বিচারব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে শেখ হাসিনা একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে নিধন করেছেন। বিচারকের আসনকে রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে নিশানা করে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এক রায়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে বিচারের নামে গড়ে তোলা সেই অসাধু চক্রের ভিত্তিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল করেছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি পূর্ণ বেঞ্চ যুদ্ধাপরাধ-সংক্রান্ত মামলার বিচারিক ত্রুটির জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় একটি সুনামি হয়ে গেছে।

আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড অবৈধ ঘোষণার ফলে আওয়ামী লীগের গঠিত কথিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগে যে রায় দিয়েছেন, সব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া তাদের গঠিত আপিল বিভাগও যে ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার সেটিও প্রমাণ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তাদের রায়ে ছয়টি মৃত্যুদণ্ড যে বিচারিক হত্যাকাণ্ড, তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুযোগ তৈরি হয়েছে বিচারের নামে সংঘটিত আগের গুরুতর অবিচার পর্যালোচনার। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার করার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।


হাসিনা পতনের তিন দিন আগে এক নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করে। সেদিনই সমকাল ‘জামায়াত নিষিদ্ধের প্রতীক্ষিত পদক্ষেপ’ শিরোনামে সম্পাদকীয় লিখে ফেলে। এতে তারা উৎফুল্ল হয়ে সরকারকে আরো কী কী করতে হবে- করণীয় বাতলে দেয়। ফ্যাসিবাদ উৎখাতের আন্দোলনকে তারা ওই সম্পাদকীয়তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দেয়। পত্রিকাটি সেদিনের প্রধান উপসম্পাদকীয় ছিল আরো উসকানিমূলক। ‘জামায়াত নেতাকর্মীদের অন্য দলে স্থান দেয়া যাবে না’ শিরোনামে খুশী কবিরের লেখাটি ছিল অন্যায়ভাবে উৎখাত হতে যাওয়া রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কামান দাগিয়ে দেয়ার মতোই। পত্রিকাটির মালিক এ কে আজাদ হাসিনার ডামি নির্বাচনের এমপি হন। তিনিও হাসিনাকে প্রশস্তি গেয়ে বলেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই’। তার পত্রিকাটি শাহবাগের উচ্ছিষ্ট অংশকে কাঁধে করে বয়ে বেড়াচ্ছে। বিরাট একটি শ্রেণী রয়েছে যারা মিডিয়ায় ভর করে ফ্যাসিবাদ তৈরিতে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। এখনো তারা অটুট আছে। এরাই বিপ্লবকে বেহাত করতে মিডিয়াকে নতুন কায়দায় অপব্যবহার করতে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিপ্লবী শক্তিগুলো বেখবর

আমাদের কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়, স্কাইপ কেলেঙ্কারির কথা। বিচারে অসাধুপ্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছিল যা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দুটো পত্রিকা ফাঁস করে দেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কার কী দণ্ড হবে, সেটি কখন দেয়া হবে এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে আদালতের বাইরে। রায় লিখে দিয়েছেন এমন ব্যক্তিরা, যাদের সাথে আদালত-বিচারক কারো সম্পর্ক ছিল না। বিচারকরা যারা ওই অসাধু চক্রের আদেশ মানবেন তাদের কি পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে তা-ও ফাঁস হয়ে যায় তখন। সেই অনুযায়ী রায় দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিচারকের পদোন্নতি হতেও দেখা গেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে এটি যে একটি সাজানো দাবার ছক ছিল সেটি সবাই আগেই জেনেছে। তারপরও ফ্যাসিবাদী সরকার গায়ের জোরে তার বৈধতা দিয়ে গেছে।

আজহারের দণ্ডাদেশ বাতিল ও সর্বোচ্চ আদালতের ভুল শিকার ‘যুদ্ধাপরাধের’ কথিত দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনের পাটাতনও তছনছ করে দিয়েছেন। আদালতের প্রথম শিকার আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের জন্য শাহবাগের উদ্যোক্তারা এখন অভিযুক্ত হলেন। আদালত বিচারের নামে প্রহসনে মোল্লাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। শাহবাগীরা রাস্তায় জঙ্গি মব তৈরি করে রায় পাল্টে সর্বোচ্চ শাস্তির রায় দিতে বাধ্য করে। বিচারের ইতিহাসে এই মব কালচার আগে কোথাও দেখা যায়নি।

এ অবস্থায়ও দেখা গেল, শাহবাগ আয়োজনকারী গোষ্ঠীর ক্ষুদ্র একটি অংশ বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্থানে ‘প্রতিবাদ বিক্ষোভ’ করেছে। তবে ২০১৩ সালের সেই জোশের ছিটেফোঁটাও আর নেই। সরকারের সমর্থন বিরিয়ানির প্যাকেটের ব্যবস্থা নেই। তার ওপর এর পেছনের কারিগররা প্রায় সবাই পালিয়ে গেছে। তাদের এই ‘প্রতিবাদ বিক্ষোভ’ মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে যে অবিচার চলেছে তার সুরাহা করার ক্ষেত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে করা হচ্ছে। এই অবিচারের পেছনে থাকা রাজনৈতিক পক্ষ, শাহবাগে মব তৈরির উদ্যোক্তারা এবং বিচারক নামের পিশাচদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এতে নিরপরাধ কতগুলো মানুষের প্রাণ গেছে শুধু তা নয়; একে কেন্দ্র করে দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর সম্পদ সম্মান ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। তাদের ওপর নেমে আসা বিভীষিকার প্রতিকার করতে হবে।

আব্দুল কাদের মোল্লাকে মিরপুরের ‘কসাই কাদের’ বানিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া, এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বানিয়ে দেয়া হয় ‘রংপুরের কসাই’। খুন, ধর্ষণ ও মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন এ ধরনের অপরাধের সাথে তাদের দূরতম সম্পর্কও ছিল না। এমনকি অপরাধ সংঘটনের যে স্থান তার ধারে কাছেও বাসাবাড়ি বা বাসস্থান ছিল না তাদের। আদালত সেটি তারা প্রমাণও করতে পারেনি। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ সে জন্যই আজহারের বিচারে ত্রুটির কথা স্বীকার করে অনুশোচনা করেছেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আগের দেয়া প্রত্যেকটি রায়ে একই ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যাবে। এ কারণে বিচারিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে সেগুলো স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। আজহারুল ইসলামের দণ্ড বাতিল ও তার মুক্তির পর যারা এর প্রতিবাদ করছেন তারা কি কিছু বুঝে করছেন, না তারা হুজুগে অন্যের ইশারায় রাস্তায় নামছেন। না তারা সেই জল্লাদ খুন হত্যা করে আনন্দ পান।

তার চেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়- মিডিয়া এ ধরনের অন্যায্য ও আদালতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রতিবাদ বিক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়ে খবর করছে। দৈনিক সমকাল ও ডেইলি স্টার প্রথম পাতায় বিক্ষোভের খবর প্রকাশ করেছে। এই দু’টি পত্রিকা তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে দিনের পর দিন সীমাহীন প্রচারণা চালিয়েছে। গণমাধ্যম এই অবৈধ জমায়েত নিয়ে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ইতিহাসের সব রেকর্ড ব্রেক করেছে। প্রতিদিন তারা কয়েক পাতা করে শুধু গণজাগরণ মঞ্চের ছবি ছাপিয়েছে। যেখানে শিশুদের মুখে স্লোগান দেয়া হয়েছে- ফাঁসি চাই বলে। ওই সময় বাংলাদেশের পত্রিকায় প্রথম জ্যাকেট দেখা যায়। মূল পত্রিকাকে দুই পাতার একটি আলাদা প্রচারণাপত্র দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো। অন্যদিকে, টিভি চ্যানেলগুলো টানা শাহবাগ থেকে মঞ্চের উগ্র স্লোগান লাইভ প্রচার করেছে। কয়েক ডজন টিভি একই জিনিস প্রচার করে সেটি দেশবাসীকে দেখতে বাধ্য করেছে। ফাঁসি চেয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা আন্দোলনকে কেন এভাবে সীমাহীন কাভারেজ দিতে হবে, গোলাম সারওয়ার ও মাহফুজ আনামসহ মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিরা সেদিন নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখেননি। এই অসাধু সাংবাদিকতার জন্য তারা কি এখন ক্ষমা চাইবেন। এমন নিন্দনীয় ক্ষতিকার কাজের জন্য কেউ কি তাদের বিচারের মুখোমুখি করবেন?

বিচারের নামে একদল লোকের ফাঁসির মঞ্চ হাসিনা তৈরি করেছেন তা জানার পরও আজহারের দণ্ডাদেশ বাতিলের পর দৈনিক সমকাল সম্পাদকীয় লিখে অনেকটা যেন এর প্রতিবাদ করে বসল। পত্রিকাটি মানতে পারছে না- আজহার একজন নিরপরাধ। পত্রিকাটির কথা হলো- রংপুর অঞ্চলে এক হাজার ২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, এক জনকে ধর্ষণ, শত শত বাড়ি লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ তাহলে কে করল। এসব অপকর্ম আজহারুল ইসলাম করেননি, তাই তাদের হতাশার শেষ নেই। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ঘোরের মধ্যে থাকেন। সেই ঘোর হচ্ছে- সেই সময় যত ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সব করেছে ইসলামী ঘরানার লোকজন। এই বাতিকগ্রস্ততা এদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যেও। বিগত ৫০ বছরের নাটক সিনেমা উপন্যাসের উপজীব্য করেছেন তারা একে। এর দ্বারা তারা পরিকল্পিত পুরো দেশের মানুষকে ইসলামী ঘরানার লোকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। তাদের সেই প্রচারণার সম্মিলিত প্রকাশ ঘটানো হয়েছিল শাহবাগে। তার সুযোগ নিয়ে হাসিনা তার ফ্যাসিবাদকে পোক্ত করেছিলেন।

আওয়ামী লীগ আমলে করা রাজাকারের তালিকায় দেখা গেল- ইসলামিস্টদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তালিকার ১১ হাজার রাজাকারের মাত্র ১৩৪ জন জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত ছিল। অন্যদিকে ৮০ শতাংশ আওয়ামী লীগ ঘরানার লোক। তারপরও মিডিয়া মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য ইসলামিস্টদের দায়ী করে চলেছে। হাসিনা উৎখাত না হলে আজহারুল ইসলামের পরিণতিও আগের ছয়জনের মতো হতো। জুলাইয়ে কয়েক হাজার মানুষের আত্মত্যাগ আরেকটি বিচারিক হত্যাকাণ্ড রোধ করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের এটিও একটি প্রাপ্তি। দুর্ভাগ্য, শাহবাগের অবশিষ্ট কিছু লোক এর প্রতিবাদ করছে। এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য কিছু বলা যায় না। কোথাও থেকে উদ্দীপনা না পেলে এ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটি একসময় হারিয়ে যাবে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- মিডিয়া এই খবর উৎসাহের সাথে প্রচার করছে। শুরুতে ‘গণজাগরণ’ মঞ্চে মাত্র কয়েক শ’ প্রতিক্রিয়াশীল রক্তপিপাসু জড়ো হয়েছিল। মিডিয়ার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য সীমাহীন প্রচারণা সারা দেশের মানুষকে উসকানি দিয়েছে। ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে এই সুযোগে তখন একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল। মঞ্চ থেকে তারা যা ঘোষণা করত সারা দেশের মানুষকে তা তখন মানতে বাধ্য করা হতো। ওই সময় সারা দেশে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। লুটপাট অগ্নিসংযোগের বহু ঘটনা ঘটানো হয়। সামান্য একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর জমায়েতকে প্ররোচিত করে মিডিয়া ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছিল। সেই ধরনের কিছু আবারো ঘটানোর আশঙ্কা এখনো রয়ে গেছে। বাংলাদেশের মিডিয়া তিলকে তাল করতে সিদ্ধহস্ত।

হাসিনা শত শত মিডিয়ার অনুমতি দিয়েছেন। যেখানে আগে থেকে ৯০ শতাংশ মিডিয়া হাসিনার পক্ষে কাজ করেছে। দেশের সব খাতে সংস্কারের কিছু না কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাসিনা আদালতকে ব্যবহার করে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে পেরেছিলেন এই বিশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে। আজ আজহারের মুক্তি পাওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সংবাদ মিডিয়া উৎসাহের সাথে প্রচার করছে, যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশে ঠিক এর বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছিল তখন মিডিয়া। এ সংক্রান্ত অনিয়ম ও অন্যায়ের খবরকে বরং মিডিয়া সংঘবদ্ধ হয়ে ব্ল্যাকআউট করেছে। তখনকার সময়ে সংঘটিত শত শত ঘটনা এখনো লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে মিডিয়া হাসিনার সহযোগী হওয়ার কারণে। জুলাই বিপ্লবকে জাতীয় মুক্তির পথে পরিচালিত করতে হলে মিডিয়ার এ আচরণকে শুধরাতে হবে।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালির ভাইকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। সরকার পক্ষে বালিকে এই মামলার সাক্ষী বানানো হয়। অথচ তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সাঈদীর কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সময় ছিলেন এবং কারা কারা এটি করেছে তিনি সেটি জানেন। তাই তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সরকার পক্ষ তাকে বাধ্য করে এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে। একজন নিরপরাধ মানুষকে ঝুলিয়ে দেয়া হবে- সেটি তিনি মেনে নিতে পারেননি। তিনি সঙ্কল্প করেন, আদালতে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন। সরকারি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তিনি লুকিয়ে ঢাকায় আসেন। আদালত প্রাঙ্গণে আসার পরই তাকে অপহরণ করে সাদা পোশাকে অপহরণকারী বাহিনী। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বালি অপহরণ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেও কোনো প্রতিকার পাননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

ঘটনাটি আদালত প্রাঙ্গণে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সাংবাদিকতার গ্রামার অনুযায়ী আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সাক্ষী অপহরণ বিশাল খবর। কিন্তু কোনো মিডিয়ায় এ নিয়ে কোনো খবর প্রচার হতে দেখা গেল না। কয়েকটি দুর্বল মিডিয়া যারা ফ্যাসিবাদের সহযোগী নয় তারা এটিকে সরকারের ভয়ে ভেতরের পাতায় ছেপেছে। বহু পরে জানা গেল, তিনি ভারতের কারাগারে আছেন। এটিও ছিল একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। তা-ও বাংলাদেশের মূল ধারার মিডিয়ায় এ নিয়ে কোনো খবর পাওয়া গেল না। এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ পাওয়া গেল না। সাঈদী সাহেবের মামলার রায় প্রকাশ হলে সারা দেশে বিপুল বিক্ষোভ দেখা দেয়। সরকারি বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষ হত্যা করে। দেখা গেলÑ এই খবর জায়গা পেয়েছে নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড বলে। ফ্যাসিবাদের সময়ে বাংলাদেশের মিডিয়াকে সংঘবদ্ধ হয়ে ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে বহুবার দেখা গেছে। জঙ্গি দমনের নামে সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে তারা সমর্থন জুুগিয়েছে, হাসিনাকে তারা দানব হতে সহযোগিতা করে গেছে। শাপলা চত্বরে আলো নিভিয়ে গণহত্যা চালানোর পর মিডিয়া রিপোর্ট করেছিল- গাছ কাটা, ডিভাইডার উপড়ে ফেলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে। এগুলোর জন্য তারা হেফাজতের লোকজনদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। অপরদিকে, শত শত মানুষ হত্যার ঘটনাকে গায়েব করে দেয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে ছয়জনকে ফাঁসি দেয়ার ক্ষেত্রে একই ধরনের সংঘবদ্ধ আচরণ দেখা গেছে বাংলাদেশের মিডিয়ায়।

বাংলাদেশের মিডিয়া যে ফ্যাসিবাদের সমর্থক ও সহযোগী তার ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের শেষ দিন ৫ আগস্টের মিডিয়াও তার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। হাসিনা পতনের তিন দিন আগে এক নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করে। সেদিনই সমকাল ‘জামায়াত নিষিদ্ধের প্রতীক্ষিত পদক্ষেপ’ শিরোনামে সম্পাদকীয় লিখে ফেলে। এতে তারা উৎফুল্ল হয়ে সরকারকে আরো কী কী করতে হবে- করণীয় বাতলে দেয়। ফ্যাসিবাদ উৎখাতের আন্দোলনকে তারা ওই সম্পাদকীয়তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দেয়। পত্রিকাটি সেদিনের প্রধান উপসম্পাদকীয় ছিল আরো উসকানিমূলক। ‘জামায়াত নেতাকর্মীদের অন্য দলে স্থান দেয়া যাবে না’ শিরোনামে খুশী কবিরের লেখাটি ছিল অন্যায়ভাবে উৎখাত হতে যাওয়া রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কামান দাগিয়ে দেয়ার মতোই। পত্রিকাটির মালিক এ কে আজাদ হাসিনার ডামি নির্বাচনের এমপি হন। তিনিও হাসিনাকে প্রশস্তি গেয়ে বলেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই’। তার পত্রিকাটি শাহবাগের উচ্ছিষ্ট অংশকে কাঁধে করে বয়ে বেড়াচ্ছে। বিরাট একটি শ্রেণী রয়েছে যারা মিডিয়ায় ভর করে ফ্যাসিবাদ তৈরিতে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। এখনো তারা অটুট আছে। এরাই বিপ্লবকে বেহাত করতে মিডিয়াকে নতুন কায়দায় অপব্যবহার করতে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিপ্লবী শক্তিগুলো বেখবর।

[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews