টাইটানিক: সমুদ্রের তলদেশে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের পূর্ণাঙ্গ ছবি যা আগে কখনও দেখা যায়নি

  • রেবেকা মোরেল এবং এলিসন ফ্রান্সিস
  • বিবিসি নিউজ জলবায়ু ও বিজ্ঞান

৪০ মিনিট আগে

আপনার ডিভাইস মিডিয়া প্লেব্যাক সমর্থন করে না

ভিডিওর ক্যাপশান,

সমুদ্রের তলায় টাইটানিকের থ্রি ডি ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত জাহাজ দুর্ঘটনায় টাইটানিক নামের যে বিলাসবহুল জাহাজটি সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল এই প্রথম তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া গেছে।

এসব ছবি আটলান্টিকের ৩,৮০০ মিটার (১২,৫০০ ফুট) নিচে ডুবে থাকা জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের প্রথম ডিজিটাল স্ক্যান যা 'গভীর সমুদ্র ম্যাপিং' পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

এর ফলে পুরো টাইটানিকের ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা- এই তিন মাত্রার দৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

ছবিগুলো দেখলে মনে হয় আটলান্টিক থেকে সব পানি সরিয়ে যেন সমুদ্রের তলদেশে পরিত্যক্ত বিশাল আকারের এই জাহাজটির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।

আশা করা হচ্ছে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া এই জাহাজটিতে আসলেই কী ঘটেছিল এসব দৃশ্য থেকে সে সম্পর্কে নতুন কিছু জানা যাবে।

জাহাজটি তার উদ্বোধনী যাত্রায় সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতির বরফ বা আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর ডুবে গিয়েছিল।

এই দুর্ঘটনায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

টাইটানিক যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যাচ্ছিল।

আরো পড়তে পারেন:

শতাধিক বছর ধরে পানির নিচে পড়ে থাকার পরেও টাইটানিকের সামনের অংশ দেখলেই চেনা যায়

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

শতাধিক বছর ধরে পানির নিচে পড়ে থাকার পরেও টাইটানিকের সামনের অংশ দেখলেই চেনা যায়

'অনেক প্রশ্ন'

"জাহাজটির বিষয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আছে, মৌলিক কিছু প্রশ্ন - যেসবের উত্তর জানা প্রয়োজন," বলেন টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পার্কস স্টিফেনসন।

তিনি বলেন, "টাইটানিকের বিষয়ে জল্পনা কল্পনার ওপর ভিত্তি করে কোনো গবেষণা নয়, বরং তথ্যপ্রমাণ-ভিত্তিক গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই মডেল বড় ধরনের প্রথম কোনো পদক্ষেপ।"

সমুদ্রের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে। এর পর থেকে জাহাজটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে।

কিন্তু এটি এতো বিশাল ও সমুদ্রের গভীরে এতো অন্ধকার যে ক্যামেরা দিয়ে এতদিন এর যেসব ছবি তোলা হয়েছে সেগুলোর সবই ছিল এই ক্ষয়িষ্ণু জাহাজের কিছু অংশের ছবি বা স্ন্যাপশট। কিন্তু কখনোই ডুবে যাওয়া পুরো জাহাজের ছবি পাওয়া যায়নি।

এখন এই নতুন অনুসন্ধানে সমগ্র টাইটানিকের ছবি পাওয়া গেল।

সাত লক্ষাধিক ছবি দিয়ে এই থ্রিডি স্ক্যান তৈরি করা হয়েছে

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

সাত লক্ষাধিক ছবি দিয়ে এই থ্রিডি স্ক্যান তৈরি করা হয়েছে

জাহাজের ডেকে বিশাল এক গর্ত যেখানে সিঁড়িটি অবস্থিত ছিল

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

জাহাজের ডেকে বিশাল এক গর্ত যেখানে সিঁড়িটি অবস্থিত ছিল

সমুদ্রের তলায় যেভাবে পড়ে আছে

দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের তলায় জাহাজটি দুটো অংশে ভাগ হয়ে পড়ে আছে- জাহাজের অগ্রভাগ যেখান থেকে বাঁকা হতে শুরু করে সেই অংশ এবং জাহাজের পশ্চাদভাগ।

এই দুটো অংশের মধ্যে দূরত্ব ৮০০ মিটার (২,৬০০ ফুট)।

ভেঙে যাওয়া জাহাজটির আশেপাশে প্রচুর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।

২০২২ সালের গ্রীষ্মকালে ম্যাগেলান লিমিটেড নামের একটি ডিপ-সি ম্যাপিং কোম্পানি এবং আটলান্টিক প্রোডাকশন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান যারা এবিষয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছে তারা যৌথভাবে এসব ছবি তুলেছে।

নিমজ্জনযোগ্য একটি বিশেষ জাহাজে করে এক দল কর্মী এই জরিপ পরিচালনা করেছে যা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মিলিয়ে পুরো টাইটানিকে ছবি তুলতে তারা ২০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছে।

নিমজ্জিত জাহাজের প্রত্যেকটি কোণ থেকে তারা সাত লাখেরও বেশি ছবি তুলেছে যেগুলোর সাহায্যে পুরো টাইটানিকের একটি ত্রিমাত্রিক বা থ্রি ডি ছবি তৈরি করা হয়েছে।

এই অভিযানের পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যাগেলান লিমিটেডের গেরহার্ড সেফার্ট। তিনি বলছেন এখনও পর্যন্ত পানির নিচে ছবি তোলার যতো প্রকল্প তিনি পরিচালনা করেছেন তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।

