দুনিয়াখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থগুলোয় কারবালার নির্মম বর্ণনা পড়ে আঁতকে ওঠে পাষাণ হৃদয়ও। উমাইয়া শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফোরাতের তীরে আহলে বাইতের রক্তের স্রোত বইয়ে দেওয়ার ইতিহাস সংরক্ষণ করেছেন আমানতদার লেখকরা। এজিদের দোসররা ইমাম হোসাইনকে হত্যা করেছে কাফের ও বিদ্রোহী ফতোয়া দিয়ে। অথচ ওই সময় দুনিয়ার বুকে তাঁর মতো ওজনদার ইমান আর কারও ছিল না। তিনি কত গভীরভাবে ইসলাম বুঝেছেন কারবালার যাত্রার তারিখই তার বড় প্রমাণ। দিনটি ছিল ৮ জিলহজ। হজের দিন। দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে মুসলমানরা মক্কায় এসেছে লাব্বাইকের গানে গানে। আর ইমাম হোসাইন রওনা করেছেন কুফায় এজিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। ইমাম খুব ভালো করেই বুঝেছিলেন, রাষ্ট্র যেখানে অন্যায়-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে, সেখানে হজ-নামাজ-রোজা অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছুই নয়। তাই তিনি হজ ফেলে কারবালায় ছুটলেন। তিনি জানতেন শক্তিধর এজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে নিশ্চত মৃত্যু। যখন মুক্তির সব পথ বন্ধ তখন মৃত্যুই মুক্তির রূপে নেমে আসে। তাই মরণকেই হাসিমুখে বরণ করে নিলেন তিনি। ইমাম হোসাইনের শাহাদাত এজিদের নিষ্ঠুরতা কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীবাসীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। একইভাবে যারা এজিদকে নির্দোষ প্রমাণের জঘন্যতম চেষ্টা করবে তাদের স্বপ্নেরও কবর রচনা করে দিয়েছে রক্তরাঙা কারবালা। প্রিয় পাঠক! ইমাম হোসাইনের কাটা শিরের সঙ্গে এজিদের নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় চোখ বুলিয়ে নিই আসুন।

আল বিদায়া গ্রন্থে ইতিহাসবিদ ইবনে কাসির লিখেছেন, যখন হোসাইনের (রা.) কাটা মাথা এজিদের সামনে আনা হলো তখন এজিদ হাতের লাঠি দিয়ে ইমামের মাথা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছিল। একবার ডানে খোঁচা দেয় আরেকবার বাঁয়ে। এরপর ঠোঁটের কাছে লাঠি নিয়ে এলো। লাঠি দিয়ে ঠোঁট দুটি ফাঁক করল। সঙ্গে সঙ্গে ইমামের নুরানি দাঁতগুলো ঝলক দিয়ে উঠল। পাপিষ্ঠ এজিদ ইমামের দাঁতে মুখে এমনভাবে খোঁচাতে লাগল যে আহলে বাইত প্রেমিকরা সহ্য করতে পারলেন না। দরবারে থাকা আবু বোরজা (রা.) জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বললেন, রে বদখত এজিদ! তুই কোন ঠোঁটে আঘাত করছিস! আমি অসংখ্যবার দেখেছি এ ঠোঁটে আল্লাহর রসুল (সা.) চুমু খেতেন আর বলতেন, আমার আদরের কলিজার টুকরো নাতি! তোমরা দুজন বেহেশতি যুবকদের সর্দার। তোমাদের যারা হত্যা করবে তাদের জন্য জাহান্নামের নিকৃষ্ট আবাস।’

ইতিহাসবিদ ইবনে আসাকেরের মতে, আবু বোরজা দৃপ্তকণ্ঠে আরও বলেছেন, ‘নাপাক এজিদ! ভেবে দেখ, কেয়ামতের দিন তোর পাশে থাকবে পাপিষ্ঠ ইবনে জিয়াদ আর হোসাইনের পাশে থাকবে তাঁর নানা নবীয়ে কায়েনাত (সা.)। সেদিন তুই কীভাবে নবীজিকে মুখ দেখাবি।’

এমন সাহসী উচ্চারণ শোনার সঙ্গে সঙ্গে এজিদ রাগে লাল হয়ে যায়। এজিদ বলে, এ বুড়োকে এখনই আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও, নয় তো এর গর্দান উড়িয়ে দেব। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে এজিদের দরবার থেকে নিয়ে যাওয়া হলো।

ইবনে আসাকের লিখেছেন, ইমামের মাথা খোঁচাতে খোঁচাতে এজিদ কবিতা আবৃত্তি করছিল। কবিতার সারমর্ম ছিল এ রকম- ‘হে হোসাইন! তোমার নানা মুহাম্মদ (সা.) বদরে আমার পূর্বপুরুষ উতবাকে হত্যা করেছে। আজ আমি ফোরাতে তোমাকে হত্যা করে তার প্রতিশোধ নিলাম।’ ইবনে হাজার মাক্কি (রহ.) বলেন, এরপর এজিদ এমন কথা বলেছে যা সুস্পষ্ট কুফুরি। এজিদ বলেছে, ‘তোমার নানা আরবদের নিয়ে অনেক খেলেছেন। অথচ তাঁর কাছে কোনো বাণী আসেনি, কোনো ওহিও আসেনি। তোমাকে হত্যা করে প্রমাণ করেছি, আমি উতবার যোগ্য উত্তরসূরি।’

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেছেন, আহলে বাইতের সঙ্গে বেআদবি ও ইমাম হোসাইনের কাটা মাথা নিয়ে উল্লাসের কারণে এজিদ রেসালাতের সঙ্গে বেআদবি করেছে। আর রেসালাতের সঙ্গে বেআদবি করা সুস্পষ্ট কুফরি। এজিদের ব্যাপারে তিনি এত কঠোর ছিলেন যে, তিনি ফতোয়া দিয়েছেন বদখত এজিদকে যে কাফের মানতে চাইবে না সেও কাফের। এ ফতোয়া দেওয়ার কারণে তৎকালীন রাষ্ট্রশক্তি নির্যাতনের পর নির্যাতন করতে থাকে। তাঁকে বারবার বলা হয়- তুমি যে ফতোয়া দিয়েছ তা ফিরিয়ে নাও। ইমাম আহমদ বলেন, তোমাদের নির্যাতনের ফলে আমি মরে গেলেও ফতোয়া বদলাব না। পরে তিনি শাসকদের অত্যাচারে মারাই যান। হায়! আজ আহলে বাইতের পক্ষে কথা বলা মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমেই আসছে।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীর সাহেব, আউলিয়ানগর।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews