গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোরাল দাবি ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ডাকসু আয়োজনের কাজ শুরু করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম হত্যার পর সৃষ্ট ঘোলাটে পরিবেশের কারণে সেটির অগ্রগতি থমকে পড়ে।

ওই সময় শিক্ষার্থীরা ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) বাসভবনের সামনে অনশনে বসেন। ২ জুনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের আশ্বাসে তখন দীর্ঘ ৮১ ঘণ্টা পর অনশন ভঙ্গ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ তিন শিক্ষার্থী।

তারিখ অনুযায়ী সোমবারের (২ জুনের) মধ্যে ডাকসুর নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে ঈদের আগে ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জনসংযোগ অধিদফতর থেকে পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, ডাকসুর প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করেছিল। এই টাইমলাইন অনুসারেই নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে এবং ঘোষিত টাইমলাইন অনুসারে চতুর্থ ধাপের কাজ পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত কার্যক্রমের ফলাফল নিয়ে পঞ্চম ধাপে ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে প্রথম পর্বের বৈঠক গত ১৩ মে সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলা হলে সেটি সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া ষষ্ঠ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশীজনদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে তিন শিক্ষককে নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

তবে এই অগ্রগতির বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ডাকসু নির্বাচন ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে তামাশা করছেন। ডাকসু শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। ডাকসু হলে ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির পথ সুগম হবে।

গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণকারী এই প্রশাসনের ডাকসু নির্বাচনে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, অদৃশ্য কোন শক্তির কারণে ডাকসু পিছিয়ে যাচ্ছে, প্রশাসনকে সেটা বলতে হবে। একটি মাত্র সংগঠনের জন্য নির্বাচন থেমে থাকতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদল শুরু থেকেই ডাকসু নির্বাচন বন্ধের পাঁয়তারা করছে। তারা বিভিন্নভাবে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে ডাকসু আটকাতে চাইছে। ছাত্রলীগের মতো ক্যাম্পাস আধিপত্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ডাকসু নির্বাচন হলে সেটা ব্যর্থ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌরভ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডাকসু গণতান্ত্রিক চর্চার কেন্দ্র হওয়ায় সচেতন, দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে, যা দুর্বল বা স্বৈরাচারী শাসকদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাস প্রমাণ করে যে অনেক বড় সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব এসেছিল ছাত্রদের হাত থেকেই।

তিনি আরো বলেন, ডাকসু চালু হলে পুরনো, সুবিধাভোগী ছাত্রনেতারা ও দলনির্ভর নেতৃত্বের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে তারা নিজের স্বার্থেই নির্বাচন চান না। সব মিলিয়ে, যারা ডাকসু চান না তারা মূলত চায় অন্যায় করেও টিকে থাকতে এবং ছাত্রসমাজকে দমন করে রাখতে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানান, ঈদের ছুটি ও সম্ভাব্য শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে ঈদের পরপরই তাদের সম্মতি গ্রহণপূর্বক সিন্ডিকেট সভায় প্রস্তাবিত নামগুলো অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সিন্ডিকেটে অনুমোদনের পর নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং নির্বাচন কার্যক্রমের পরবর্তী ধাপগুলো শুরু হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews