ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ ও আত্মসমর্পণ। এই ত্যাগের প্রতীক হিসেবে মুসলিমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে শুধু কোরবানিই যথেষ্ট নয়, তার পূর্ববর্তী প্রতিটি ধাপেও রয়েছে নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ। তার মধ্যে অন্যতম হলো কোরবানির পশুর প্রতি যত্নশীল ও দয়াশীল হওয়া। বর্তমান সময়ে অনেকেই পশুকে শুধু উৎসবের অনুষঙ্গ হিসেবে দেখে, যার ফলে পশুর প্রতি সদাচরণের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ কোরবানির পশু যতদিন আমাদের হেফাজতে থাকে, ততদিন তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব যেমন ধর্মীয়, তেমনি মানবিক। ইসলামের দৃষ্টিতে পশু শুধু কোরবানির বস্তু নয়, বরং আল্লাহর এক সৃষ্টিজীব। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে  কোরবানির পশুর প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একটি পশু হাট থেকে কেনার পর তাকে অযথা গরমে বা কষ্টদায়ক পরিবেশে না রেখে, ছায়াযুক্ত এবং পরিষ্কার জায়গায় রাখা প্রয়োজন। প্রতিদিন যথাযথ পরিমাণে খাবার ও পানি দেওয়া, তার আশ্রয়স্থল পরিষ্কার রাখা, শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা এবং রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা কোরবানিদাতার নৈতিক দায়িত্ব। কোরবানির পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তা কোরবানির যোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারে।

বর্তমানে শহরাঞ্চলের অনেকেই বাসার ছাদে বা নিচে পশু রাখেন, যেখানে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস পর্যাপ্ত থাকে না। আবার অনেকে পশুর মলমূত্র পরিষ্কারে অবহেলা করেন, যার ফলে পশু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আশপাশের পরিবেশও দূষিত হয়। অনেকেই পশুকে অলঙ্কারে সাজিয়ে, ভিডিও করে  সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন, যা পশুর প্রতি অমানবিক আচরণে রূপ নেয়। কোরবানির দিন যত ঘনিয়ে আসে, ততই পশুর প্রতি যত্নের প্রয়োজন বেড়ে যায়। অনেকেই শেষ মুহূর্তে পশুর খাওয়া-দাওয়ায় অবহেলা করেন, যা কোরবানির আগেই পশুকে দুর্বল করে তোলে। এভাবে একটি নিরীহ প্রাণীর প্রতি অবহেলা আমাদের ত্যাগের মহিমাকে ছোট করে দেয়। বিশেষ করে কোরবানির পশু কেনার পর শিশুরা আনন্দের বশে তাদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়ে কখনো কখনো রুক্ষ আচরণ করে ফেলে, যা পশুর জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে। অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো সন্তানদের শেখানো, পশু কোরবানির একটি ধর্মীয় অংশ, তাই তার প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে। এতে যেমন শিশুদের মাঝে সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে।
কোরবানি মানে শুধু পশু জবাই নয়, ত্যাগের চর্চা। সেই ত্যাগ যদি শ্রদ্ধা ও দায়িত্বশীলতার মধ্যে দিয়ে না আসে, তবে তা পরিপূর্ণ হয় না। কোরবানির মূল লক্ষ্য তখনই বাস্তবায়িত হয়, যখন প্রতিটি ধাপে থাকে দায়িত্ব, মমতা ও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা। কোরবানির পশুর প্রতি দয়াশীল আচরণ এবং নিয়মিত পরিচর্যা শুধু একটি মানবিক কর্তব্য নয়, ইসলামী আদর্শের অংশ। একটি পশুকে ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে প্রস্তুত করে, তার শরীর, মন এবং সম্মান রক্ষা করে কোরবানি করার মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে প্রকৃত ত্যাগের মহিমা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews