধীরে নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন তিনি। তবে বাবার রাখা নামটি পরিবর্তন করেননি। বিপ্লবী নামটা শুধু ধারণ করেই রক্ষা পাননি হো চি মিন। তাঁকে পদে পদে বিপ্লব করে এই পর্যায়ে আসতে হয়েছে। আলাপচারিতায় জানা গেল তার আদ্যোপান্ত।
কদিন আগেও হো চি মিনের পরিচয়টা ছিল ভিন্ন। তিনি ছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবন্ধিত নার্স। দুই বছর কাজ করেছেন কার্ডিয়াক আইসিইউতে। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। নার্সিং পেশাতে হো চি মিন ঢুকেছিলেন সরাসরি ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়েই। তিনি বললেন, ‘স্কয়ার হাসপাতালে আমার বিভাগের সবাই জানতেন আমি ট্রান্সজেন্ডার। কিন্তু সবাই আমাকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছেন, কাজের সুযোগ দিয়েছেন।’
আন্তর্জাতিক মাস্টার্স করতে স্কয়ার হাসপাতালের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন হো চি মিন। কোর্সটির জন্য স্কলারশিপ বা বৃত্তি দিচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে দৈনন্দিন খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। এত দিন পেয়েছেন ভালো বেতন; ছিলেন ভালো একটা বাসায়। সবকিছু মিলিয়ে জীবন অনেকটাই গোছানো ছিল হো চি মিনের। পড়াশোনার জন্য এখন আবার সব নতুন করে শুরু করতে হবে তাঁকে।
হো চি মিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে পথ আজকে আমি আর তাসনুভা তৈরি করলাম, সেই পথে নিশ্চয়ই আরও অনেক হিজড়া, কোতি, ট্রান্সজেন্ডার, যৌনকর্মী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ আসবে। যখন তারা আসতে শুরু করবে, আসল পরিবর্তনটা ঠিক তখনই ঘটবে।’
বগুড়ায় জন্ম ও পড়াশোনা হো চি মিনের। নিজের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘শুধু দেহ দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হয় না। আমার শরীরটা ছিল ছেলের। আমার মন-মগজ বলত আমি নারী। সমাজে ছেলে বা মেয়ে নয়, এমন একটি শিশুর প্রতি যে অত্যাচার তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি। স্কুলের কেউ আমাকে মানুষ মনে করত না। স্কুলকে মনে হতো একটা টর্চার সেল। তবে মাজহার হোসেন নামের এক শিক্ষকের কাছ থেকে প্রথম স্বপ্ন দেখা শুরু করি। সেই ছোট বয়সে বিচারক হতে চাইতাম, শুধু আমার প্রতি যে অনাচার হয়েছে, তার বিচার করার জন্য।’
বয়ঃসন্ধির সময় নিজের শারীরিক পরিবর্তন দেখে ভয় পেতেন হো চি মিন। আয়নায় নিজেকে দেখে কান্নাকাটি করতেন। দাড়ি বা পুরুষালি শরীর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতেন না। চার বছরের নার্সিং কোর্স শুরু করেন তিনি। কিন্তু তিন মাসের মাথায় বাবা মারা যান। তখন বুঝতে পারেন, তাঁর মাথার ওপরের ছাদটা আর নেই। নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চার বছরে আটবার অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে বলেছেন, নার্সিং কোর্সটা আর করতে পারবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত নিজে উপার্জন করে কোর্সটা সম্পন্ন করেন হো চি মিন।