চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ও কয়েকটি যানবাহনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন চালকের সিগন্যাল না মানা এবং নিয়ম ভেঙে সেতুতে ওঠার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এক জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এই মর্মান্তিক ঘটনা রেল নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সোয়া ১০টার দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কালুরঘাট সেতু এলাকায়। ওই সময় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর ওপর থাকা কিছু যানবাহনকে ধাক্কা দেয়। সেতুর ওপর একটি সিএনজি অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যানজট তৈরি হওয়ায় গাড়িগুলো সেতু থেকে নামতে পারেনি। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনকে ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে থেমে লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে উঠতে হয়, কিন্তু চালক সেই নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান, যার ফলে ঘটে ভয়াবহ সংঘর্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রেল কর্মকর্তাদের মতে, সেতুর ওপরে একটি সিএনজি অটোরিকশা বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ায় অন্য যানবাহনও আটকে পড়ে। এই অবস্থায় কক্সবাজার থেকে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করে সেতুর দিকে ধেয়ে আসে। ট্রেনটি দ্রুতগতিতে ওঠার সময় সেতুর ওপর থাকা একটি অটোরিকশা, একটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে এসব গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে। রাত পৌনে ১১টার দিকে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয়। বোয়ালখালী থানা পুলিশ এবং রেলওয়ে পুলিশও অভিযানে অংশ নেয়।
গুমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার আজম উদ্দিন জানান, সেতুর ওপর গাড়ি নষ্ট হওয়ায় যানবাহন নামতে পারেনি। তিনি বলেন, “নিয়মমাফিক ট্রেন পূর্ব প্রান্তে থামবে, এরপর সংকেত পেয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু চালক না থেমে সোজা উঠে যান।” জালানিহাট স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন জানান, “রাত ১০টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি সেতুর কাছে পৌঁছায়। আমরা তখনই লাল সিগন্যাল দিই, গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সংকেত দেন। কিন্তু চালক সেটি অমান্য করেন।”
ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনরত গার্ড মো. মাহবুব বলেন, “আমি নিজে সেতুর মুখে গিয়ে লাল পতাকা নাড়িয়ে সংকেত দিই, তবুও চালক থামেননি।” রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কালুরঘাট সেতুটি ‘ডেড স্টপেজ’ হিসেবে চিহ্নিত, অর্থাৎ এখানে ট্রেনকে অবশ্যই থেমে ধীরে ধীরে উঠতে হয়। চালকের এই নিয়ম লঙ্ঘনের ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে।
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমিনুল ইসলাম জানান, “আমরা খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই এবং উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিই।” চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার শাকিলা সোলতানা জানান, “ট্রেনের সঙ্গে কয়েকটি গাড়ির সংঘর্ষে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”