ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির আবহে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র (ডিজি আইএসপিআর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক কঠোর বার্তায় বলেছেন—“পাকিস্তান কখনো ভারতের আধিপত্য মেনে নেবে না।” তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান একটি শান্তিপ্রিয় ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কখনো পিছপা হবে না। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগাঁও এলাকায় এক ভয়াবহ হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হন। ভারত তড়িঘড়ি করে এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও কোনো প্রমাণ তখনো উপস্থাপন করেনি। পাকিস্তান তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দেয়। তবে ভারত সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে। গত ৬ ও ৭ মে রাতে ভারতের চালানো বিমান হামলায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীর অঞ্চলে ৩০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পাকিস্তান এর পরপরই ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায় এবং বেশ কয়েকটি ড্রোন আটক করে। এরপর ৯ মে রাতে ভারত ফের হামলা চালালে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে পাল্টা সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয় এবং ১০ মে রাতে এক অঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। কিন্তু পাকিস্তান দাবি করছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রথমে ভারতই দিয়েছিল। যদিও তা সরাসরি পাকিস্তানকে বলা হয়েছিল কিনা, নাকি যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। আইএসপিআর প্রধান বলেন, “আমরাই প্রথম বলেছি, হ্যাঁ, আমরা চাই শান্তি। কিন্তু শান্তির অর্থ কখনো মাথা নত করা নয়।”

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “ভারত যুক্তরাষ্ট্র নয়, আর পাকিস্তান আফগানিস্তান নয়। ভারত ইসরায়েল নয়, আর পাকিস্তান ফিলিস্তিন নয়। আমাদের বাধা দেওয়া যাবে না, আমাদের ভয় দেখানো যাবে না।” এই বক্তব্য কেবল প্রতীকী নয়, বরং স্পষ্ট কূটনৈতিক বার্তা—পাকিস্তান নিজেদের দুর্বল, নির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে রাজি নয়। তিনি বলেন, “ভারত যত তাড়াতাড়ি এই বাস্তবতা মেনে নেবে, ততই উপমহাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”

চৌধুরী দাবি করেন, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও ঘৃণা ভারতের ঘরোয়া সমস্যা। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন দিন দিন বাড়ছে, যা থেকে চরমপন্থা জন্ম নিচ্ছে। ভারত সরকার এই অভ্যন্তরীণ অসন্তোষকে চাপা দিতে পাকিস্তানকে ‘বহিঃশত্রু’ বানাচ্ছে, যেন জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। তিনি বলেন, “ভারতের এই প্রবণতা শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিপজ্জনক।”

আইএসপিআর প্রধান জানান, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিল সুনির্দিষ্ট এবং শুধু মাত্র ভারতের সামরিক অবকাঠামোর ওপর সীমাবদ্ধ। কোনও বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়নি। “আমাদের জবাব ছিল যথাযথ, ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ,”—এই শব্দগুলো ব্যবহার করে তিনি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নীতির মানবিক ও কৌশলগত দিকটি তুলে ধরেন। তার মতে, পাকিস্তান কখনো আগ্রাসনপ্রবণ নয়, তবে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

পাকিস্তান অভিযোগ করছে, ভারত কোনো তদন্ত ছাড়াই বারবার দোষারোপের পথ নিচ্ছে। এমনকি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত প্রথমে দায় অস্বীকার করে পরে “তদন্ত চলছে” বলে জানায়। আইএসপিআর প্রধান প্রশ্ন তোলেন, “তদন্ত না করে কিভাবে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা যায়?” তিনি আহ্বান জানান, যদি সত্যিই প্রমাণ থাকে, তা যেন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দেওয়া হয়। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেয়।

চৌধুরী আরও দাবি করেন, পাকিস্তানে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে, তার নেপথ্যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র’ (RAW) সক্রিয়ভাবে যুক্ত। বিশেষ করে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন টিটিপি (তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান)-এর কার্যক্রমে ভারতের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সম্প্রতি ঝেলম থেকে একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার স্বীকারোক্তিতে ভারতের প্রশিক্ষণের বিষয় উঠে আসে। তথ্যসূত্র : দ্য ডন



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews