সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানসিক সমস্যায় জর্জরিত রোগী থাকলেও এর বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৩৫০ জন। এই হিসাবে প্রতি লাখে একজনও মানসিক চিকিৎসক নেই। হাতের কাছে না পাওয়ায় অধিকাংশ মানসিক রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। হাতুড়ে ডাক্তার অথবা ঝাড়-ফুঁকের শিকার হয়ে দুর্দশাগ্রস্ত হন অনেকে। অথচ বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি পাঁচজনে একজন এবং প্রতি আট শিশুর মধ্যে এক শিশু কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি খুবই খারাপ হলেও জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে নেই এ-সংক্রান্ত চিকিৎসক। এমনকি দেশের সব সরকারি হাসপাতালেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেই। মানসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দশম প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর আত্মহত্যাকারীদের অধিকাংশেরই থাকে মানসিক সমস্যা। এদের বেশির ভাগই অবসাদগ্রস্ততা ও বিষণœতা থেকে আত্মহত্যা করেন। সচেতন থাকলে এসব আত্মহত্যার অধিকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেশায় আসক্তদের ৫০-৬০ শতাংশই মানসিক সমস্যা থেকে ঘৃণ্য কাজটি করে থাকে। এর বাইরে সম্পর্কে টানাপড়েন, বিচ্ছেদ, বেকারত্ব, আর্থিক সমস্যা, চাকরি হারানো, জীবনে কোনো খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, বাবা-মা বা প্রিয় কারো মৃত্যু হলে কিংবা দূরে চলে গেলে, নিজে কিংবা প্রিয়জন দুর্ঘটনার শিকার হলে, বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হলে এবং প্রত্যাশিত কিছু না পাওয়া ব্যক্তিদের মানসিক রোগে ভোগার আশঙ্কা বেশি থাকে।

সম্প্রতি শিার্থীদের নিয়ে পরিচালিত আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ার পর ৯০ শতাংশের ওপর নেতিবাচক মানসিক প্রভাব পড়েছে। অথচ তাদের ৭৮ শতাংশই কোনো ধরনের মানসিক সেবা নেননি। মাত্র ২২ শতাংশ সেবা নিয়ে ভালো ফল পেয়েছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ২০১৮-১৯ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮.৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভোগেন। তাদের ৬.৭ শতাংশ বিষণœতা এবং ৪.৫ শতাংশ উদ্বেগজনিত রোগে ভোগেন। অথচ এদের ৯২ শতাংশের বেশি বিজ্ঞানসম্মত কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাননি বা নেননি। একই জরিপের ফল অনুযায়ী, ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগাক্রান্তের হার ১২.৬ ৬ শতাংশ, যাদের ৯৪.৫ শতাংশ কখনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পায়নি।

মানসিক রোগে চিকিৎসাবঞ্চিত থাকার পেছনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর স্বল্পতা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র-শয্যা-ওষুধসঙ্কট, বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যে নগণ্য বরাদ্দসহ বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি একটি বড় প্রভাবক হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব এবং কুসংস্কার।

আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে ২৪ শতাংশ শিার্থী জানিয়েছেন, মানসিক সেবা সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা নেই। সামাজিক ট্যাবু বা লজ্জার কারণ ভেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন ২৭ শতাংশ শিার্থী। সেবা কোথা থেকে নিতে পারবেন সেই বিষয়ে জানেন না বলে জানিয়েছেন ৩৬ শতাংশ শিার্থী। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সেবা গ্রহণ করেননি ২৩ শতাংশ শিার্থী।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা: তাইয়্যেবুর রহমান বলেন, দেশে মানসিক রোগীদের জন্য হাসপাতালে শয্যা রয়েছে এক হাজার ২১০টি। এর মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ৩০০, পাবনায় ৫০০ শয্যা, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শয্যা, সরকারি ৩৫টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয্যা রয়েছে মাত্র ১৫০টি। সিএমএইচে ২০ শয্যা ও ড্রাগ অ্যাডিকশনে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন) ২০০ শয্যা।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews