ইতালির ক্যাম্পি ফ্লেগ্রে সুপারভলকানোতে সম্প্রতি একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের ধারা শুরু হয়েছে, যা বড় ধরনের আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। মে মাসে নেপলসের কাছে এই এলাকায় ৪.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

গত ছয় মাসে বিজ্ঞানীরা এখানে ৩ হাজারেরও বেশি ছোটখাটো কম্পন (ট্রেমর) পরিমাপ করেছেন, যা স্বাভাবিক সিসমিক গতিবিধির চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কম্পন বৃদ্ধি আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রাক-সঙ্কেত।

এই ছোটখাটো ভূমিকম্পগুলো আগ্নেয়গিরির মাটির স্তর দুর্বল করে দেয়, যার ফলে ম্যাগমা সহজে উপরের দিকে উঠতে পারে। এটি এমন যেন প্রেশার কুকারে বাষ্প জমছে এবং ঢাকনা দুর্বল হলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

জিওলজিস্টরা আরও জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্যাসের পরিমাণও সম্প্রতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতালির জাতীয় ভূতত্ত্ব ও আগ্নেয়গিরি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (INGV) অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ম্যাগমা আরও কাছাকাছি আসছে, যা আগ্নেয়গিরির চাপ বাড়াচ্ছে।

বর্তমানে ম্যাগমা মাত্র কয়েক মাইল নিচে অবস্থান করছে, যা বিজ্ঞানীদের জন্য উদ্বেগজনক। চাপ বৃদ্ধি পেলে খুব কম সতর্কতায় বড় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

INGV-এর শীর্ষ আগ্নেয়গিরিবিদ ক্রিস্টোফার আর. জে. কিলবার্ন বলেন, ‘গ্যাস নির্গমনের উৎস শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ—এটি কি ম্যাগমার তরলীকরণ থেকে হচ্ছে, নাকি প্রাকৃতিক পাথরের প্রতিক্রিয়ায়, তা আলাদা করা দরকার।’

ক্যাম্পি ফ্লেগ্রে ও এর আশেপাশে নেপলস মহানগর এলাকায় ৪ মিলিয়নের বেশি মানুষ বসবাস করেন, যারা বিপদে পড়তে পারেন। বিস্ফোরণের সময় লাভা প্রবাহ, আগুনের গ্যাস, এবং ছাই মেঘ শহর ধ্বংস করতে পারে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পানীয় জলের সাপ্লাইও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নেপলস ও পজ্জৌলি শহরগুলো আগ্নেয়গিরির খুব কাছাকাছি অবস্থিত, যা বিপন্ন অঞ্চলে পড়ে।

নেপলসের ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রেডেরিকো II-এর পিএইচডি গবেষক জিয়ানমার্কো বুয়ানো’র এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সলফাতারা ক্রেটার থেকে নির্গত ৮০ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সরাসরি ম্যাগমা থেকে আসছে। বাকি ২০ শতাংশ গ্যাস মাটির নিচে থাকা গরম তরল পদার্থ থেকে, যা সবসময় আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের লক্ষণ নয়।

বিজ্ঞানীরা গ্যাস নির্গমন, মাটির উত্থান-পতন এবং হাজার হাজার ছোট ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করছেন, কারণ এগুলো আগ্নেয়গিরির সতর্কতা সংকেত।

ক্যাম্পি ফ্লেগ্রে মানে ‘জ্বলন্ত ক্ষেত’। এটি একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির গর্ত, যা হাজার হাজার বছর আগে এক বড় বিস্ফোরণের পর মাটির ধস থেকে তৈরি হয়। এর শেষ বিস্ফোরণ ছিল ১৫৩৮ সালে। যদিও এটি প্রায়শই বিস্ফোরিত হয় না, তবে হাজার হাজার বছর অন্তর বড় আকারে বিস্ফোরণের ইতিহাস রয়েছে।

২০০৫ সাল থেকে মাটির নিচের ম্যাগমা ও গ্যাস জমার কারণে ধীরে ধীরে মাটি উঠছে ও নামছে, যা ব্র্যাডিসিজম নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, পজ্জৌলির মাটি সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৪.৭ ফুট উঠে গেছে, যা যেন মাটির এক ধীরস্থির ফুলে ওঠার মতো।

গবেষকরা বলছেন, মাটির ভাঙনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, যা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের আগে একটি সংকেত।

২০১২ সালে সতর্কতা স্তর সবুজ থেকে হলুদে উন্নীত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন প্রায় চার মিলিয়ন বাসিন্দার জন্য জরুরি সরে পড়ার পরিকল্পনা তৈরি করেছে, তবে তা কার্যকর করার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি প্রয়োজন।

৪০ হাজার বছর আগে ক্যাম্পি ফ্লেগ্রে এর আগের বড় বিস্ফোরণ পৃথিবীর আবহাওয়া ও পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল, যা আজকের দিনে ঘটলে তার প্রভাব সমগ্র ইউরোপ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এর ছাই মেঘ তৈরি করে আকাশ ঢাকা দিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ, ফসলের ক্ষতি ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটাবে। আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্যাস সূর্যালোককে বাধাগ্রস্ত করে বিশ্বজুড়ে শীতল আবহাওয়া ও অস্থির মৌসুমী পরিবর্তন আনতে পারে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও মানব জীবনের জন্য হুমকি।

সূত্র: ডেইলি মেইল।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews