থাইল্যান্ড প্রাথমিক বিচারে গণতান্ত্রিক বলে মনে হয়। কিন্তু আদতে, দেশটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং রাজপরিবারের সমন্বয়ে গঠিত একটি অনির্বাচিত ক্ষমতাধর জোটের ওপর নির্ভরশীল। ১৯৩২ সালে রাজতন্ত্রের নিরঙ্কুশ অবসানের পর থেকে থাইল্যান্ড এক ডজনেরও বেশি অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য আন্দোলন এবং রাজতন্ত্র-পুরোনো ধারার রক্ষীদের অঘোষিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষমতার এই ক্রমাগত দ্বন্দ্ব কয়েক দশক ধরে দেশটিতে অস্থিতিশীলতার একটি চক্র তৈরি করেছে, যা একের পর এক থাই প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে অপসারণ করেছে।
শুক্রবার পায়তংতার্ন সিনাওয়াত্রা সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক অপসারণকৃত সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী। একটি ফোনালাপে দেশের প্রতি দায়িত্বহীনতার জেরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস-ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের থাইল্যান্ড স্টাডিজ প্রোগ্রামের অতিথি ফেলো ন্যাপন জাতুস্রিপিতকের মতে, ‘সাংবিধানিক আদালত এমন রায় প্রদানের প্রবণতা দেখিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সাথে ব্যাপকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল তৈরি করে।’
ন্যাপন বলেন, ‘বর্তমান বিচারক এবং অতীতের বেশির ভাগ বিচারক সামরিক নেতৃত্বাধীন, রক্ষণশীল সরকারের অধীনে নিযুক্ত হয়েছেন বা তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর অর্থ হলো আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পক্ষে থাকার প্রবণতা ইতোমধ্যেই এর ডিএনএ-তে রয়ে গেছে।’
পায়তংতার্ন ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে, তার বাবা থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা দেশের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে শুরু করেন। থাকসিন ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ কীভাবে মোকাবিলা করবেন এবং মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের মতো আঞ্চলিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করেন।
অবশেষে তিনি পুরোনো রক্ষীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হন, যা সিনাওয়াত্রা বংশের ওপর আঘাতের মাধ্যমে শেষ হয়। থাকসিনের সাথে যুক্ত পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাই সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক অপসারিত হন পায়তংতার্ন। ৭৬ বছর বয়সী থাকসিন গত সপ্তাহে রাজকীয়-মানহানির মামলায় খালাস পেলেও, থাইল্যান্ডে ফিরে আসার সাথে সম্পর্কিত মামলায় এখনো তার জেলের সাজা কাটতে হতে পারে।
গত বছর, ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির উত্তরসূরী এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিজয়ী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে থাইল্যান্ডের কঠোর রাজকীয় মানহানি আইন সংশোধনের প্রচারণার জন্য অবলুপ্ত করা হয়। দেশটির রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠান মুভ ফরোয়ার্ডকে রাজতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছিল, কারণ দলটি দেশের কঠোর রাজকীয়-মানহানি আইনকে নমনীয় করতে চেয়েছিল, যা নিয়মিতভাবে ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্যাঙ্ককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থিতিনান পংসুধিরাক বলেন, ‘এই দেশে, আপনি ছয়জন লোক দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে পারেন।’