সমাজে অশান্তির মূল কারণ অন্যকে তুচ্ছ করা, হেয় জ্ঞান করা। সে জন্য মানুষে মানুষে মারামারি হচ্ছে। অন্যকে তুচ্ছ ভাবা সম্পূর্ণভাবে কোরআনের আয়াত ও হাদিস লঙ্ঘন করা। মহান আল্লাহ বলেন- যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্নীল কার্য থেকে, ছোটখাটো অপরাধ বা গুনাহ করলেও তোমার রবের ক্ষমা অপরিসীম। আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে ভালো জানেন। যখন তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছিলেন মাটি থেকে এবং যখন তোমরা ভ্রূণরূপে মাতৃগর্ভে অবস্থান করো। অতএব, তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই ভালো জানেন, মুত্তাকি কে (আল কোরআন :৫৩:৩২)। এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মুত্তাকি কে এটা আল্লাহ ভালো জানেন। নবী রাসুল ও মুমিনরা নিজের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ভীত থাকতেন, যা ছিল বিনয় ও পরহেজগারিতা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের ওপর হস্তক্ষেপ করা হারাম। কোনো ব্যক্তির নিকৃষ্ট প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে (সুনান আবু দাউদ হাদিস # ৪৮৮২, মান :সহিহ)।

আপনি জানেন কি, কেয়ামতের দিন কে সবচেয়ে মর্যাদাবান এবং কে সবচেয়ে গরিব? আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত :রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা কি বলতে পারো অভাবী লোক কে? তাঁরা বললেন, আমাদের মাঝে যাঁর টাকাকড়ি ও ধনসম্পদ নেই, সে-ই তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে কেয়ামতের দিন (অনেক) সলাত, সাওম ও জাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে বা আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক আমাল থেকে দেওয়া হবে, অমুককে নেক আমাল থেকে দেওয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হক তার নেক আমাল থেকে পূরণ করা না যায়, সে ঋণের পরিবর্তে পাওনাদারের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করা হবে (সহিহ মুসলিম হাদিস # ৬৪৭৩ মান :সহিহ)। পক্ষান্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- কেয়ামত দিবসে মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহতায়ালা অশ্নীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন (সুনান তিরমিযি হাদিস # ২০০২, মান :সহিহ)।

আল্লাহ নিজে নম্র, তাই তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্রতার দরুন এমন কিছু দান করেন, যা কঠোরতার দরুন দান করেন না; আর অন্য কোনো কিছুর দরুনও তা দান করেন না (সূত্র সুনান আবু দাউদ, হাদিস # ৪৮০৭ মান :সহিহ)। নবী (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি নম্র আচরণ থেকে বঞ্চিত সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত (সহিহ মুসলিম # ৬৪৯২ মান :সহিহ)। নবী (সা.) আরও বলেছেন- তোমরা নম্র হও এবং কঠোর হয়ো না। শান্তি দান করো, বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না (সহিহ বোখারি, হাদিস # ৬১২৫ মান :সহিহ)।

কল্যাণ কামনাই ধর্ম : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- দ্বিন হলো কল্যাণ কামনা, উত্তম উপদেশ ও সুপরামর্শ। এভাবে তিনবার বললেন; সাহাবিগণ বললেন- হে আল্লাহর রাসুল! কার জন্য? তিনি বললেন- আল্লাহও তাঁর রাসুল, মুমিন বা মুসলিম নেতাগণ এবং সর্বসাধারণের জন্য (সূত্র :সুনান আবু দাউদ ৪৯৪৪, মান :সহিহ)। আর সৃষ্টি জীবে দয়া প্রদর্শনই প্রকৃত কল্যাণ : নবী (সা.) বলেন- দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন (সূত্র :সুনানে আবু দাউদ হাদিস # ৪৯৪১, মান :সহিহ)। নবী (সা.) আরও বলেন- যে ব্যক্তি দয়া করে না, সে দয়া পায় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে না, সে ক্ষমা পায় না। যে ব্যক্তি উদারতা প্রদর্শন করে না, সে উদারতা পায় না। যে ব্যক্তি অন্যকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয় না, সে রক্ষা পায় না (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস # ৩৭২, মান :হাসান)।

জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য এই নয় যে, বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়া ও অন্যকে তুচ্ছ করা :রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- যে লোক 'আলিমদের সঙ্গে তর্ক-বাহাস করা অথবা জাহিল মূর্খদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করার জন্য এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশে 'ইলম বা জ্ঞান' অর্জন করেছে, আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (জামে তিরমিযি হাদিস # ২৬৫৪, সুনান ইবনে মাজাহ হাদিস # ২৫২)।

অন্যজনের দোষ গোপন করার মধ্যে রয়েছে নিজের কল্যাণ : নবী (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি (অন্য কারোর) গোপনীয় দোষ দেখতে পেয়েও তা গোপন করল, সে যেন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জীবন দান করল (সূত্র :সুনান আবু দাউদ, হাদিস # ৪৮৯১)। মৃত ব্যক্তিদের বদনাম করা উচিত নয় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তোমাদের কোনো সঙ্গী মারা গেলে তাকে আল্লাহর ওপর ছেড়ে দাও এবং তার সম্পর্কে কটূক্তি করো না (সুনান আবু দাউদ ৪৮৯৯, মান :সহিহ)।

কারও পাপ দেখে পাপী বলে কটাক্ষ করা উচিত নয় :আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- বনি ইসরাইলের মধ্যে দুই ব্যক্তি ছিল। তাদের একজন পাপ কাজ করত এবং অন্যজন সর্বদা 'ইবাদতে লিপ্ত থাকত। যখনই 'ইবাদতে রত ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দেখত তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করতে বলত। একদিন সে তাকে পাপকাজে লিপ্ত দেখে বলল, তুমি এমন কাজ থেকে বিরত থাকো। সে বলল, আমাকে আমার রবের ওপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার ওপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর দু'জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত করা হলে তিনি 'ইবাদতগুজারি আবেদ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন- তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যে ক্ষমতা আছে তার ওপর কি তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? এবং পাপীকে বললেন- তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর আবেদ ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ বললেন- তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন- সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! সে এমন উক্তি করেছে, যার ফলে তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে গিয়েছে (সুনান আবু দাউদ হাদিস # ৪৯০১, মান :সহিহ)।

এই আলোচনা থেকে প্রতীয়মান, কোনো মানুষের অন্য মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়। যার যার আমল তার তার। কেউ কারও কর্মের জন্য দায়বদ্ধ নয়। মানুষ উপদেশ দিতে পারে কিন্তু হিসাবের দায়িত্ব আল্লাহর। সুতরাং প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করাই শ্রেয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews