আফগানিস্তানের প্রভাবশালী যোদ্ধা ও চিরশত্রু আব্দুল রশিদ দোস্তামের বিলাসবহুল অট্টালিকা দখল করেছে তালেবান। কাবুলের প্রতিবেশী শহর শেরপুরে চাকচিক্যময় এই প্রসাদে তালেবান সদস্যদের নিয়ে একটি ফিচার নিউজ প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।

আব্দুল রশিদ দোস্তাম প্রবাল তালেবানবিরোধী হিসেবে পরিচিত। আফগানিস্তানের সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধবাজ নেতা (ওয়ারলর্ড) হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ২০০১ সালে তার বিরুদ্ধে ২ হাজার তালেবান সদস্যকে ড্রামে ভরে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সাবেক কমিউনিস্ট এই নেতা ২০১৯ সালে তালেবানের এক হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও হামলায় তার একজন দেহরক্ষী নিহত হন। সম্প্রতি তালেবান আফগানিস্তান দখল করলে তিনি তাজিকিস্তান পালিয়ে যান।

এএফপির বরাতে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রশিদ দোস্তামের ঐশ্বর্যপূর্ণ প্রাসাদ এখন তালেবান দখলে। আফগানিস্তানের সাবেক এই শাসক কেমন জীবনযাপন করতেন বাড়িটির মাধ্যমে তালেবান সদস্যরা সেই আভাস পাচ্ছেন। তালেবান বলছে, বছরের পর বছর দুর্নীতির ফল এই বিলাসবহুল বাড়ি।

মোটা আপেল সবুজ কার্পেটে মোড়ানো বিশাল ভবনের ভেতরের একটি সোফায় ঘুমাচ্ছিলেন তরুণ একজন তালেবান সদস্য। পাশেই বিশ্রাম নিচ্ছিল তার কালাশনিকভ রাইফেলও। এই তালেবান সদস্য যেখানে ঘুমাচ্ছিলেন তার পাশে প্রকাণ্ড সাতটি অ্যাকুরিয়ামের একটিতে বিদেশি মাছ বুঁদবুঁদ শব্দ করছিল।

তালেবান সদস্যরা এই প্রাসাদে সংগঠনটির অন্যতম শক্তিশালী কমান্ডার সালাউদ্দিন আয়ুবির নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনের জন্য রয়েছেন। আফগানিস্তানের চারটি প্রদেশের সামরিক কমান্ডার সালাউদ্দিন আয়ুবি গত ১৫ আগস্ট ১৫০ জন যোদ্ধা নিয়ে এই বাসায় ওঠেন।

বিলাসবহুল এই অট্টালিকা পরিদর্শন গিয়ে এএফপি নিউজ যা দেখেছে অধিকাংশ আফগান নাগরিকের কাছে তা অকল্পনীয় হবে।

প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে গুহা আকৃতি হলরুমের অসংখ্য কাচের ঝাড়বাতি, বড় নরম তুলতুলে সোফা, সজ্জিত লাউঞ্জ, ফিরোজা রঙের টাইলসে আবৃত সুইমিং পুল। এছাড়া রয়েছে গরম পানির ঝর্ণার গোসলখানা, তুর্কি স্টিম বাথ এবং সুসজ্জিত জিম।

প্রকাণ্ড এ বাড়িতে অবস্থান করা তালেবান সদস্যদের জন্য এটা যেন পৃথিবীর বাইরের কোনো অভিজ্ঞতা। কারণ, বছরের পর বছর তারা যুদ্ধের জন্য সুখ ত্যাগ করে সমতল কিংবা পাহাড়-পর্বত ও উপত্যকায় বসবাস করেছেন।

তবে বাড়ির বর্তমান প্রধান তালেবান কমান্ডার স্পষ্ট করে বলেন, তারা এই রকম বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন না।

সালাউদ্দিন আয়ুবী বলেন, ইসলাম আমাদের বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে বলে না। মৃত্যুর পর জান্নাতে বিলাসবহুল জীবন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আব্দুর রশিদ ছিলেন সাবেক প্যারাট্রুপার, ১৯৮০ এর দশকে আফগানকমিউনিস্ট সরকারের প্রধান কমান্ডার, সমরবিদ এবং আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। চার দশকের বেশি সময় দেশের দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে তিনি ঝানু রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন।

যুদ্ধবাজ নেতা আব্দুলরশিদ দোস্তাম দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক হন। তালেবান তাকে ঘৃণা করার পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

২০০১ সালে মরুভূমির মধ্যে ড্রামে ভরে তিনি ২ হাজার তালেবান সদস্যকে অন্য জায়গায় পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু আলো-বাতাসহীন কনটেইনারে প্রচণ্ড সূর্যের তাপে ওই তালেবান সদস্যরা দম বন্ধ হয়ে মারা যান।

তবে আব্দুল রশিদ দোস্তামের বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান কমান্ডার সালাউদ্দিন আয়ুবি তার ওপর প্রতিশোধ নেবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, আমাদের মতো নির্যাতিত হয়েছে এমন অন্য কেউযদি এই বাড়িতে আসতো, তাহলে আপনি বাড়ির চেয়ার-টেলিব দেখতে পেতেন না। তারা সব ধ্বংস করে ফেলত।

আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকদল তালেবান ভবিষ্যতে অবৈধ অর্থে এমন বিলাসবহুল কিছু করার অনুমতি দেবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তালেবান কমান্ডার সালাউদ্দিন আয়ুবি বলেন, আমরা সব সময় দরিদ্র মানুষের পাশে থাকব।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews