দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র দুই দিন। সারা দেশে এখন ভোটের আমেজ। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রচারণা। জাতীয় উৎসবে যেমন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একযোগে অংশ নেয়, তেমনই ভোটের মাঠেও যোগ দিয়েছে সব বয়সের, সব শ্রেণির, সব পেশার মানুষ। গ্রামে, বাজারে, রাস্তায় পাড়া-মহল্লায়, শহরের অলিগলি মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। গণসংযোগ থেকে শুরু করে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানো, মাইকিং এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তারা। পথসভা-উঠান বৈঠক করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। একই সঙ্গে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। 

প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা। স্কুল মাঠে, কলেজ প্রাঙ্গণে, মাদ্রাসা ময়দানে, খেলার মাঠে, ঈদগায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে চলছে জনসভা-বক্তৃতা। চায়ের দোকান, মসজিদ-মন্দিরের আঙিনা এখন রাজনৈতিক আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। ব্যানার-পোস্টার দুলছে রাস্তায় বাঁধা রশিতে। শুধু মাঠে ময়দানেই নয়, প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের রাজনীতি। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপসিল অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারণা আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। দেশের নিবন্ধিত মোট ৪২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দল সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। মোট প্রার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৫ জন। আসনপ্রতি ছয় জনের বেশি।

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দল অংশগ্রহণ করলেও মোট প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৬১ জন। এবার বিএনপিসহ তাদের জোট অংশগ্রহণ না করলেও প্রার্থী সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৫১২ জন এবং স্বতন্ত্র ৩৮২ জন প্রার্থী হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে প্রতিটি দল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকে প্রার্থী করেছেন। মোট ৯৪ জন নারী প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে ২৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এছাড়া নৌকা ২০, জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও এনপিপিতে ৯ জন করে, তৃণমূল বিএনপি ছয়, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও বিএনএফ তিন জন করে এবং গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টিতে দুই জন করে নারী প্রার্থী আছেন। এছাড়াও সমাজে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় থেকে দুই জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রার্থীরা প্রচারণা যুদ্ধে নামেন। শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সরকারের হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনার পর তা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বর্তমানে উৎসবে পরিণত হয়েছে ভোটের প্রচারণা। রাজধানীর সাতটি সংসদীয় আসন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সময় যত ঘনাচ্ছে প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগে ততটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন-রাত একাকার করে তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, নিজেদের পক্ষে ভোট চাইছেন। ভোটারদের দিয়ে আসছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ঢাকার সড়কে ও দেওয়ালে ঝুলছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি (জাপা)সহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনি পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। মাইকিং করে গলি-গলিতে ভোট চাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী ও তাদের লোকজন লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করছে। গতকাল দুপুরে রায়েরবাজার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের মকবুল হোসেন কলেজের পাশে, রহিম বেপারি ঘাট থেকে নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করেন ঢাকা-১৩ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় ভোটারদের দলবেঁধে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বানও জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ৭ জানুয়ারি ভোট প্রদানের মাধ্যমে পরিষ্কার জানিয়ে দেবেন আমরাই আমাদের সরকার গঠন করার মালিক। এ দেশের জনগণই সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট।

প্রচারণায় সমান ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও বাঁশি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি। দুই জনই ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গতকাল বেলা ১১টায় শান্তিনগর পীর সাহেবের গলি ইষ্টার্ন পিস থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি বিকাল ৩টায় এফবিসিসিআই মিলনায়তনে সভাপতি ও সদস্যবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকাল ৫টায় সিদ্ধেশ্বরী খেলার মাঠে নির্বাচনি সভায় বক্তব্য রাখেন নাছিম। রাত সাড়ে ৮টায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা (ডিডিএস) এ ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর নেতা ও অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ঢাকা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হারুনুর রশীদ মুন্না বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচনি গণসংযোগ করেন। ঢাকার মধ্যে একমাত্র ঢাকা-১৮ আসনটিই জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আসনটিতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটিতে আরো ৯ জন প্রার্থী থাকলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এস এম তোফাজ্জল হোসেনকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে শেরীফা কাদেরের। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন তোফাজ্জল। প্রচারণায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। ঢাকা-১৯ আসনে ভোটের লড়াই হবে দ্বিমুখী। এখানে ১০ জন প্রার্থী থাকলেও নৌকার প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান। তিনি দুই বারের সংসদ সদস্য, বর্তমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তবে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং (মুরাদ) ২০০৮ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। সাবেক ও বর্তমান এমপির মধ্যে তাই সবাই কঠিন লড়াই প্রত্যাশা করছে। ঢাকা-২০ আসনে এবারও নৌকার প্রার্থী ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালেও এমপি হয়েছিলেন।

তবে ২০১৪ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান ও সাবেক এই দুই প্রার্থীর মুখোমুখি লড়াই জমজমাট হবে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা মোহাদ্দেছ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাই এই আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধের আভাস থাকছে।

গানে গানে ভোটের প্রচার: প্রার্থীরা নিজেদের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন। এক্ষেত্রে গানে গানে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি লক্ষ করা গেছে। সে তুলনায় অন্য দলগুলোর বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাড়া মিলছে কম। সব মিলিয়ে ঘরের বাইরে কান পাতলেই এখন ভোটের আলোচনা ও ভোটের গান শোনা যায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সর্বত্র এখন ভোট নিয়ে মানুষের আলাপ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews