উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিতে উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় বন্যার সম্ভাবনায় বিপাকে চরাঞ্চলের মানুষরা। কৃষি নির্ভর এ জেলার চরাঞ্চলের মানুষরা এ বছর অনেক পরিশ্রম করে ফসল চাষ করার পরেও পায়নি ন্যায্য দাম। তার পরে আবার পানির চাপে তিস্তার ৪৪টি গেইট খুলে দিয়েছে তিস্তা ব্যারেজ কতৃপক্ষ। অসময়ে বন্যার পদধ্বনীতে জেলার সাঘাটার চরাঞ্চলে চাষীদের কপালে চিন্তার ভাজ।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধার জেলার সাঘাটা উপজেলার কাউন চাষী মালেক উদ্দিন জানায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে কাউন চাষ করেছিলেন। মনে অনেক আশা ছিল কাউন বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা মেটাবে কিন্তু সেই স্বপ্ন যমুনার জলে বিলিন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ গেইট দিয়ে পানি প্রবেশ করায় যমুনা নদীর পানি বাড়ার ফলে এক রাতেই তালিয়ে গেছে কাউনের ক্ষেত। কোমর পানিতে ডুবে ডুবে কিছু কাউন সংগ্রহ করলেও পানি বৃদ্ধির পরিমাণ এতই যেন কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এখন জমিতে অথৈ পানি।
কাউন চাষী ময়নুল ইসলাম জানান, ‘আমি এ বছর কোনো ফসলেই লাভ করতে পারিনি। আমার ক্ষেতের ভুট্টার ফলন ভালো হলেও ভুট্টা পাকার আগেই সংগ্রহ করতে হয়েছে কারণ এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। কয়েক দিনের ব্যবধানে যমুনা নদী ভরে গেছে। ফলে আমার বাদাম, কাউন, পাটসহ বিভিন্ন ফসল তলে গেছে।’
একই চিত্র সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে। এই ইউনিয়ের হাজারো কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে।
কৃষক ফজলুর রহমান জানান, ‘আমার কাউন ও পাট ক্ষেত তলে গিয়ে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা যমুনা নদীর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। কখনো বন্যা কখনো খরা। সব মিলে আমাদের কষ্ট ছাড়া আর কিছু নেই কপালে।’
মঞ্জিলা বেগম জানান, ‘আমরা চরে ডুবে ডুবে কাউন তুলে নৌকায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। এক রাতেই চরের সব ফসল পানিতে ডুবেছে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।’
সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বাড়ার ফলে গত ১৫ মাসে হলদিয়া ইউনিয়নের ২০টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৫০ বিঘার বেশি পাট ক্ষেত পানির নিচে।
এদিন দুপুরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হাফিজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা কাউনিয়া (সুন্দরগঞ্জ) পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে, ঘাঘট নদীর পানি ৬৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে, করতোয়া নদীর পানি কাটাখালি পয়েন্টে ৭৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টা গাইবান্ধা জেলায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: খোরশেদ আলম নয়া দিগন্তকে জানান, গাইবান্ধার জেলার ১৫ দিনের বৃষ্টি ও নদীতে পানি বাড়ার ফলে আউস বীজতলা ১১ হেক্টর আউস ধানক্ষেত ৫ হেক্টর, শাক-সবজি ৫৬ হেক্টর, পাট ১৫ হেক্টর, মরিচ ১ হেক্টর, কাউন মোট ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হলেও ক্ষতির পরিমাণ জরিপ চলছে।