ঈশ্বরদীতে হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন অনেক ডায়রিয়ায় রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন আক্রান্তরা। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। শনিবার (৩১ মে) সকালে ঈশ্বরদী ইপিজেড থেকে আরও ২১ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার ভর্তি হয়েছেন ২৪জন।
শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. আলী আহসান জানান, এ পর্যন্ত (৩১ মে সকাল ১১টা) ৮২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আরও নতুন রোগী আসছেন। পরিস্থিতি বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।
দুই দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীর বাইরে জরুরি বিভাগে ৬২ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। আক্রান্তদের বয়স ২০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। তাদের অর্ধেকই ঈশ্বরদী ইপিজেড কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কোনো পর্যবেক্ষণ নেই।
কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে দূষিত পানীয় পান করা, খাদ্যে ভেজাল, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও অতিরিক্ত গরম, অপরিচ্ছন্ন খোলা খাবার গ্রহণকে অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও আন্ত:বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়ার রোগী আসছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে বেশ কয়েকজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ইতিমধ্যে ১০ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা ও রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সূত্রটি জানায় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরদী ইপিজেড কারখানার ৩৮ জন শ্রমিক-কর্মচারী।
হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী ঈশ্বরদী ইপিজেড কারখানার শ্রমিক রাকিব উদ্দিন জানান, দুই দিন আগে ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরে রাতে খাওয়াদাওয়ার পর থেকে তার ডায়রিয়া শুরু হয়। সকালে কিছুটা সুস্থবোধ করায় কারখানায় গেলে আরও বেড়ে যাওয়ায় তিনি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হন। রাকিব জানান, তিনি শুধু একা নন, ইপিজেডের অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নারী ওয়ার্ডের এক রোগী জানান, তিনি ইপিজেড কারখানার একজন শ্রমিক। রাতে হঠাৎ পেটে ব্যথা হওয়ার পর থেকে তার ডায়রিয়া শুরু হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দিয়েছেন।
এদিকে হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন নার্স, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। তারা জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। এই অবস্থায় চিকিৎসা দিতে এসে তাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কর্তব্যরত নার্সরা বলেন, ‘সেবা করতে এসে দেখছি সহজেই এই ডায়রিয়া ভালো হচ্ছে না। এ জন্য অনেকে উন্নত চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদীর বাইরে চলে গেছেন।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাবিবা বলেন, কী কারণে হঠাৎ ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেড়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল, আবহাওয়া পরিবর্তন, অতিরিক্ত গরম, খোলা খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। এ জন্য তিনি খোলা ও বাসি খাবার পরিহারের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন।