প্রথমবারের মত মুল একাদশে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেছে চেলসির ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোয়াও পেদ্রো। সবেমাত্র চেলসিতে যোগ দেয়া এই ফরোয়ার্ডের জোড়া গোলেই ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে অলব্লুজরা। মঙ্গলবার নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বারেরমত ফাইনালে জায়গা করে নিলো লন্ডনের ক্লাবটি। আর এর মধ্য দিয়ে থামল ক্লাব বিশ্বকাপে ফ্লুমিনেন্সের চমক জাগানো অভিযাত্রাও। ফ্লুমিনেন্সের বিদায়ের মধ্য দিয়ে টানা ১৩ বারের মতো ফিফা আয়োজিত ক্লাব পর্যায়ের টুর্নামেন্টের শিরোপা ইউরোপিয়ান ক্লাবের হাতে থাকা নিশ্চিত হলো। সর্বশেষ ২০১২ সালে চেলসিকে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল করিন্থিয়ান্স।
দল বদলে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ব্রাইটন থেকে চেলসিতে যোগ দেন জোয়াও পেদ্রো। সেদিনই তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় চেলসির ক্লাব বিশ্বকাপ দলে। দুই দিন পর স্বদেশি ক্লাব পালমেইরাসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেকও হয় তার। সেদিন ৩৬ মিনিট মাঠে থেকে বিশেষ কিছু করতে পারেননি। পালমেইরাসের বিপক্ষে অভিষেক হলেও ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই প্রথমবারের মতো একাদশে জায়গা পান ২৩ বছর বয়সী পেদ্রো। আর চেলসির হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই সুযোগ পেয়ে করেছেন বাজিমাত। শৈশবের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে করেছেন জোড়া গোল।
মেটলাইফ স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে চেলসি ও ফ্লুমিনেন্স। তবে আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে ১৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে চেলসিকে এগিয়ে দেন পেদ্রো। আক্রমণে ওঠার একপর্যায়ে বাঁ পাশে ফ্লুমিনেন্স বক্সের কাছাকাছি জায়গায় বল পান পেদ্রো। সেখান থেকেই দূরের পোস্ট তাক করে শট নেন। ফ্লুমিনেন্স গোলরক্ষক ফ্যাবিও ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি বলের। নিজের শৈশবের ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে অবশ্য উদযাপন করেননি পেদ্রো। শুরুতেই গোল হজম করে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ফ্লুমিনেন্স। ২৭ মিনিটে মার্ক কুকুরেইয়া গোললাইন থেকে বল ফিরিয়ে না দিলে তখনই সমতায় ফিরতে পারত ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি। ৩৬ মিনিটে হ্যান্ডবলের কারণে রেফারি প্রথমে ফ্লুমিনেন্সের পক্ষে পেনাল্টি দিলেও পরে ভিএআর সেটি বাতিল হয়।
বিরতির পরও একই ধারায় চলতে থাকে লড়াই। ৫৬ মিনিটে ফ্লুমিনেন্সের ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা একরকম বন্ধই করে দেন ক্লাবটির ঘরের ছেলে পেদ্রো। এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকে বল পেয়ে একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে দারুণ এক গোল করেন। এই গোলের পরও উদযাপন করেননি পেদ্রো। এরপর ফ্লুমিনেন্স চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ম্যাচ শেষে নিজের শৈশবের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সকে উদ্দেশ্য করে পেদ্রো বলেন, ‘ফ্লুমিনেন্স আমাকে সবকিছু দিয়েছে। গোটা বিশ্বের সামনে আমাকে তুলে ধরেছে তারা। আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি, কারণ তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। আমি খুবই কৃতজ্ঞ। তবে এটা তো ফুটবল, আমাকে পেশাদার হতে হবে। তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি, নিজের কাজটা আমাকে করতোই হতো। আজকে যেহেতু আমি শুরুর একাদশে ছিলাম, নিজেকে মেলে ধরার ও গোল করার বেশি সুযোগ আমার ছিল। দল জিতেছে, গোটা দল ভালো খেলেছে, সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
তৃতীয়বারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে চেলসি। এর আগে ২০১২ ও ২০২১ সালে ফাইনাল খেলেছে ইংলিশ ক্লাবটি। ২০১২ সালে রানার্সআপ হলেও ২০২১ সালে শিরোপা জিতেছিল তারা। চেলসি কোচ এনজো মারেসকা বলেন, ‘এটা দারুণ অর্জন। মৌসুমটা দারুণ গেল। লিগে সেরা ছিলাম, কনফারেন্স লিগ জিতলাম এবং এখন এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলাম। আমরা দারুণ আনন্দিত। আমরা এখন মৌসুমের শেষ ম্যাচে পৌঁছে গেছি। আশা করি টুর্নামেন্টটা জিততে পারব।’