জাহাজের পেছনের অংশ

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

জাহাজের পেছনের অংশ

সমুদ্রের তলায় পড়ে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ, পেছনের অংশ

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

সমুদ্রের তলায় পড়ে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ, পেছনের অংশ

"গভীরতা প্রায় ৪,০০০ মিটার। আমাদের সামনে ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে সেখানে পানির স্রোতও আছে। এবং আমাদের কোনো কিছু স্পর্শ করার অনুমতি ছিল না, যাতে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আরো ক্ষতি না হয়," বলেন তিনি।

"আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আপনাকে প্রত্যেক বর্গসেন্টিমিটারের ম্যাপিং করতে হবে, এমনকি জাহাজের যেসব অংশ আগ্রহ-উদ্দীপক নয় সেগুলোরও, যেমন যেখানে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সেখানকার মাটির ছবি। কারণ জাহাজের বিভিন্ন অংশকে জোড়া দেওয়ার জন্য এগুলোও ছবি প্রয়োজন।"

টাইটানিকের যা কিছু দেখা যাচ্ছে

এসব ছবিতে টাইটানিকের বিশালত্বের পাশাপাশি এই জাহাজের একটি প্রপেলারের সিরিয়াল নম্বরের মতো ছোটখাটো বিষয়ও ধরা পড়েছে।

জাহাজটির সম্মুখভাগে মরিচা ধরে ঢাকা পড়ে গেছে। তার পরেও শতাধিক বছর আগে ডুবে যাওয়া এই জাহাজটিকে চেনা যায়।

এর উপরেই রয়েছে জাহাজের ডেক যেখানে একটি গর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটা শূন্যতা দেখতে পাওয়া যায় যেখানে একসময় ছিল জাহাজের বিশাল সিঁড়ি।

আর জাহাজের পশ্চাদভাগে বিভিন্ন ধাতব পদার্থের জঞ্জাল। জাহাজের এই অংশটি সমুদ্রের তলদেশে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ধসে পড়ে।

জাহাজের পেছনের অংশ

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

ছবিতে টাইটানিকের খুঁটিনাটি জিনিসও দেখা যাচ্ছে

প্রপেলার

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

একটি প্রপেলারের সিরিয়াল নাম্বার

টাইটানিকের আশেপাশে বিভিন্ন জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এসবের মধ্যে রয়েছে জাহাজ থেকে খসে পড়া অলঙ্কৃত ধাতব বস্তু, মূর্তি এবং মুখ খোলা হয়নি এরকম শ্যাম্পেনের বোতল।

সেখানে ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও রয়েছে। ছবিতে দেখা যায় সমুদ্রের তলানির ওপর অসংখ্য জুতা পড়ে আছে।

পার্কস স্টিফেনসন, যিনি বহু বছর ধরে টাইটানিকের ওপর গবেষণা করছেন, তিনি বলছেন, এসব ছবি প্রথমবার দেখে তিনি "বিস্মিত" হয়েছিলেন।

"আপনি জাহাজের এমন ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাচ্ছেন যা কখনও দেখা সম্ভব হয়নি। এবং আপনি ডুবন্ত পুরো জাহাজটিকে দেখতে পাচ্ছেন। আশেপাশের পরিবেশসহ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি এটাকে দেখতে পাচ্ছেন। আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন এটাই এখন এই জাহাজের সত্যিকারের অবস্থা।"

তিনি বলেন এসব ছবি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলে ১৯১২ সালের ওই ভয়াবহ রাত্রিতে টাইটানিকের ক্ষেত্রে আসলেই কী ঘটেছিল সেবিষয়ে নতুন কিছু ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

টাইটানিকের সামনের অংশ

ছবির উৎস, Atlantic Productions/Magellan

ছবির ক্যাপশান,

আশা করা হচ্ছে এসব ছবি থেকে টাইটানিক কিভাবে ডুবে গিয়েছিল সেবিষয়ে নতুন তথ্য পাওয়া যাবে

"আইসবার্গের সঙ্গে কেমন করে সংঘর্ষ হয়েছিল সেবিষয়ে আসলেই আমাদের ধারণা নেই। আমরা এও জানি না, সিনেমাতে যেমন দেখানো হয়েছে সেরকম করে জাহাজের সামনের একপাশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল কি না," বলেন তিনি।

তিনি বলেন জাহাজের পেছনের অংশ গবেষণা করলে টাইটানিক কিভাবে সমুদ্রের তলদেশে আঘাত হেনেছিল সেবিষয়েও ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজের ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। পানিতে থাকা অণুজীব বা জীবাণু ক্রমশই এটিকে খেয়ে ফেলছে। এছাড়াও এর বিভিন্ন অংশ ক্রমশই আলাদা হয়ে খসে পড়ছে।

সমুদ্রে এরকম একটি দুর্ঘটনার কারণ বুঝতে সময় যে ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে ইতিহাসবিদরা এবিষয়েও সচেতন।

কিন্তু এখন যেসব ছবি পাওয়া গেল, সেখান থেকে জাহাজের খুঁটিনাটি বিষয়ও বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন।

আশা করা হচ্ছে যে এখন হয়তো টাইটানিকের আরো অনেক গোপন বিষয় বের হয়ে আসবে।

আপনার ডিভাইস মিডিয়া প্লেব্যাক সমর্থন করে না

ভিডিওর ক্যাপশান,

সাগরের তলায় টাইটেনিকের অক্ষত ধ্বংসাবশেষ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews