বরিশালের ৬ জেলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতা। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছেন তারা।





এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি, জাতীয় পার্টিও দিচ্ছে না প্রার্থী। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবরানুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও কম। ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন যারা পাচ্ছেন তারাই যে বসতে যাচ্ছেন জেলা চেয়ারম্যান পদে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত এই ৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে কিনা তাই নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে প্রশ্নের।

১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন দাখিল করতে হবে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের প্রার্থীদের। বিধি অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেন এ নির্বাচনে। বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ না থাকলেও নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি আর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই চলছে ক্ষমতাসীন দলে।

দলীয়ভাবেও নেওয়া হয়েছে প্রার্থী মনোনয়নের উদ্যোগ। এরইমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বরিশালের ৬ জেলার ৩৫ আওয়ামী লীগ নেতা। এরা সবাই চেয়ারম্যান পদে চাইছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

বরিশালে দলীয় মনোনয়নের আবেদন জমা দিয়েছেন ৫ জন। এরা হলেন-জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মাইদুল ইসলাম, সাবেক জেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা খান আলতাফ হোসেন ভুলু, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসাইন এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

পিরোজপুরে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ৫ জন। এরা হলেন-সাবেক জেলা চেয়ারম্যান বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, নেছারাবাদ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মনি, পিরোজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেকের স্ত্রী সালমা রহমান এবং স্বরূপকাঠী পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য শামসুন্নাহার বেগম।

দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ৫ জন আবেদন করলেও এখানকার বাস্তবতা ভিন্ন। জেলা পরিষদের ৭৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ৭০৪ জন এরইমধ্যে মহিউদ্দিন মহারাজকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রে। মহারাজের পক্ষে প্রকাশ্যে সভাও করেছেন তারা। মাত্র ৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ভোলা জেলা পরিষদে। এরা হলেন-বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মোমিন টুলু, দলের জাতীয় পরিষদ সদস্য হামিদুল হক বাহালুল এবং কৃষক লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম।

সর্বাধিক সংখ্যক নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইছেন পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায়। পটুয়াখালীতে যারা মনোনয়ন চাইছেন তারা হলেন বর্তমান প্রশাসক খলিলুর রহমান মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান, সাবেক উপজেলা ও পৌর চেয়ারম্যান সুলতান আহম্মেদ মৃধা, যুবলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ সৈয়দ বাবুল, অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ, তসলিম সিকদার এবং রেজাউল করিম আলমগীর মিয়া।

বরগুনার মনোনয়ন প্রার্থীরা হলেন-সাবেক জেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব মৃধা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু, অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন হিমু, অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেব মিয়া এবং মো. জামাল উদ্দিন বিশ্বাস।

ঝালকাঠীতে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন চেয়ারম্যান এবং প্রশাসক মিলিয়ে টানা ৪ বার দায়িত্বে থাকা বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিকে মোস্তাফিজুর রহমান এবং সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ফয়জুর রব আজাদ।

এবারের নির্বাচনে যে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না তা নিশ্চিত হয়েছে বহু আগেই। জাতীয় পার্টিও এই ৬ জেলায় দিচ্ছে না কোনো প্রার্থী। পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস জানান, ‘বরিশালের ৬ জেলায় দলের হয়ে কারও প্রার্থিতা এখনো নিশ্চিত নয়। যতদূর জানি, কেউ প্রার্থী হওয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেননি। অতএব ধরে নেওয়া যায় যে সেখানে আমরা কোনো প্রার্থী দিচ্ছি না।’

বিভিন্ন জেলায় যারা মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে এটাও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা তেমন কারোরই নেই। ঝালকাঠী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ‘নির্বাচন করব নৌকার। সেটা আমার হোক কিংবা অন্য কারও। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’

পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘দলীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দল। বিদ্রোহীদের কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্তও ঘোষিত হয়েছে। এরকম অবস্থায় কেউ-ই এখন আর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাইছেন না। ফলে এবারের নির্বাচনে কারও বিদ্রোহ করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন এমন কারও নাম-ও এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। শেষপর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে হয়তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়-ই জিতে যাবেন নৌকার প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণের দরকার নাও হতে পারে নির্বাচন কমিশনের। তবে প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই উঠেছে একটি দাবি। তা হলো বঞ্চিতদের দলীয় মনোনয়ন।

বিভিন্ন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, ‘এমন অনেক ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা আছেন যারা আজ পর্যন্ত দলের কাছ থেকে কিছুই পাননি। এর বিপরীতে এমন নেতার সংখ্যাও কম নয় যারা একাধিকবার এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান হয়েছেন। কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ, তাদেরকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক যারা কিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বারবার ঘুরেফিরে একই মুখ আর একই নেতৃত্বের পরিবর্তন হোক। মূল্যায়ন পাক দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণরা।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews