আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে প্রতিটি নতুন দিন পৃথিবীর চেহারাকে আমূল পাল্টে দিচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি এতটাই দ্রুত যে চোখের পলকে বদলে যাচ্ছে আমাদের চিন্তা, কাজ, জীবনযাপন এবং সম্পর্কের ধরন। কিছুদিন আগেও যেখানে মুখোমুখি কথা বলাই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, সেখানে আজ ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে চালানো যাচ্ছে ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি চিকিৎসা কেন্দ্রও। কল্পনার পৃথিবী বাস্তবে রূপ নিচ্ছে, আর বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সম্ভাবনা। তবু সময় থেমে নেই। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও মানবচিন্তার যৌথ অগ্রযাত্রা আমাদের নিয়ে চলেছে এমন এক ভবিষ্যতের দিকে, যা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক বিস্ময়কর, অধিক গতিশীল এবং কখনো কখনো শঙ্কায় মোড়া। আগামী দিনের পৃথিবী আমাদের চেনা পৃথিবী থাকবে না, এটি হবে এক নতুন বাস্তবতা, যেখানে পুরোনো অভ্যাস, চিন্তাধারা ও দক্ষতাগুলো জায়গা ছেড়ে দেবে আধুনিকতা, উদ্ভাবন ও অভিযোজনকে। এই নতুন পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য চাই মানসিক প্রস্তুতি, চাই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং চাই গভীর আত্মসচেতনতা। আমরা যদি এখনই নিজেদের বদলাতে না পারি, তবে ভবিষ্যতের এই পৃথিবীতে আমাদের জন্য কোনো জায়গা থাকবে না। আমরা পিছিয়ে পড়ব, সময়ের অতীত অধ্যায়ে পরিণত হব। এই প্রবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব প্রযুক্তির সম্ভাবনা, অর্থনৈতিক লেনদেনের রূপান্তর, পরিবেশের বিপর্যয় ও অভিযোজন, স্বাস্থ্য খাতে যন্ত্রের জয়যাত্রা এবং আমাদের ব্যক্তিজীবনের রূপান্তর। একই সঙ্গে আমরা খোঁজার চেষ্টা করব এই অস্থির ও অজানা ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হলে এখন আমাদের কী করতে হবে, কতটা সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।

আজকের দিনে আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনটিই ভবিষ্যতের কাছে ধীরে ধীরে পুরোনো হয়ে পড়বে। প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ‘নিউরাল লিংক’-এর মতো উদ্যোগ দ্রুতই বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে, যেখানে মানুষের চিন্তার মাধ্যমে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। ধরুন আপনি মনে মনে ভাবলেন ‘ফেসবুক খুলতে চাই’। সঙ্গে সঙ্গেই সেটি খুলে যাবে, কোনো টাচ ছাড়াই। এই যুগে সফটওয়্যার এবং মেশিন লার্নিং মানুষের অনুভূতিও বুঝতে পারবে। চিন্তার সঙ্গে কাজের সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবন আরও সহজতর হয়ে উঠবে। এ যেন বিজ্ঞানের কল্পকাহিনি বাস্তবে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা। এখানেই শেষ নয়, আরও অনেক কিছু রয়েছে। আগামী দিনের পৃথিবীতে আর কাগজের টাকা থাকবে না, এটি এখন শুধু ভবিষ্যৎ কল্পনা নয়, বরং বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে। ছজ কোড, ডিজিটাল ওয়ালেট, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলে সমাজ ও অর্থনৈতিক কাঠামো আমাদের গ্রহণ করবে না। আমরা হয়ে পড়ব প্রযুক্তি অযোগ্য, সময়ের কাছে বাতিল। তাই এখনই প্রয়োজন নিজেদের প্রস্তুত করা। ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য খাতে প্রযুক্তির জয়যাত্রা শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালেই রোবটিক অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকের চেয়েও অধিক সফলতা দেখিয়েছে যন্ত্র। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সার্জনদের হারিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিনচালিত রোবট সুনিপুণভাবে অপারেশন সম্পন্ন করেছে। এই অগ্রগতি বোঝায় আগামী দিনে ডাক্তার ও রোগীর মধ্যকার সম্পর্ক এক নতুন স্তরে পৌঁছাবে। আর এ বাস্তবতায় রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং মনিটরিং হবে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর। মানুষের আয়ু বাড়বে, কিন্তু রোগ প্রতিরোধে অজ্ঞতার কারণে অনেকেই পিছিয়ে পড়বে। তাই প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে মানিয়ে চলা এখন সময়ের দাবি। পরিবহনব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। ‘বুম সুপারসনিক’ নামে একটি প্লেন ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে, যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছাতে সময় নিচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিট। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যেতে এখনো যেখানে ৪৫ মিনিট সময় লাগে, আগামী দিনে হয়তো তা কমে আসবে মাত্র কয়েক মিনিটে। এই সুপারফাস্ট পরিবহনব্যবস্থার কারণে বিশ্ব হবে আরও ছোট, যোগাযোগ আরও গতিশীল, আর সময় হবে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু আমরা যদি এখনো অতীতের ধীরগতির সমাজচিন্তায় আটকে থাকি, তবে এই নতুন পৃথিবীর রেলগাড়িতে ওঠার সুযোগ হারাব।

আগামী পৃথিবী শুধু প্রযুক্তির নয়, পরিবেশের পরিবর্তনও মুখ্য বিষয় হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে দুবাইতে নির্মিত হয়েছে জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত আধুনিক শহর। বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্র বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং বাতাসের মান পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে এ ধরনের উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি। না হলে জলবায়ু দুর্যোগ, বন্যা, খরা কিংবা ঘূর্ণিঝড় আমাদের জীবনযাত্রাকে ধ্বংস করে দেবে। তাই পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং টেকসই প্রযুক্তির প্রয়োগে মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক।

♦ লেখক : আইনজীবী ও গবেষক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews