যখন আমরা নিচের ক্লাসে পড়তাম। পরীক্ষায় কখনো ৯৯ কিংবা কখনো ১০০ পেতাম। তখন কোনো কিছু অল্প পড়লে অনেকদিন ধরে মনে থাকত। আর অল্প পড়লেই পড়া হয়ে যেত। কিন্তু যত বড় হচ্ছি ততই কেমন যেন পড়াশোনার প্রতি উদাসীন মনোভাব তৈরি হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে নিজের ঐ ব্রেনটাকে আর ধরে রাখতে পারিনি—তাই ধৈর্য নিয়ে পড়তে পারি না, পড়লেও তা খুব অল্প সময়ে ভুলে যাই। সারা দিন মেজাজটা খিটখিটে থাকে, বিষণ্নতা ঘিরে রাখে, সবকিছুতে তাড়াহুড়ো করি, শান্তভাবে কোনো কিছুতে স্থির থাকতে পারি না। আচ্ছা এগুলো কি স্বাভাবিক? সবার সঙ্গে ঘটে? নাকি শুধু আমার সঙ্গেই হয়?

এ সমস্যা নিরসনের জন্য একটি টার্গেট রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিরোধ ও চিকিত্সার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ থেকে অকালমৃত্যুর হার এক তৃতীয়াংশ হ্রাস করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রচার করাই হচ্ছে এর মূল লক্ষ্য। অথচ বাজেটে গড়ে মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ মানসিক স্বাস্থ্যসেবায়। অন্যদিকে এ স্বাস্থ্য সমপর্কে জ্ঞানের স্বল্পতা, সঠিক পরিচর্যার অভাব, কুসংস্কার ও মিথ প্রচলিত যে বতর্মান সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন তা আদৌ অনেকে জানেই না। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ চিন্তাধারা, ভাব, আবেগ ও বুদ্ধির সমন্বয়ে গঠিত স্বাস্থ্য। শরীর খারাপ হলে যেমন চিকিত্সার প্রয়োজন হয় তেমনি প্রয়োজন মনের সেবা বা মনের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্র প্রেশারে আমাদের মন থাকে আচ্ছন্ন, বিষণ্ন, হতাশ, হীনম্মন্য। এসব প্রভাবে মূলত আমরা সেই আগের ‘আমরা’ হয়ে উঠতে পারি না। সকলে এমনভাবে নিজেদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত যে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ভুলে যায়, ভুলে যায় নিজেকে আনন্দে আর খুশি রাখতে। কেবল এক ক্লাসের পর আরেক ক্লাসে উঠব, এক্সাম দেব, পাশ করব, ব্যাস! ডিগ্রি নিয়ে শেষ করব। কিন্তু  দিনশেষে মনে হয় ‘আই অ্যাম গুড ফর নাথিং’—কেবল দৌড়াচ্ছি। অথচ শৈশবে আমরা এমন ছিলাম না, অল্পে সন্তুষ্ট ছিলাম। অল্প অল্প প্রাপ্তিতেই আমরা যত আনন্দ করতে পারি বর্তমানে তা পারি না। কারণ আমাদের আনন্দের উত্স কমে যাচ্ছে, একইসঙ্গে একে অন্যের সঙ্গে রেষারেষি বা কম্পিটিশনে আমাদের লিপ্ত করে দিচ্ছে যে নিজের জীবনের আসল উদ্দেশ্যকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। এই ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া জরুরি।

নিজেকেই বের করতে হবে কী কী কারণে আমি বিষণ্ন, কীসের জন্য দৌড়াচ্ছি, ইনফেরিওরটি কমপ্লেক্সে কেন ভুগছি, খিটখিটে কেন হচ্ছি এবং সেই কারণগুলোকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া বা দেওয়ার চেষ্টা করলেই সুস্থতার স্বাভাবিক ধারা বজায় থাকবে। এছাড়াও আরেকটি ব্যাপারে খেয়াল করতে হবে, অন্যের তুলনায় ভালো হওয়ার চেষ্টা করার চেয়ে নিজের তুলনায় ভালো হতে চেষ্টা করাটা সহজ। যে কাজটা করি, যে খাবারটা খাই, যে জীবনযাপন করি তার ওপর আমার কন্ট্রোল সবচেয়ে বেশি। পড়াশোনা বা কাজের জন্য ‘এর’ তুলনা ‘ওর’ তুলনা  শোনাতে পারে তাই বলে নিজেকে ‘আই অ্যাম বেস্ট’ বানাতে ব্রেকহীন ছুটতে হবে এমন কোনো আইন নেই। তাই নিজেকে ম্যানিপুলেটিভ মানুষ হিসেবে নয় বরং বুদ্ধিদীপ্ত হিসেবে প্রেজেন্ট করি। তাহলে অন্যজন কীভাবে কী করছে তার তোয়াক্কা করা কিংবা নিজেকে সেভাবে কন্ট্রোল করার ইচ্ছা নিমিষেই পালাবে। তাই নিজের জীবনের কন্ট্রোল নিজের হাতে রাখা। নতুন বছর আসছে, নতুন শ্রেণিতে উঠব কিংবা নতুন কর্মস্থলে যাব। তাই এখন থেকেই তিন মাস, ছয় মাস, নয় মাসের পড়াশোনা বা কাজের পাশাপাশি নিজেকে সুস্থ রাখতে সুন্দর প্ল্যান করতে হবে। ব্রেনকে দোষারোপ করা ছাড়লে আগামী দিনগুলো হবে সুন্দর।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews