উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলার খাল-বিলে ফোটে বিভিন্ন রঙের ও প্রজাতির শাপলা। এর মধ্যে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে খাল-বিলে শাপলার ফুল ফোটা শুরু হয়। প্রায় চার মাস পর্যন্ত জেলার নিচু জমিতে পানির মাঝে এ দৃশ্য অব্যাহত থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় এই শাপলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। তবে একসময় শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখনো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাপলা খাদ্য উপকরণ হিসেবে দেশব্যাপী বেশ চাহিদা রয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাপলার চাষও হচ্ছে। অথচ অযত্ন-অবহেলায় বরগুনার খাল-বিল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে লাল শাপলা।

এলাকার বয়স্করা জানান, গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষ অভাবের সংসারে এক সময় শাপলা খেতো। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙের শাপলা ওষুধিগুণে সমৃদ্ধ বলে পরিচিতি রয়েছে। ছোটদের কাছে শাপলা ফুল একটি প্রিয় খেলনা। বরগুনাসহ উপকূলীয় গ্রামাঞ্চলের মাঠ, ডোবা-নালা ও খাল-পুকুরগুলো বৈশাখ মাসে পানিতে ভরে যেতে শুরু করে। এরপর তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে এসব জলাশয় এক সময় ভরে যেত সবুজ পাতা ও লাল শাপলায়। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য উপভোগ করতো সব বয়সের মানুষ। শিশুরা এ ফুল নিয়ে খেলনায় মেতে উঠতো। কিন্তু এখন তা বিরল।

বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুধীর মন্ডল বলেন, বাংলা বর্ষের হিসাবে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন- এই চার মাসে এলাকার জলাশয়ে শাপলা ফুল ফুটে। আগের মতো এখন লাল শাপলা ফুল খুব একটা দেখা যায় না।

তিনি বলেন, বর্ষার শুরুতে শাপলার জন্ম হলেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদমাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরঙের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এমন দৃশ্য চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না।

স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এ এলাকার গ্রামের লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে ও বিক্রি করে। উপজেলার বিবিচিনি, বাসন্ডা, কেওড়াবুনিয়া, দেশান্তরকাঠী, ফুলতলা, গড়িয়াবুনিয়া, রানীপুর, জলিসা, ছোট মোকামিয়া,
চালিতাবুনিয়া, চরখালী, মাসুয়াখালী, বদনীখালী, মায়ার হাট, চাঁন্দখালীসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন বর্ষা মৌসুমে বড় বড় নৌকায় করে শাপলা বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। এ শাপলা শহুরে জীবনেও খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

সময়ের পরিবর্তনে মানুষের প্রয়োজনে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে। তাছাড়া জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদের কারণে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাটের কারণে এ উপজেলা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা।

এ বিষয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, সাধারণত শাপলা সাদা, হলুদ ও লাল তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙের শাপলা ওষুধি কাজে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।

পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুজন মালী বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, অ্যাশ ৮.৭ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি- প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ০.৫২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.৩২, ড্রাই মেটার ৮.৪, ক্রুড আমিষ ১৬.৮, ক্রুড ফ্যাট ২.৮ ক্রুড ফাইবার ৬২.৩, নাইট্রোজেন ৩৫.৪, সোডিয়াম ১.১৯, পটাশিয়াম ২.২৩ ভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন মজুমদার জানান, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাপলা সবজি হিসেবে খেতে গ্রামের মানুষের বদ্ধজলাশয়ে চাষ করা দরকার।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews