চারদিক

তাল ফলের নিলাম

বজ্রপাত নিরোধ, পরিবেশবান্ধব ‘তাড়াশ তাল সড়ক’ নির্মাণের কাজ সত্তরের দশকে শুরু করেন মো. আব্দুর রহমান মিঞা। এ বৃক্ষপ্রেমিক এলাকার জনসমাগমস্থলে চৌকিদার দিয়ে ঢোল ও মুড়ির টিন বাজিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করেন। এর পর ১৯৭৫ সালে ভাদ্র মাসের শেষ দিকে ২০-২৫টি পানসি নৌকায় তালবীজ নিয়ে নেচেগেয়ে ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জনগুরুত্বপূর্ণ সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ থেকে ভূঞাগাঁতী আঞ্চলিক সড়কের দু’ধারে ১২ ফুট অন্তর প্রায় ১৫ হাজার তালবীজ রোপণ করেন। এ সময় তালবীজ রোপণ কাজে অংশ নেওয়া কয়েকশ লোককে প্রায় ২৫ মণ চাল-ডাল দিয়ে পাকানো খিচুড়ি দিয়ে আপ্যায়নও করা হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান মিঞা হলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের ভাদাস গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

তাড়াশের ঐতিহাসিক ‘তাল সড়ক’-এ তালবীজ রোপণের জন্য ১৯৭৮ সালে আব্দুর রহমান মিঞা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ও গ্রহণ করেছিলেন। শতবর্ষী এ বৃক্ষপ্রেমী এখনও জীবিত। গাছের পরিচর্যার অভাব, যত্রতত্র ডাকুর কাটা, বজ্রপাতে মরে যাওয়ার পরও জীবিত আছে অনেক তালগাছ। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে তাড়াশের তাল সড়কটি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরে জেলা পরিষদ ওই সড়কে একবারও নতুন করে আর তালবীজ রোপণ, গাছগুলোর পরিচর্যার ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ অন্তত মরা ৪৫টি তালগাছ নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এমনকি তাড়াশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক তাল সড়কের তালগাছ বাড়ানোর উদ্যোগ না নেওয়া হলেও গত ৮ মে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বাক্ষরিত সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে তাড়াশের ‘তাল সড়ক’-এর তালফল বিক্রির নিলাম নোটিশ দিয়েছেন।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাড়াশ উপজেলার পৌষার বাসস্ট্যান্ড থেকে তাড়াশ হাসপাতাল গেট পর্যন্ত উভয় পাশের ২২৫টি তালগাছের তাল ফল নিলামে বিক্রি করা হবে। ক্রয় করতে ইচ্ছুকরা ১৪ মে বুধবার দুপুর ১২টায় তাড়াশ ইউএনওর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। জেলা পরিষদ কর্তৃক ২২৫টি তালগাছের তাল ফল বিক্রির নিলামের খবরে এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

সামান্য টাকার জন্য এলাকাবাসীকে তাল ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ তাল ফল বিক্রি না করে সংগ্রহ করে সড়কের ফাঁকা জায়গায় নতুন করে তালবীজ রোপণ করলে তা অধিক ভালো হতো।

জেলা পরিষদ তালবীজ রোপণে নেই; আছে তাল ফল বিক্রিতে। বিষয়টি দৃষ্টিকটু। যদিও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জানান, প্রতিবছর এলাকার একটি সিন্ডিকেট গোপনে হাজার হাজার টাকার তাল বিক্রি করে থাকে। তাই এ বছর নিলামের মাধ্যমে তাল ফল বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে প্রয়োজনে তালবীজ কিনে ওই সড়কে রোপণ করা হবে।  কিন্তু সর্বোপরি এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন, তাড়াশের কালের সাক্ষী তাল সড়কের ২২৫টি গাছের তাল ফল নিলামে বিক্রি কি খুবই জরুরি?

এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল: সমকালের তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews