জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন, অভীষ্ট লক্ষ্য এবং সূচকসমূহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাজ করে চলেছে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা বিশ্বব্যাপী সর্বজনীনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল, যাতে করে প্রত্যেক জাতির জন্য, প্রত্যেক খাতের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য হয়। শহর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে কাজ করার ব্রত নিয়ে মানবমঙ্গল, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে উন্নয়নের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানানো হয়েছিল। ইতোপূর্বে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশংসা বিশ্বব্যাপী কুড়াতে সক্ষম হয়েছিল। বিশেষ করে সংক্রামক ব্যাধি বন্ধে বাংলাদেশ যে সমস্ত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিল।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহের মধ্যে এটি স্বীকৃত যে, লক্ষ্যসমূহ সমস্ত পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হলেও একে অন্যের সহযোগী হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে। কেবল ২/৩টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মধ্যে কোন দেশ নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না। বরং লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়নে প্রত্যেক দেশকেই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে করে অর্জন করা যায়। এজন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ মিশ্রণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এজন্য সরকারপ্রধান বলেছিলেন যে, টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের নিচের স্তরে থাকা প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে সক্ষম হব। তিনি টেকসই উন্নয়নকে স্থানীয়করণ করার জন্য স্থানীয় কলাকৌশল নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত প্রতিকূলতা এবং সুযোগসমূহ রয়েছে সেগুলোকে স্থানীয়ভাবে বাস্তবভিত্তিক এবং জনআকাক্সক্ষার সংযোগ ক্ষেত্রে রূপান্তরের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে বলেছিলেন। এর ফলে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি সুসংহত কর্মপন্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবায়নক্ষম পদ্ধতির প্রচার ও বিকাশ সাধন জরুরী বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। টেকসই উন্নয়ন যদি প্রকৃত অর্থে ঘটানো যায় তা হলে বিশ্বব্যাপী মানুষের মানবিকতা, জীবনমান, পরিবেশবান্ধব অবস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বসবাসযোগ্য পরিস্থিতির মধ্যে সামগ্রিক অর্থে মৌলিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যাকে রূপান্তর বলে অভিহিত করা যায়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে- সর্বত্র এবং যে কোন পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো। বস্তুত বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসকল্পে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় নানাবিধ কর্মকাণ্ড গত এক দশকে গ্রহণ করায় অর্থনৈতিকভাবে আমরা অগ্রসরমান হচ্ছিলাম। এ দেশ দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। গত এক যুগে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি, শিক্ষার সম্প্রসারণ ও বিদ্যুতের প্রাপ্যতার জন্য অন্তর্ভুক্তি এবং অন্যান্য মানব উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে বেশ ভাল করে চলছিল। দেশটি অর্থনীতিতে যে দ্রুত রূপান্তর শুরু করেছিল তা সঠিক নেতৃত্ব গুণে সম্ভব হলেও কোভিড-১৯-এর আঘাত বিশ্বের অন্য দেশের মতো এ দেশেও লেগেছে। তবে যে সমস্ত নীতিমালার আলোকে দেশটির উন্নয়ন চলছে সেক্ষেত্রে দ্রুত নগরায়ণের পাশাপাশি উৎপাদন ও পরিষেবাগুলোকে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে- ক্ষুধা থেকে মুক্তি, নিরাপদ খাদ্যের সুরক্ষা, উন্নতমানের পুষ্টি অর্জন এবং সর্বোপরি কৃষিকে টেকসইভাবে উপস্থাপন করা। বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, যা প্রশংসনীয়। পুষ্টিমান বৃদ্ধিকল্পেও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সেফটি নেটের আওতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং কৃষিকেই মূল চালিকা ধরা উচিত।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার তৃতীয় হচ্ছে সকলের জন্য সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা এবং সব বয়সের লোকের জন্য মঙ্গল সাধন করা।
বাংলাদেশের জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ অনুসারে যুব সমাজকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আদমশুমারি ২০১১ অনুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তির সংখ্যা হচ্ছে চার কোটি আশি লাখ চব্বিশ হাজার সাত শ’ চারজন, যা কিনা ২০২০ সালে এসে ন্যূনতপক্ষে সাড়ে পাঁচ কোটির মতো হবে। এ কারণেই বর্তমান স্বকর্ম সংস্থানের কথা ভাবা হচ্ছে। আয়ুষ্কাল যেহেতু বেড়ে গেছে সেহেতু সমাজের, যারা প্রবীণ তাদেরও ভলান্টিয়ারি সার্ভিস তথা স্বেচ্ছামূলক কর্মের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। সমস্যা হলো সরকার যদিও কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে, কিন্তু চিকিৎসক-নার্সরা প্রত্যন্ত বা গ্রামীণ অঞ্চলে যেতে চান না। তারা যে কোন মূল্যে শহরাঞ্চলে অবস্থান করতে ইচ্ছুক। সরকার এবং এনজিওরা টেলিমেডিসিন এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক চালুর প্রয়াস নিয়েছে। তবে করোনার সময় এগুলো থেকে তেমন চিকিৎসা সাহায্য কিন্তু সাধারণ মানুষ পায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকদের গবেষণা করে বের করতে হবে, কেন এমনটি হলো। এদিকে দেশে প্রতিটি হাসপাতাল, নার্সিং হোমে বাধ্যতামূলকভাবে চিকিৎসক এবং নার্সদের সম্পর্কে তাদের চিকিৎসা সমাপ্ত হলে প্যাশেন্ট রেকর্ড সিস্টেম চালু করা দরকার, যা পর্যালোচনা করে দেশে যে দুর্বৃত্তায়ন যদি কোন স্থানে ঘটে থাকে তবে তা ভাঙ্গা সহজ হবে।
এসডিজির চতুর্থ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আজীবন শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা। শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণের পাশাপাশি মান উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দারা একটু নজরদারি বৃদ্ধি করলেই আসল চিত্র হয়ত প্রকাশ্যে আসতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেবল এককভাবে নয়, তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষক থেকে আরম্ভ করে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকদেরও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নৈতিকতার শিক্ষা বাল্যকালে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রাইমারী স্কুলগুলোতেও দেয়া উচিত। পঞ্চম লক্ষ্যে বলা হয়েছে যে, লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা করা। যদিও সরকার নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে নানামুখী প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ন্যায় যারা শিশু ও নারী নির্যাতন করছে, কেবল আইন প্রণয়ন নয়, বরং সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৬ নম্বর কৌশল হচ্ছে সবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ করা। দেশে সর্বত্র সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে সরকার চেষ্টা করছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা যাতে ভাল থাকে তার উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। কিন্তু সমস্যা হলো জনসংখ্যা অনুপাতে ক্রমশ পানির উৎসগুলো হ্রাস পাচ্ছে। সবার জন্য সহজপ্রাপ্য, সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই, আধুনিক জ্বালানির কথা লক্ষ্যমাত্রা সাতে বলা হয়েছে। উদ্ভাবনী জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান যাতে শালীন হয় সেজন্য এসডিজি ৮-এ বলা হয়েছে। দেশে আয় বৈষম্য কমিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মানুষের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী সংস্থাসমূহ কাজ করে যাচ্ছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়ন, তদারকি এবং অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়ের জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনসহ গঠন করা দরকার। কেননা কোভিডের কারণে একদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সরকার যে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ধরে রাখতে চেষ্টা করছে তাকে আরও বেগবান করতে হলে সুদূরপ্রসারী নীতির আলোকে বাস্তবায়ন করতে দেশপ্রেমিক ও প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামত প্রতি মাসে একবার করে নেয়া দরকার। টেকসই অবকাঠামোর পাশাপাশি শিল্পায়ন যেন ওঠানামা না করে এবং উদ্ভাবনের প্রসার ঘটানোর ওপর লক্ষ্যমাত্রা ৯-তে বলা হয়েছে। দেশীয় কাঠামোর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের উদ্ভাবন আমাদের গতিশীলতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি কলাকৌশলের সহায়তা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। দেশের ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পর আগামীতে ৫জি নেটওয়ার্ক চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তঃরাষ্ট্রের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১০-এ। করোনাকালে বৈষম্য হ্রাসকল্পে গৃহীত প্রয়াসের মধ্যে বৈশ্বিক তালিকায় ১৫৮টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩। বৈশ্বিক মহমারীর মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে চলেছে।
টেকসই লক্ষ্যমাত্রার ১১ নম্বরে বলা হয়েছে শহরগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপদ, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই হিসেবে তৈরি করার কথা। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে করে প্রতিটি নাগরিক আরামপ্রদভাবে থাকার সুযোগ পান। গ্রামকে স্মার্ট শহর বানানো গেলে এবং প্রত্যেকের জন্য আবাসন সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথোপযুক্ত বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে। টেকসইমূলক গ্রহণ এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কথা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ১২-তে বলা হয়েছে। ধীরে ধীরে দেশ অর্থনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে মানুষের ভোগ ব্যয় এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় মান উন্নত হচ্ছে। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে শ্রম উদ্বৃত্ত দেশে নানামুখী সমস্যা রয়েছে, যা করোনার সময় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সঞ্চয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাবসমূহ মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে এসডিজি ১৩-তে। ১৬.৮ কোটি জনসংখ্যার রাষ্ট্র এদেশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা রাষ্ট্রসমূহের অন্যতম। সমুদ্রের ব্যবহার এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য টেকসই পদ্ধতির ওপর এসডিজি ১৪-তে বলা হয়েছে। বিভিন্ন সামুদ্রিক সম্পদ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে প্রশিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, ধীশক্তির অধিকারী এবং চৌকস মানবসম্পদ তৈরি করে তাদের কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। অবিচ্ছিন্নভাবে বনাঞ্চল পরিচালনা করা, মরুভূমি না হওয়া, জমির ক্ষয়রোধ করা এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে এসডিজি ১৫-তে। এডিবির হিসাবে বাংলাদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র ১১.২ শতাংশ। দেশে জনসংখ্যার কারণে বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। ন্যায়বিচার, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থার কথা এসডিজি ১৬-তে বলা হয়েছে। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সবার জন্য সমপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা দরকার। দেশে নারী উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে নারী নির্যাতন বন্ধের যে পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেছে তা সামাজিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সহজলভ্য ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির খারাপ দিকগুলো বন্ধ করতে হবে।
এসডিজি-১৭-এর লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব পুনরুজ্জীবিত করা। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সমঅংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় এনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিচার অব্যাহত থাকা, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা, ক্ষুধা থেকে মুক্তির কলাকৌশল গ্রহণ করে বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে। তবে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিপুল অর্থের সংস্থান করা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে অবশ্য কোভিডের কারণে প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সামনে ভ্যাকসিনের জন্যও অর্থের প্রয়োজন হবে। দেশে সরকারের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। যারা সমাজকর্মী আছেন তাদের জনগণের দোরগোড়ায় রাজনৈতিক-প্রশাসক-আমলা পুলিশের সহায়তায় মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। এসডিজির সব টার্গেট ১৬৯টি হয়ত ২০৩০-এর মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু টার্গেট যদি পূরণ করা যায় তবে সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে অবশ্যই।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট, আইটি এক্সপার্ট