মহান আল্লাহ প্রতিটি কর্মের হিসাব নেওয়ার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে রেখেছেন; যাকে আল কোরআনে কেয়ামতের দিবস বা হিসাবের দিন নামে অভিহিত করা হয়েছে। সেদিন যাদের আমলনামার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন তাদের জন্য থাকবে চিরস্থায়ী শান্তির নীড় বিলাসবহুল জান্নাত। আর যাদের আমলনামার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ঠিকানা জাহান্নাম। আল্লাহ জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির বিবরণ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বিভিন্ন সুরা ও আয়াতে উল্লেখ করেছেন। কোরআনে বর্ণিত জাহান্নামের সংখ্যা সাত-

. সায়ির : ‘এভাবেই আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের মানুষকে সতর্ক করতে পারেন এবং সতর্ক করতে পারেন কেয়ামতের দিবস সম্পর্কে, যে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সেদিন একদল মানুষ যাবে জান্নাতে এবং একদল যাবে সায়ির তথা প্রজ্বলিত আগুনে।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৭)

. লাজা : ‘কখনই নয়, নিশ্চয় এটা লাজা তথা লেলিহান অগ্নি; যা চামড়া খসিয়ে দেবে। তা প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকে ডাকবে যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, সম্পদ জমা করেছিল এরপর সংরক্ষিত করে রেখেছিল।’ (সুরা মাআরিজ, আয়াত ১৫-১৮)

. সাকার : ‘অচিরেই আমি তাকে সাকারে নিক্ষেপ করব। আপনি কি জানেন সাকার কী? এটা কাউকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। শরীরের চামড়া ঝলসে দেবে। সাকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ১৯ জন (ফেরেশতা)।’ (সুরা মুদ্দাস্সির, আয়াত ২৬-৩০)

. জাহিম : ‘আর দর্শকদের জন্য জাহিম (জাহান্নাম) প্রকাশ করা হবে। অনন্তর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করেছে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, নিশ্চয় জাহিম হবে তার ঠিকানা।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত ৩৬-৩৯)

. হাবিয়া : ‘আর যার (নেকির) পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে হাবিয়া তথা গভীর গর্ত। আর আপনি কি জানেন হাবিয়া তথা গভীর গর্ত কী? তা অতি উত্তপ্ত অগ্নি।’ (সুরা কারিয়াহ, আয়াত ৮-১১)

. হুতামা : ‘কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় তথা পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন হুতামা তথা পিষ্টকারী কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন; যা হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় এটা তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে, লম্বা লম্বা স্তম্ভসমূহে।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত ৪-৯)

. জাহান্নাম : ‘নিশ্চয় জাহান্নাম প্রতীক্ষায় রয়েছে সীমালঙ্ঘনকারীদের আশ্রয়স্থলরূপে। তথায় তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোনো শীতল এবং পানীয়ধ আস্বাদন করবে না; তবে ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া। এটাই তাদের উপযুক্ত প্রতিফল।’ (সুরা নাবা, আয়াত ২১-২৬)

জাহান্নামিদের পোশাক : জাহান্নামিদের পোশাক হবে আলকাতরার ও আগুনের। এ ব্যাপারে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘সেদিন আপনি অপরাধীদের দেখবেন শিকলে কষে বাঁধা আবস্থায়। তাদের জামা হবে আলকাতরার ও আগুন তাদের মুখমণ্ডল আচ্ছন্ন করবে।’ (সুরা ইররাহিম, আয়াত ৪৯-৫০) ‘অতএব, যারা অবিশ্বাস করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক। তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। ফলে তাদের উদরস্থ সবকিছু এবং চামড়া গলিয়ে দেওয়া হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ি। যখনই তারা যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বেরোতে চাইবে, তখনই তাদের তার ভিতর ফিরিয়ে দেওয়া হবে (এবং বলা হবে) জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি আস্বাদন কর।’ (সুরা হজ, আয়াত ১৯-২২)

জাহান্নামিদের খাদ্য : আল্লাহ জাহান্নামিদের ক্ষুধার্ত রেখেই শাস্তি দিতে পারতেন, পক্ষান্তরে তাদের শাস্তির যন্ত্রণা আরও বৃদ্ধি করার জন্য জাক্কুম, জরি, ফুটন্ত পানি, পুঁজ ইত্যাদি নিকৃষ্ট আহারের ব্যবস্থা করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এই আতিথেয়তা উত্তম না জাক্কুম বৃক্ষ? আমি একে জালিমদের জন্য বানিয়েছি বিপৎস্বরূপ। বস্তুত এটি এমন গাছ, যা জাহান্নামের তলদেশ থেকে উদগত হয়। এর গুচ্ছ শয়তানের মাথার মতো। সুতরাং জালিমরা একে ভক্ষণ করবে এবং এর দ্বারা উদর পূর্ণ করবে। এর ওপর তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। এরপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে প্রজ্বলিত অগ্নির দিকে।’ (সুরা সাফ্ফাত, আয়াত ৬২-৬৮)

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews