ঈদুল আজহা, মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব, কেবল আনন্দ আর আত্মত্যাগের দিন নয়, বরং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করার এক অনন্য উপলক্ষ। এই দিনেই মুসলিমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেন। তবে ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদুল আজহার উদযাপন এবং কোরবানির পশুর ধরণে লক্ষণীয় পার্থক্য রয়েছে। কোথাও গরু বেশি জনপ্রিয়, কোথাও আবার ছাগল, ভেড়া বা উট প্রধান। নিচে দেশভেদে ঈদুল আজহার রীতিনীতি ও পশু কোরবানির ধরন তুলে ধরা হলো।

মধ্যপ্রাচ্য
সউদী আরব হচ্ছে ইসলামের পবিত্র ভূমি, যেখানে হজ পালন ও ঈদুল আজহার কোরবানি একটি কেন্দ্রীয় ধর্মীয় চর্চা। এখানে গরু, ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া ছাড়াও উট অন্যতম জনপ্রিয় কোরবানির পশু। হজ মৌসুমে উট ও গরুর দাম প্রচুর বেড়ে যায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে কোরবানির পশু সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করা গরু ও ছাগল। ধনী পরিবারের কেউ কেউ উট কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানি নির্ধারিত স্থানেই বেশি হয়, তবে চাইলে নিজস্ব জায়গায়ও দেওয়া যায়।

দক্ষিণ এশিয়া: পাকিস্তান
পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। এখানে গরু ও ছাগল সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়। ষাঁড়, মহিষ, দুম্বা ও উটও কোরবানি দেওয়া হয় বটে, তবে সংখ্যায় তুলনামূলক কম। পাকিস্তানে রাস্তার ধারে বা বাড়ির সামনেই ঐতিহ্যবাহী ‘ধাবিহা’ পদ্ধতিতে কোরবানি দেওয়া প্রচলিত। ছাগলের চাহিদা বেশি হলেও দরিদ্ররা সাত ভাগে ভাগ করা যায় বলে মহিষও বেছে নেন।

ভারত: ধর্মীয় বিধিনিষেধের ভিন্নতা
ভারতের প্রায় ২০ কোটির বেশি মুসলমান থাকলেও গরু কোরবানি সবখানে দেওয়া যায় না। বেশিরভাগ রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ, ফলে ছাগল ও মহিষই প্রধান কোরবানির পশু। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও নাগাল্যান্ডের মতো কিছু রাজ্যে গরু জবাই বৈধ হলেও বাকিগুলোতে কঠোর আইন রয়েছে, যেখানে গরু কোরবানি করলে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

ভারতে ‘গোরক্ষক’ বাহিনীর উত্থান এবং কসাইখানা বন্ধের কারণে অনেক এলাকায় এখন শুধু মুরগির মাংসেই সীমিত থাকতে হচ্ছে মানুষকে। ফলে কোরবানির পশু পরিবহন করাও এখানে একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

ইন্দোনেশিয়া: এশিয়ার বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় গরু ও ছাগলই মূলত কোরবানির জন্য ব্যবহৃত হয়। দেশটিতে ভেড়া বা উট খুব একটা দেখা যায় না। ইন্দোনেশিয়ায় কোরবানির দিন নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও অনেক মুসলমান হজের সময়ের সাথে মিলিয়ে ঈদ পালন করেন।

মাংস বিতরণে কিছু এলাকাতে আত্মীয়স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, আবার কিছু এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে বিতরণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ধর্মীয় সংস্থাগুলোও মাংস সংগ্রহ করে গরিবদের মাঝে বিতরণ করে থাকে।

তুরস্ক
তুরস্কে ঈদুল আজহাকে ‘কুরবান বাইরামি’ বলা হয়। এখানে কোরবানি হয় মূলত গরু, ছাগল ও ভেড়া। অধিকাংশ মানুষ পশু বাড়িতে না জবাই করে, নির্ধারিত স্লটার হাউসে নিয়ে যান। কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ আত্মীয়, একভাগ দরিদ্র এবং একভাগ নিজেদের জন্য রাখার নিয়ম প্রচলিত। তুরস্কে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা দরিদ্রদের জন্য কোরবানির মাংস সংগ্রহ ও বিতরণ করে থাকে।

আফ্রিকা
আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে যেমন মিশর, নাইজেরিয়া, সুদান, আলজেরিয়া, মরক্কো প্রভৃতি—সেখানেও গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট কোরবানি দেওয়া হয়। মরুপ্রধান অঞ্চলে উটের কোরবানি বেশি প্রচলিত, বিশেষ করে সাহারা অঞ্চলে। কিছু এলাকায় পশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও উৎসাহের ঘাটতি নেই। মানুষ একত্রে শরীক হয়ে কোরবানি দিয়ে থাকে।

ইউরোপ
ইউরোপের মুসলিম অভিবাসী অধ্যুষিত দেশগুলো—যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ইত্যাদিতে কোরবানি দেওয়া হয় মূলত নির্ধারিত হালাল স্লটার হাউসে। অনেক দেশে পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট পরিবেশগত ও স্বাস্থ্য বিধিমালা রয়েছে। কিছু দেশে বাসায় কোরবানি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোরবানির মাংস পরিবার ও দরিদ্রদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন, ঈদুল আজহার মূল বার্তা একই—আত্মত্যাগ, মানবতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। কারও পশু বড়, কারও ছোট; কারও কোরবানি ঘরে, কারও নির্ধারিত স্লটার হাউসে। তবু এই উৎসব মুসলিম বিশ্বে এক পরম ধর্মীয় একাত্মতা ও সহানুভূতির অনন্য নিদর্শন। কোরবানির পশুর ধরন, নিয়ম, পরিবেশ যত ভিন্নই হোক, ঈদুল আজহার আত্মিক আবেদন সর্বত্রই এক এবং অটুট। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews